X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এড়িয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত ভারতের দলগুলো

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
২৮ মার্চ ২০১৯, ১৯:৫১আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৯, ১৯:৫৫

ভারতের আসন্ন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে এখন পর্যন্ত প্রাক-নির্বাচনি প্রচারণায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ ইস্যুগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৩ মে নির্বাচনি ফল ঘোষণার পর ভারতের পরবর্তী শাসক দল যে ব্যাপক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তা একেবারে নিশ্চিত।

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এড়িয়ে কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত ভারতের দলগুলো

প্রথমে দেখা যাক ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণার নামে পরস্পরের দিকে কী ধরণের কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত। ইস্যু ও তথ্যভিত্তিক বিতর্কের চেয়ে সস্তা আক্রমণই বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিগত বছরে তথ্যভিত্তিক বিতর্কের জায়গা দখলে নিয়েছে সস্তা বিদ্রুপ, বাগাড়ম্বর, আর নিশ্চিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ। ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং স্বভাবসুলভ রুক্ষতা যে পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে তা অযাচিত।

কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী অবিরামভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। মোদির দল বিজেপির জবাবও তার চেয়ে ভালো কিছু না। মনে করা হচ্ছে থিংক ট্যাংকগুলোর কাছ থেকে কংগ্রেস এবং বিজেপি তুচ্ছ বিষয়বস্তু দিয়ে রাজনৈতিক ডিসকোর্স বদলে ফেলার পরামর্শ পেয়েছে। বিজেপি নেতাদের বিশেষ করে মোদির বংশ পরম্পরা নিয়ে আক্রমণ করে যাচ্ছে কংগ্রেস নেতারা। অহরহ ব্যবহার করা হচ্ছে চা-ওয়ালা বা চৌকিদার হিসেবে।

একইভাবে বিজেপিও তাদের প্রতিক্রিয়ায় ‘নামদার’ (অর্থশালী) আর ‘কামদার’ (কর্মী) শব্দ ব্যবহার করে যাচ্ছে। গুজরাট বা ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় এসব শব্দ ব্যবহার সাধারণ। তবে দক্ষিণ বা পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে বসবাসরত লাখ লাখ ভারতীয় এসব শব্দের অর্থ নিয়ে দ্বিধান্বিত।

বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১৪ থেকে ২০১৯ মেয়াদে মোদির শাসনামলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়নি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের মতো সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানও এখন আর নিরাপদ নয়। হিন্দুত্ববাদীদের শাসনে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর ফলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। নিরব মোদি বা ললিত মোদি (কেউই প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নয়) বা বিজয় মালিয়ার মতো দুর্নীতিবাজ শিল্পপতি দেশের শত শত কোটি টাকা লুটপাটের পর পালিয়ে যেতে পেরেছেন। মোদির নোট অবমূল্যায়নের মতো সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যহত হয়েছে।

বিজেপির প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসকে দুর্নীতির জন্য পাল্টা অভিযুক্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নেহরু-গান্ধীর আমলে পাঁচ দশক ধরে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। কংগ্রেস নেতারা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। দুর্নীতিবাজ এসব রাজনৈতিক নেতারা দালাল এবং কংগ্রেস সংশ্লিষ্ট শিল্পপতিরা মিলে ভারতের হাজার হাজার কোটি রুপি চুরি করেছে। অন্যদিকে বিজেপির আমলেই বিশ্ব ভারতকে একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে দেখা শুরু করেছে, দেখছে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দেশ হিসেবে। অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও নোট অবমূল্যায়নের পর তা পুষিয়ে নেওয়া গেছে।

কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করেন, রাজনৈতি বিতর্ককে গুরুত্বহীন করে তোলা হলেও ভারতে বিদ্যমান গুরুতর সমস্যাগুলো আর আড়াল করা করা যাচ্ছে না। তাদের মতে, কংগ্রেস শাসনামলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ধীর গতি নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। আর একারণেই ওই সময়ে দারিদ্র্য বিমোচন কঠিন হয়ে পড়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী প্রতিটি পয়সা গ্রাম উন্নয়নে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও দিল্লি থেকে গ্রামে অর্থ পৌঁছাতে গিয়েই খরচ হয়ে যেত ৮৫ পয়সা। এই বিপুল দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে  জড়িত ছিলেন কংগ্রেস সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি’র সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলমানরা কোনও কোনও এলাকায় সমস্যায় পড়ছে। হিন্দু ডানপন্থীদের গরু রক্ষার আন্দোলন সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আর এতে হুমকির মুখে পড়ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক মিথগুলোকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মনে হচ্ছে, দেশ সামনের দিকে না, পেছনের দিকে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অল্প কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে অর্থ। অথচ কর্মহীন থাকছে লাখ লাখ মানুষ। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটিতে ভোটা দেওয়ার যোগ্য নাগরিক প্রায় ৯০ কোটি। তাদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোও সীমিত। সারাক্ষণ অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের কথা বললেও কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং খুব কম সময়ই দরিদ্রদের সমস্যা বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের নিয়ে কথা বলেছেন। আর বিজেপির এই শাসনামলে ভারতজুড়ে প্রতিমাসে গড়ে এক হাজার কৃষক জমি থেকে যথেষ্ট আয় করতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। যদিও এই প্রবণতার শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের আমলে। একই ঘটনা ঘটেছে শহর এবং গ্রামাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বেকারত্বের ক্ষেত্রেও।

বিজেপি এখন প্রচার চালাচ্ছে ভারত এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে। স্ট্রার্ট-আপ উদ্যোগগুলো বিশ্বসেরা হওয়ার পথে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালে শুরু করা ‘জন ধন যোজনা’ প্রকল্পে ৯০ হাজার কোটি রুপি জমা পড়েছে। ইতোমধ্যে সারা ভারতে শুরু হয়েছে বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ‘সাগরমালা’ আর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ‘ভারতমালা’। মোদির মেয়াদে সারা ভারতে দৈনিক প্রায় ২৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি বা প্রশস্ত করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর আকাশ পরিবহন ব্যবসার আকারে ভারত হবে তৃতীয়  সর্ববৃহৎ দেশ।

এসবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কতজন মনে রাখবে যে, মাত্র এক শতাংশ মানুষ ভারতের ৭৩ শতাংশ সম্পদের মালিক। যদিও উভয় দলই দাবি করে থাকে তারা বছরের পর বছর ধরে গরিব ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য কাজ করেছে।

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ