ভারতের সঙ্গে পূর্বঘোষিত ‘বাণিজ্য মিশন’ নামে বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার। এ প্রসঙ্গে আগামী অক্টোবরে দুই দেশের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কোনও কারণ উল্লেখ না করেই এ ঘোষণা দিয়েছেন কানাডীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করছি আমরা।’
অবশ্য আগের দিনই ভারতীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক ইস্যুতে’ কানাডার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের জুনে কানাডায় শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামের একটি সংগঠন ২০২০ সালে ভারতের পাঞ্জাবের স্বাধীনতার দাবিতে এক গণভোটের আয়োজনের ডাক দিয়েছিল। সংগঠনটির পক্ষ থেকে কানাডা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই গণভোটের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময়। ভারতে নিষিদ্ধ খালিস্তানপন্থিদের কানাডায় এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দিল্লি–অটোয়া'র সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে; যা ২০২৩ সালে আরও দৃশ্যমান।
এই বিতর্ক নতুন করে উসকে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি শিখ ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনা করেন। এমনকি বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসলেও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও বৈঠক করেননি মোদি।
গত মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী নাগ এবং ভারতের পীযূষ গোয়াল যৌথ বিবৃতি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আশাবাদী; যা এখন ভেস্তে যাওয়ার পথে।
জি-২০ সম্মেলন থেকেই বিষয়টি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। মোদির সঙ্গে ট্রুডোর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক না হওয়ায় তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। এমনকি দিল্লিতে ট্রুডোর উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে অতিরিক্ত ৩৬ ঘণ্টা তিনি দেশটিতে অবস্থান করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, এর এক ফাঁকে মোদি-ট্রুডোর বৈঠক হতে পারে। কিন্তু তাও হয়ে ওঠেনি। এমনকি বিদায় জানানোর সময়ও মোদিকে দেখা যায়নি। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদায় জানান কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
উল্লেখ্য, ষোড়শ শতাব্দীতে দাস হয়ে আটলান্টিক উপকূলে বসতি গড়েছিল ভারতীয়রা। কালক্রমে উত্তর আামেরিকার দেশ কানাডার দ্রুত বেড়ে ওঠা সম্প্রদায় হয়ে ওঠে ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়। দেশটির সবচেয়ে বড় বিদেশি সম্প্রদায় চাইনিজ-কানাডিয়ানদের পরে ১৩ লাখেরও বেশি শিখদের এই সম্প্রদায় এখন কানাডার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ প্রভাবশালী। ট্রুডোর মন্ত্রিসভাতেও রয়েছেন শিখ মন্ত্রী। ২০১৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তোলেন, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন কানাডার মন্ত্রীরা। এরপর বরাবরই এমন অভিযোগ তুলে আসছে মোদি সরকার।
সূত্র: আল জাজিরা