ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প ও সুনামিতে নিহত মানুষের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। দুর্যোগের সময়ে পালুতে অবস্থানরত ৬৯ বিদেশির ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা জানিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় দেড় শতাধিক আফটার শক অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুরুতর আহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি দ্বীপে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সেখানে কম্পনের পর ছোট্ট শহর পালুতে আছড়ে পড়ে প্রলয়ঙ্করী সুনামির ঢেউ। সুউচ্চ ঢেউ লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূলীয় এলাকা। শুক্রবারের কম্পন ও সুনামির পর শনিবার উপকূলে সন্ধান মিলেছে বহু মরদেহের। ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ৮৩২ জনের নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তরফে এর মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগরোহো জানিয়েছেন, এখনও অনেক মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি।
বিধ্বস্ত শহর পালুতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ভূমিকম্পের দ্বারা কোনও না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নুগরোহো জানিয়েছেন, দুর্যোগের সময় পালুতে ৭১ জন বিদেশি অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে ২ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদে নেওয়া হয়েছে। বাকীদের অবস্থা সম্পর্কে তারা অবগত নন।
ভূমিকম্প-সুনামির ধাক্কায় আহ্ত হয়েছে শত শত মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ৫৪০ জনের গুরুতর আহত হওয়ার তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, শত শত আহত মানুষকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। উপদ্রুত এলাকায় দেড় শতাধিক আফটার শকের কারণে হাসপাতাল ভবনের অভ্যন্তরে চিকিৎসা না দিয়ে তাদের খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিধ্বস্ত ভবনে চাপা পড়ে যারা আহত হয়েছে, হাসপাতাল ভবনের অভ্যন্তরে চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছে তারা।
রবিবার উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার তৎপরতাকে ত্বরান্বিত করতে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, মুহূর্মুহূ আফটার শক আর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যহত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় এক হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা জানিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে সুলাবেসি দ্বীপে ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর আগে অঞ্চলটিতে মাঝারি মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দ্বিতীয় কম্পনের পর শুরু হয় সুনামির ভয়াবহতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন চিৎকার করছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু স্থাপনা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুনামির আঘাতে ভবন ধস ও নৌযান ভাসিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান জানান, পালুতে সুনামি আছড়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়। এরপরই সুনামি আছড়ে পড়ে। তিনি বলেন, সুনামিটি ছিল দেড় থেকে দুই মিটারের। তা শেষ হয়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি এখনও বিশৃঙ্খল। মানুষজন রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। ভবন ধসে পড়েছে এবং নৌযান সাগরে ভেসে গেছে।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান। ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট দেশটির লম্বক দ্বীপে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের জেরে সুনামি আছড়ে পড়ে অন্তত ১৩টি দেশে। ওই সুনামিতে উপদ্রুত দেশগুলোতে দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই মৃতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ।