X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

বৈশ্বিক পদ্ধতিকেই দায়ী করলেন ড. আতিউর রহমান

বিদেশ ডেস্ক
২৩ জুন ২০১৬, ০০:১৬আপডেট : ২৩ জুন ২০১৬, ০০:২৩

ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বৈশ্বিক পদ্ধতিকেই দায়ী করেছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ওই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আমার  কোনও ভুল ছিল না। এটা বৈশ্বিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের ত্রুটি। এই হ্যাকিংয়ের জন্য তারাই দায়ী।  সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথা বলেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় আলোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনায় পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।  এর দীর্ঘদিন পর এ বিষয়ে নতুন করে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে  তিনি বলেন, হ্যাকারদের বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ‘পদ্ধতিগত ব্যর্থতা’।  সেখানে যে ভুল হয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশকে দোষারোপ করা উচিত নয়। এ জন্য বরং ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম দায়ী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যদি আপনি নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০০ ডলারও তুলতে চান, তাহলে আপনাকে অনেক প্রশ্ন করা হবে। কিন্তু লাখ লাখ ডলার চলে যাচ্ছে, আর ফেড  কোনও প্রশ্ন তোলেনি। এ কারণে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের গভর্নর বা অন্য কোনও কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে ডেকে আনা উচিত বলেও মনে করেন সাবেক এই গভর্নর। 

ড. আতিউর রহমান বলেন, আমি এক বছর আগেই ব্যাংকের সুরক্ষায় একটি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছিলাম।  কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের পর সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ভাড়া করা হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার গ্রাহকের নাম ভুল করায় শ্রীলঙ্কায় আটকে যায়, পরে তা ফেরত আনা হয়। বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ মনে করে, এ ঘটনায় নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের দায় রয়েছে। অন্যদিকে সুইফট ও নিউইয়র্ক ফেড একাধিকবার বলেছে যে, তাদের কোনও দায় নেই। দুর্বলতা বাংলাদেশ ব্যাংকের।

নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফেড নিউইয়র্ক ও বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফটেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভের অর্থ স্থানান্তরে সুইফটের বার্তা ব্যবহার করে যে ৩৫টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৩০টি আদেশ আটকে দেওয়া হয়েছিল। যদি ৩০টি আদেশ আটকানো সম্ভব হয়, তবে অন্য পাঁচটি আদেশ কেন আটকানো গেল না? তাই বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ ক্ষেত্রে ফেড নিউইয়র্ক তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনাটি প্রথম জানাজানি হয় ফেব্রুয়ারির শেষে। ফিলিপাইনের দৈনিক ইনকোয়ারারে এ নিয়ে অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে মার্চের শুরুতে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। এ ঘটনার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। দুজন ডেপুটি গভর্নরকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গত ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে।

ফিলিপাইনের তদন্ত সংস্থা এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দায়ী ছয় হ্যাকারকে চিহ্নিত করেছে। সেখানকার সংবাদপত্র ইনকোয়েরার জানিয়েছে, মাইকেল ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার, আলফ্রেড ভারগারা, এনরিকো ভাসকুইজ, উইলিয়ার সোগো এবং কিম অং তাদের দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা সাইবার ডাকাতির মাধ্যমে সরাতে সক্ষম হন।

তাদের মধ্যে তিনজন সন্দেহভাজন ক্রুজ, ভারগারা এবং ভাসকুইজ- প্রত্যেকেই ৫০০ ডলার জমা দিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ২০১৫ সালের ১৫ মে অ্যাকাউন্ট খোলেন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে আর কোনও লেনদেন হয়নি। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের কোড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতিয়ে নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। তবে এরমধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার তারা ব্যাংক থেকে তুলতে পারেন। 

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কোনও একটা সুফইট (অর্থ স্থানান্তরের সংকেতলিপি) এ প্রবেশ করতে একজন হ্যাকারের কেবল সেই হিসাবধারীর নাম-পাসওয়ার্ড জানলেই চলে না, তাকে ‘কিপটোগ্রাফিক কি’ (সংকেত উন্মোচনের কোড) সম্পর্কেও জানতে হবে। কারণ ‘ক্রিপটোগ্রাফিক কি’ ব্যবহার করেই ব্যাংক স্থানান্তরকারী সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।’

অর্থাৎ হিসাবধারী সত্যিই অর্থ স্থানান্তর করতে বলেছেন কিনা, তা বুঝতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে কাজ করে ক্রিপটোগ্রাফিক কি কিংবা সংকেত উন্মোচনের কোডগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ক্রিপটোগ্রাফিক কিগুলো সম্পর্কে ধারণা ছিল হ্যাকারদের।

এন্টি ভাইরাস ক্যাসপারস্কির গবেষণায় নিয়োজিত এক গবেষক জুয়ান গুয়েরিও রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংকের কর্মীরা ঠিক কিভাবে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অর্থ স্থানান্তর করেন, সেটা জানার পরই কেবল এই পাচার কাজ সম্পন্ন করা গেছে।

 সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স।

আরও পড়তে পারেন: ডিএনসিসি-ডিএসসিসিতে ১৬ ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হলেও নির্দেশনা নেই

/এমপি/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করলে হামাস ক্ষমতায় থেকে যাবে: নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করলে হামাস ক্ষমতায় থেকে যাবে: নেতানিয়াহু
ব্যাংক চলাকালীন এনবিআরকে অভিযান চালাতে হবে: হাইকোর্ট
ব্যাংক চলাকালীন এনবিআরকে অভিযান চালাতে হবে: হাইকোর্ট
যেভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল মোলায়েম হবে
যেভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল মোলায়েম হবে
জিএসটির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
জিএসটির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?