বছর পাঁচেকের পরিসংখ্যান আমলে নিলে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায় যে, গ্ল্যামারাস নায়িকার খোলস ছাড়িয়ে নানাবিধ চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন বিদ্যা সিনহা মিম। সেই চেষ্টা অনেকাংশে সফলও বটে। ‘সাপলুডু’, ‘পরাণ’ কিংবা ‘দামাল’র মতো ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে অভিনেতা মোস্তফা মনওয়ার বরাবরই চরিত্রনির্ভর কাজ করেন। সর্বশেষ ঈদের সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশোর বন্ধুর চরিত্রে নজর কেড়েছেন স্বমহিমায়।
এই দুজনকে একসঙ্গে দেখা যাবে নতুন একটি সিনেমায়। নাম ‘দিগন্তে আগুন’। এটি নির্মিত হচ্ছে লেখক, রাজনীতিবিদ শহীদজায়া পান্না কায়সারের জীবন ঘিরে। পরিচালনায় ওয়াহিদ তারেক। গত ১ আগস্ট শুরু হয়েছে শুটিং।
সপ্তাহ খানেক চিত্রধারনের পর ছবিটির একটি স্থির ঝলক সামনে এলো। যেখানে শহীদুল্লা কায়সার রূপে মোস্তফা মনওয়ার ও পান্না কায়সারের ভূমিকায় দেখা দিয়েছেন বিদ্যা সিনহা মিম। মোটা ফ্রেমের চশমা আর গোঁফে অভিনেতা যেমন সাবলীল, তেমনি সাদামাটা শাড়ি আর কালো টিপে মিমের মাঝেও বিরাজ করছে পান্না কায়সারের ছায়া। যা দেখে নেটিজেনরা দিচ্ছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলেছেন, ‘চেনাই যাচ্ছে না!’, কারও মন্তব্য ‘পান্না কায়সার তো দেখতে অবিকল বিদ্যা সিনহা মিমের মতো’, আবার কেউ অবাক হয়ে বললেন, ‘এক মুহূর্তের জন্য আমি চমকে গেছি!’
পান্না কায়সারের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’ বইটি অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে সিনেমাটি। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, শুটিং শুরু হওয়ার চার দিনের মাথায় (৪ আগস্ট) মারা যান পান্না কায়সার। এতে আক্ষেপ প্রকাশ করেন মিমসহ ছবির অন্যরা। তবে পরিকল্পনামাফিক ছবির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন তারা।
বিদ্যা বলেন, ‘গেল দুই মাস ধরে যাকে বই পড়ে, টেলিভিশনের বিভিন্ন ইন্টারভিউ থেকে এবং চিত্রনাট্য পড়ে জানার চেষ্টা করেছি, শুটিংও শুরু করেছি। অথচ তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগটা পেলাম না। এই আক্ষেপ নিয়েই সিনেমার বাকি অংশ শেষ করতে হবে। সব মিলিয়ে এই সিনেমাটা সত্যিই আমার জন্য বিশেষ কিছু।’
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়া এই সিনেমা নির্মিত হচ্ছে শহীদুল্লা কায়সার ও পান্না কায়সারের কন্যা শমী কায়সারের প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি প্রোডাকশনের ব্যানারে। যদিও সরকারি নিয়ম অনুসারে, অনুদান প্রাপ্তির নয় মাসের মধ্যে সিনেমার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। তবে চার বছর পর কেবল শুরু হলো ছবিটির শুটিং।
বলা দরকার, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে বিয়ে করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সার ও পান্না কায়সার। তবে সুখের সেই সংসার দীর্ঘ হয়নি। কারণ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী শহীদুল্লা কায়সারকে ধরে নিয়ে যায়। আর ফিরে আসেননি তিনি। এরপর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংগ্রামের জীবন শুরু হয় পান্না কায়সারের। শুরু করেন অধ্যাপনা ও লেখালেখি। সেই সংগ্রামের জীবন আর শহীদুল্লা কায়সারের অজানা সব অধ্যায় নিয়েই লিখেছেন আত্মজীবনী ‘মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে’।