X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পবিরোধী ‘নারী মিছিল’-এ সরব মুসলিমরাও

বিদেশ ডেস্ক
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪৫আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৮
image

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শনিবার (১৯ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত ‘নারী পদযাত্রা’য় অংশ নিয়েছিলেন মুসলিম নারীরাও। হোয়াইট হাউস থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থান করেই ট্রাম্পবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে গেছেন তারা। মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য বন্ধ করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুসলিম নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে আরব, মুসলিম, আফ্রিকান আমেরিকানসহ সকল প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবিও জোরালো হয়েছে তাদের কণ্ঠে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

শনিবার মুসলিম নারীরাও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে সামিল হন
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার একদিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথ সরব হয়েছিল নারীদের প্রতিবাদী মিছিলে। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দুই লাখ নারীর সেই মিছিল থেকে ট্রাম্পকে দেওয়া হয়েছিল প্রত্যাখ্যানের বার্তা। ২০১৮ সালেও একইভাবে নেমেছিলেন নারীরা। ঘটনার তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শনিবার (১৯ জানুয়ারি) আবারও নারীর কণ্ঠস্বরে সরব হয় সে দেশের রাজপথ। বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল নারীদের। সেই সাফল্য উদযাপন এবারের মিছিলের অন্যতম লক্ষ্য। তবে সবথেকে বড় টার্গেট ২০২০ সালের নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে চায় নারীরা। প্রভাবিত করতে চায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নীতিগত সিদ্ধান্তকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে হওয়া ওই ‘নারী পদযাত্রা’য় সংহতি জানিয়েছিলেন মুসলিম নারীরাও।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, উজ্জ্বল নীল রঙের হিজাব পরে মুসলিম নারীরা বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। হোয়াইট হাউস থেকে সামান্য দূরত্বে থেকেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার-এর প্রতি সমর্থন, শরণার্থী ও গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা। বলছিলেন, ‘ফিলিস্তিন থেকে মেক্সিকো, সবগুলো দেয়াল পেরিয়ে যেতে হবে।’

‘নারী পদযাত্রা’য় মুসলিম বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতি আলাদা করে অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। সহ-বিক্ষোভকারীরা প্রশংসা করেছেন তাদের। কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) এর ব্যবস্থাপক জিনান শাবাত বিক্ষোভকারীদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে একে অপরকে যেভাবে সমর্থন দিচ্ছে তা খুবই দারুণ। এ প্রশাসন দুই বছর ধরে আমাদেরকে বিভাজিত করার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি প্রতি বছর আমরা আরও বেশি শক্তিশালী রূপে হাজির হতে পারব।’ শাবাত জানান, বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ওপর ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মুসলিম নারীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকে এসব দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তাছাড়া মুসলিমদের নিয়ে ট্রাম্পের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যও মুসলিমদের মনে আঘাত দিয়েছে।

শাবাত বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট যদি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকেন, তবে মুসলিমরা হবে এর প্রধান বলি।’

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়
ফিলিস্তিনি কুফিয়ে (সাদা কালো চেকের স্কার্ফ) পরা তরুণী রাওদা চাকের মেগাফোনের মাধ্যমে স্লোগান দিচ্ছিলেন। জানান, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আরব, মুসলিম, আফ্রিকান আমেরিকানসহ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তিনি।মিডল ইস্ট আইকে রাওদা বলেন, ‘তারা সবাই পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত, কারণ এসব জনগোষ্ঠীর সবাই একই প্রেসিডেন্টের দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। সরকার তাদের সবাইকে দমন করছে। এদেশে তাদের অধিকারের সুরক্ষা দরকার।’

যুদ্ধবিরোধী নারী সংগঠন কোড পিংকের সদস্যরাও শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। তারা ট্রাম্পকে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। কোড পিংকের সহ প্রতিষ্ঠাতা মেডিয়া বেঞ্জামিন বলেন, বিদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিরোধিতা করাটাও একটি নারী ইস্যু। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়। পুরুষ সদস্যরা যুদ্ধে গেলে নারীদেরকেই পরিবার সামলাতে হয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সামরিক খাতে বরাদ্দ বেশি দেওয়ার কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমে যায়। এক্ষেত্রে নারীদেরকে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয়।’

উল্লেখ্য, সেই নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ধারাবাহিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্য এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ বিভিন্ন নারীর বিরুদ্ধে যৌন-নিপীড়নমূলক ভাষা ব্যবহারের নজির দেখা যায় ট্রাম্পের মধ্যে। সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অতীতের আর কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেলায় নারী-বৈরিতার এমন নজির দেখা যায়নি। সে কারণেই ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই আশঙ্কা তৈরি হয়,তার শাসনামলে নারীবিদ্বেষ আরও বেশি করে অনুমোদিত সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের রাজপথ দখলে নিয়েছিল নারীরা। অভূতপূর্ব সেই ‘নারী পদযাত্রা’ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। পরের বছর ২০১৮ সালে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয় ওয়াশিংটনসহ নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস ও ফিলাডেলফিয়ার রাজপথ। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ভোটারদের কাছে যেতেও দেখা গেছে নারী মিছিলের সংগঠকদের। নির্বাচনে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল নারীরা। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে ১০২ জন নারী এবং সিনেটর হিসেবে ২৫ জন নারী শপথ নিয়েছিলেন। প্রথম মুসলিম নারী প্রতিনিধিও পেয়েছে কংগ্রেস। মিশিগান ও মিনেসোটা থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রশিদা তালিব ও ইলহান ওমর। 

/এফইউ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলকে অস্ত্রের চালান দেওয়া স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র?
মিসরে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা, গাজায় বোমা ফেলছে ইসরায়েল
দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, আটক ২ সহস্রাধিক
সর্বশেষ খবর
গ্রোসারি কেনাকাটায় টাকা সাশ্রয় করার ৬ স্মার্ট উপায়
গ্রোসারি কেনাকাটায় টাকা সাশ্রয় করার ৬ স্মার্ট উপায়
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি