ইউক্রেনের জন্য ২০১৪ সাল পূর্ববর্তী সীমান্ত ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভের ৪০টির বেশি সামরিক মিত্রের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আরও বলেছেন, চলমান সংঘাত থামাতে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তিকেও সমাধান মনে করছে না ওয়াশিংটন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ব্রাসেলসে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ওই বৈঠকে তিনি বলেছেন, সবার মতো আমরাও সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন চাই। তবে সবার আগে আমাদের এটা মানতে হবে যে, ২০১৪ সাল পূর্ববর্তী সীমান্ত পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অবাস্তব একটা লক্ষ্য। এসব অবাস্তব লক্ষ্যের পিছে দৌড়ালে ভোগান্তি বাড়বে বৈ কমবে না।
প্রায় তিন বছরের ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়ে হোয়াইট হাউজের দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় হেগসেথের এই বক্তব্যে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে প্রথমবারের মতো সামরিক অভিযান চালায় রাশিয়া। সে সময় ক্রিমিয়াসহ বেশ কিছু অঞ্চল মস্কোর দখলে চলে যায়। হেগসেথের বক্তব্য অনুযায়ী, রাশিয়ার কব্জায় যাওয়া ভূখণ্ডের কোনও অংশ ফিরে পেতেই ইউক্রেনকে সহায়তা করার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের তেমন আগ্রহ নেই।
একই বক্তব্যে তিনি ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে কিয়েভের, যেমন ইতোমধ্যে ক্রেমলিনের কুক্ষিগত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি।
ইউক্রেন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসন ও অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে হেগসেথের বক্তব্যে। বাইডেন প্রশাসন ও অন্য মিত্ররা ইউক্রেনের জন্য যতদিন প্রয়োজন সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ইউক্রেনের যুদ্ধের লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন সম্পূর্ণ সমর্থন না দেওয়ার ইঙ্গিত কয়েকদিন থেকে পাওয়া গেলেও, সবার সামনে এই প্রথম তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ পেলো।
এছাড়া, ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়েও মত প্রকাশ করেছেন হেগসেথ। তিনি বলেছেন, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর অন্য সদস্যদেরই আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, মার্কিন সীমান্ত নিরাপত্তা সংকট এবং চীনের হুমকির কারণে কৌশলগত বাস্তবতা অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের পক্ষে ইউরোপের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য।
হেগসেথের বক্তব্য ইউক্রেনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে। রাশিয়ার কাছে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারে ইউক্রেন বদ্ধপরিকর হলেও, দিনে দিনে তারা বুঝতে পারছিল, বল প্রয়োগের চেয়ে কূটনৈতিক উপায়ে হারানো ভূমি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে জন্য মার্কিন সমর্থন তাদের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হেগসেথের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ইউক্রেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনও সাড়া পায়নি রয়টার্স।