চীনের নির্বাসিত উইঘুর নেতা দলকুন ইসাকে দেওয়া ভিসা প্রত্যাহার করে নিল ভারত। ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার নোটিস’ রয়েছে দলকুনের নামে। ভারত তাকে হিমচলপ্রদেশে আসার জন্য ভিসা দেওয়ায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল চীন। তার প্রেক্ষিতে সোমবার ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইন্টারপোলের নিয়ম-কানুনকে শ্রদ্ধা জানাতেই দলকুন ইসার ভিসা বাতিল করা হলো।
জার্মানিতে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকা চীনা নেতা দলকুন ইসাকে চীনের সরকার ‘জঙ্গি’ হিসেবে ঘোষণা করে। পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর জনগোষ্ঠীর নেতা তিনি। জিনজিয়াং-এর আদি বাসিন্দা উইঘুরদের সঙ্গে পরবর্তীকালে চীনের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আসা হান জনগোষ্ঠীর বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সুবিদিত। হানদের সুরক্ষায় উইঘুরদের উপর চীনের নিরাপত্তাবাহিনী হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে চতুর্থ দফার ভোট
এর ফলে উইঘুর মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্রোহী। চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে উইঘুরদের সশস্ত্র সংঘর্ষ জিনজিয়াং-এর প্রায় প্রতিদিনকার ঘটনা। ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেসের নেতা দলকুন ইসাকে গ্রেফতার করার জন্য ইন্টারপোলকে দিয়ে আগেই ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করিয়েছিল চীন। সেই দলকুনকেই ভারত সরকার ভিসা দিয়েছিল হিমাচলপ্রদেশে আসার জন্য। সেখানে চীনের আরেক ‘ঘোষিত শত্রু’ দলাই লামার সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল দলকুনের।
জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে জঙ্গি ঘোষণা করার জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করেছিল ভারত। সেই প্রস্তাব ভেটো দিয়ে আটকে দেয় চীন। দলকুন ইসাকে ভিসা দিয়ে ভারত তারই পাল্টা জবাব দিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল। ইসাকে ভিসা দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই চীনের তরফে প্রতিবাদ করা হয়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার নোটিস’ রয়েছে যে জঙ্গির নামে, তাকে বিচারের কাঠগড়ায় পৌঁছে দেওয়া সব দেশের দায়িত্ব। কূটনৈতিক স্তরেও চীন বিষয়টি নিয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন: ইয়েমেন শান্তি আলোচনা স্থগিত
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়, দলকুনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তার নামে ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার নোটিস’ রয়েছে, তাই দলকুন ভারতে এলেই তাকে গ্রেফতার করতে এ দেশের প্রশাসন বাধ্য হবে। কারণ ভারত ইন্টারপোলের নিয়ম-কানুন ভাঙতে চায় না।
দলকুন ইসা ভিসা বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমি মনে করি কোন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েই ভারত সরকার আমার ভিসা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। বিষয়টা এত বিতর্কের জন্ম দেওয়ায় ভারত সরকার দুঃখপ্রকাশ করেছে।’
আরও পড়ুন: বিমানে কানহাইয়ার গলা চেপে ধরলেন ‘মোদির সমর্থক’
কূটনৈতিক মহল অবশ্য বলছে, ভিসা বাতিল করলেও দলকুন তথা উইঘুরদের পাশে থাকার বার্তাই দিয়েছে ভারত সরকার। কারণ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা জানিয়েছে, তার সারকথা হলো, দলকুনকে গ্রেফতার করতে চায় না বলেই তার ভিসা বাতিল করেছে ভারত। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
/এসএ/