X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পশ্চিম আফ্রিকায় প্রভাব বাড়াতে তৎপর সৌদি-আমিরাত

বিদেশ ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৮আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৯
image

পশ্চিম আফ্রিকায় নিজেমতন প্রভাব বাড়াতে ফ্রান্সের নেত্বত্বাধীন একটি জোটের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে সৌদি আরব ও আমিরাত। জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ের জন্য একটি বাহিনী গঠনের প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে প্যারিসে একটি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের ওই দুই প্রভাবশালী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি জার্মানি ও ইতালির প্রতিনিধিরাও বুধবারের ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশগ্রহণকে পশ্চিম আফ্রিকায় ওই দুই আরব দেশের প্রভাব বিস্তারের চিহ্ন বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জি ফাইভ সাহেল জোটের সদস্য দেশ মালির সেনারা
মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজার, বুরকিনা ফাসো ও শাদ; আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের এই ৫টি দেশের  সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে জি ফাইভ সাহেল জোটটি গঠিত হয়। সাহেল অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং জঙ্গিদের আনাগোনার মধ্যেই গত অক্টোবরে এই জোটটি প্রতীকী সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই অঞ্চলে ৪০০০ সেনা মোতায়েনকারী দেশ ফ্রান্স আক্ষেপ করে বলেছে, জি ফাইভ বাহিনী যখন তহবিল সংগ্রহ এবং কর্মপোযোগী হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে তখন জঙ্গিরা পশ্চিম আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। জি ফাইভের সাহেলের সদস্য দেশগুলোর নেতারা এবং সৌদি ও আমিরাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাশাপাশি জার্মানি ও ইতালির প্রতিনিধিরাও বুধবারের ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।

মালির উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহ ঠেকাতে ২০১৩ সালে হস্তক্ষেপ করে ফরাসি বাহিনী। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জি ফাইভ বাহিনীর পূর্ণ বাস্তবায়নকে নিজের বাহিনীর জন্য বের হয়ে আসার দীর্ঘ মেয়াদী কৌশল বলে বিবেচনা করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ২০১৮ সালের মার্চ নাগাদ পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে ৫০০০ সদস্যের শক্তিশালী বাহিনী দেখতে পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি। সূত্রের দাবি, ‘সেনা সংখ্যা বাড়ানো, রাজনৈতিক উৎসাহ ও তহবিল বাড়ানোটাই মূল লক্ষ্য।’  

এক ফরাসি কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা কমেনি এবং এখানকার দেশগুলোর সেনাবাহিনী অনবরত পরাজিত হচ্ছে। অঞ্চলটিতে পুনঃনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সামরিক প্রচেষ্টা বাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান শুরু করতে হবে।

জি ফাইভ সাহেল বলছে, প্রথম বছরের অভিযানের জন্য তাদের ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতও মৌরিতানিয়ায় একটি ‘জি ফাইভ ওয়ার স্কুলে’ তহবিল যোগাচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতে ওয়ার স্কুলটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

প্যারিস এইট ইউনিভার্সিটির ভূ-রাজনীতিবিষয়ক গবেষক জালেল হারচাওই বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব দুই দেশই সাহেল অঞ্চলের প্রতি আগ্রহী। আলোচনার টেবিলে বসার জায়গা করে নেওয়া এবং নিজেদেরকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগী হিসেবে উপস্থাপন করা হলো তাদের কৌশলেরই অংশ। দুই দেশেরই আফ্রিকা নিয়ে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যতম শত্রু দেশ ইরানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকা এবং মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে সৌদি আরব। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও আলাদা একটি ইসলামী সামরিক জোট গঠন করছেন। এ জোটের সদস্য দেশগুলো একে অপরকে জঙ্গি দমনে সহায়তার অনুরোধ কিংবা প্রস্তাব দিতে পারবে। এসব সহায়তার মধ্যে রয়েছে-সামরিক সহায়তা, আর্থিক সহায়তা, যন্ত্রপাতি এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের সহায়তা।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ইরানে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই দেশটিকে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পরিসরে শক্ত প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে আসছে সৌদি আরব। সুন্নি মুসলিমপন্থী সৌদি আরবের আশঙ্কা, শিয়াপন্থী ইরান তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। ইরাকযুদ্ধ ও আরব বসন্তের সুযোগ নিয়ে বাড়াতে পারে অঞ্চলগত প্রভাব। বাগদাদ, দামেস্ক, সানা ও বৈরুতের ধারাবাহিকতায় তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের বাদবাকি দেশগুলোকে নিজেদের কব্জায় নিতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে সৌদি আরবের। এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার লড়াইয়ে নেমেছে তারা। দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের নামে আর ইরানঘনিষ্ঠ  ইয়েমেন-লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ তুলে তেহরানবিরোধী ছায়াযুদ্ধ শুরু করেছে সৌদি আরব। এইবার প্রভাব বিস্তারের সেই প্রচেষ্টা পশ্চিম আফ্রিকায়ও বিস্তৃত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
রাফাহ নিয়ে আইসিজের নির্দেশকে স্বাগত জানালো হামাস
ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চায় বাহরাইন
মাশহাদে রাইসিকে শেষ বিদায় জানালেন লাখো ইরানি
সর্বশেষ খবর
দিল্লির শিশু হাসপাতালে আগুন, সাত নবজাতকের মৃত্যু
দিল্লির শিশু হাসপাতালে আগুন, সাত নবজাতকের মৃত্যু
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
প্রতীক জটিলতায় স্থগিত হওয়া সেই ইউপিতে চলছে ভোটগ্রহণ
প্রতীক জটিলতায় স্থগিত হওয়া সেই ইউপিতে চলছে ভোটগ্রহণ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ