কুর্দি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী কুর্দিশ ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে তাদের সংগঠন বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার (১২ মে) স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, এর মধ্য দিয়ে দলটির দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময়ের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিসমাপ্তি হতে চললো। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা ফিরাত জানিয়েছে, পিকেকের বারোতম সভায় (টুলেভথ কংগ্রেস) সংগঠন ভেঙে দেওয়ার এবং সশস্ত্র সংগ্রামে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল, সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং ইরাকের উত্তরাঞ্চলে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি। ১৯৮৪ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে পিকেকে। চার দশকের বেশি সময় এই দলের কারণে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তুরস্ক ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে।
পিকেকের বিবৃতিতে বলা হয়, পিকেকে তাদের ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য পূরণ করেছে। কুর্দিদের ওপর চলে আসা নির্যাতন ও নিধনযজ্ঞ অস্বীকারের সংস্কৃতি আমরা ধুলিস্যাত করতে পেরেছি। এখন পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
পিকেকের বিবৃতির বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত তুরস্কের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে, একই সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় উত্তেজনা হ্রাসেও ভূমিকা রাখতে পারে।
পিকেকের এই সিদ্ধান্তে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ওয়াইপিজির ওপর কোনও প্রভাব পড়ে কিনা, সেটা দেখার বিষয়। মার্কিন সমর্থিত এবং সিরিয়ায় সক্রিয় এই গোষ্ঠীর সঙ্গে পিকেকের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করে আঙ্কারা।
তুরস্কের পার্লামেন্টে তৃতীয় বৃহত্তম দল প্রো-কুর্দিশ ডিইএম পার্টির এক নেতা তাইয়েপ তেমেল বলেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল কুর্দিদের জন্য নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় মনোভাবেও বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করবে।
এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ, যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রতি অনাস্থা ও শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যর্থতায় হতাশ ছিল। ৪৫ বছর বয়সী হাসান হুসেইন চেলান বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। মানুষ যেন আর না মরে এবং কুর্দি সমস্যা যেন আরও গণতান্ত্রিক কাঠামোতে সমাধান হয়, সেটাই আমরা চাই।
ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র ওমের চেলিক বলেছেন, পিকেকের সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্য কুর্দি অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে পিকেকের বিদ্রোহ বহু বছর ধরে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্থবির করে রেখেছিল।
পিকেকে ভেঙে পড়লে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানের ফলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমে হাত দিতে পারবেন তিনি। পিকেকের বিদ্রোহের কারণে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত এই অঞ্চলে বহু বছর অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত ছিল।
উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার পিকেকের সঙ্গে শান্তিচুক্তি বা সমঝোতার চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। যেমন ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।