সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সমাজের মেহনতি, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের পক্ষে তার কণ্ঠ গর্জে ওঠে। গান কিংবা রাজপথ, সবখানেই সায়ানের রয়েছে দৃপ্ত উপস্থিতি।
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পক্ষে রাজপথে ছিলেন এই সংগীতশিল্পী। এমনকি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এবার জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এবং জামায়াতকে বর্জনের ঘোষণা দিলেন তিনি। সেইসাথে সবাইকে অনুরোধ করেছেন, যেন তারা এই দলগুলো থেকে দূরে থাকেন।
২৮ মে দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টে সায়ান লিখেছেন, “জামাতের সাথে হাত মিলিয়ে, কোলাকুলি করে ‘ভোটের রাজনীতি’ করতে গিয়ে এই দেশে কিছু দিন আগেই একটা বড় দলের ত্রাহি-মধুসূদন দশা হয়েছিল। আওয়ামী এমন নতুন ধারাবাহিক, গুরুতর পাপকর্ম করেছে দেশের মানুষের বিপক্ষে যে, সেই দলের গুরু-পাপকে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রায়। নতুন দল এনসিপি’র সার্জিস, হাসনাতরা প্রথম থেকেই তাদের রাজনীতি পরিষ্কার করে দিয়েছে। ধন্যবাদ। সেই হিসেবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হলো। দিনশেষে ভোটেই তো দাঁড়াতে হবে আপনাদের। জামাতকে বুকের সাথে আগলে রেখে, রাজাকারের ‘বেকসুর খালাস’কে উদযাপন করে আপনারা আমাদের ভোট চান? বিবেকবান স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের? একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামাত চিনি না? আলবদর চিনি না? বীরাঙ্গনার ব্যথা বুঝি না? এই দেশের ছোট ছোট বাচ্চারাও, ইতিহাসবিদদের মতো দিন, তারিখের রেফারেন্স দিয়ে জামাতের জন্ম ইতিহাস বলতে পারবে না হয়তো। কিন্তু জামাত কি, তাদের আদর্শ কি, তারা এই দেশের মানুষকে নিয়ে কি করতে চায়, তা আজকে সকালে জন্ম নেয়া বাচ্চাটাও কালকে বিকালের মধ্যে শিখে যায়।”
এরপর তিনি লিখেন, “এনসিপি যে এই জায়গাটা ধরতে পারে নাই, তা তাদের বুদ্ধিমত্তার নির্দেশক। তারা নতুন দেশ গড়ার কথা বলে নিজেদের ভোটের জন্য জামাতকে বুকে টেনেছে বলে মনে হয়। আবার তাদের আরেকটি সঞ্চয় হলো ‘আওয়ামী-ঘৃণা’। আজকে দেশে অনেক অন্যায় ঘটছে। তাদের সেসবে হেলদোল নাই। কিন্তু জামাত আর আলবদরকে ভালোবাসায় তারা আগুয়ান। ধন্যবাদ এই স্বচ্ছতার জন্য।”
এরপর সায়ান আরও লিখেছেন, “আমি প্রতি মুহূর্তে নিজের রাজনীতিকে পরিবর্তন করার পক্ষে। আজকে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করি না, মাটির প্রশ্নে। সেই হিসাবে আমার রাজনৈতিক-ইমান খুব তরল এবং সেটাই আমি চাই। নাহিদরা যখন বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল গত জুলাইতে, ওদের জন্য ভালোবাসা ছিল, সমর্থন ছিল। সেদিন সেটাই ছিল আমার রাজনীতি। ওদের সেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো, সেটাকে সেই সময়ের সত্যিকারের দেশপ্রেম, আর মানুষ প্রেম, মাটি-প্রেম মনে হয়েছিল। তার জন্য আমি একটুও দুঃখিত হবো না কোনোদিন। আমার সেই দিনের সমর্থনের জন্য আমি কোনোদিন অনুতপ্ত হবো না। নেভার! কিন্তু গত কয়েক মাসের তাদের অনেক আচরণ, অনেক কিছু দেখতে দেখতে, আজকে সেই একই দলের ছেলেমেয়েরা যে আজহারের বেকসুর খালাসকে উদযাপন করলো, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন করলো (এমনকি লজ্জায় বা কৌশলে চুপ করে থাকলো না, প্রকাশ্যে সমর্থন করলো) আর নাদিরা ইয়াসমিনের অন্যায়ভাবে বদলির বিরুদ্ধে একটা কথাও বললো না, এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটাই আমার আপাতত রাজনীতি যে এরপর এই নতুন দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে থেকে বর্জন করলাম।”
একদম শেষে তিনি লিখেছেন, ‘এইটুকু করার কথা ভেবেই নিজের অশান্ত মনকে আমি খানিকটা শান্তি দিতে পারছি। আগামী নির্বাচনে আমি এনসিপি, জামায়াত- এই সমমনা দলগুলোকে ভোট নিজে তো দেবোই না, বরং মানুষকে অনুরোধ করবো, যেন তারা এই দলগুলো থেকে দূরে থাকেন। একজন একক ব্যক্তি হিসাবে এটাই আমার সাধ্য। আমি কখনোই এনসিপিকে সাপোর্ট করবো না।’