সংঘাতের জেরে সুদান ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে মিসর সীমান্তের কাছে। তবে সেখানেও দুর্ভোগ তাদের পিছু ছাড়ছে না। সীমান্তে গাড়ি চালকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন তারা। একটি পরিবার জানায়, সীমান্ত অতিক্রম করতে একটি বাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার গুনতে হচ্ছে তাদের।
সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকশ মানুষ এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। দুই সপ্তাহের সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ হয়েছেন গৃহহীন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী মিসরে ঢুকতে চাইছেন এমন ব্যক্তিরা অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ কেবল বিশেষ পারমিট নিয়ে বাসে ভ্রমণকারীরা সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। সেখানে পায়ে হেঁটে পারাপার নিষিদ্ধ।
দুই দিন আগে ১০ বছরের কম বয়সী তিন শিশুসহ সাত সদস্যের একটি পরিবার রাজধানী খার্তুম থেকে পালিয়ে যায়। সেই পরিবারের সদস্য ফাদি আতাবানি। তিনি বলেছেন, ৮৮ বছর বয়সী এক নারীসহ তার পরিবার সীমান্তে আটকা পড়েছে।
সীমান্ত শহর ওয়াদি হালফা থেকে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এখানে হাজার হাজার মানুষ আছে। কোনও আবাসন নেই। মানুষ স্কুলগুলোতে গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছে।’
আতাবানি পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যেরই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। তাই ব্রিটিশ সরকারের কাছে সাহায্যের অনুরোধ করছে তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আমার সন্তানদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে পারি না। আমরা মরুভূমির মাঝখানে আছি। আমি চাই ব্রিটিশ সরকার আমাকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করুক।’
স্থানীয় বাস চালকদের বিরুদ্ধে সুদান সংকটের মরিয়া পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।
৫৩ বছর বয়সী বলেন, ‘সাধারণ দিনে একটি বাস ভাড়া করতে খরচ হতো তিন হাজার ডলার। আর এখন তাদের ৪০ হাজার ডলার দিতে হচ্ছে। অথচ দূরত্ব কেবল ৩০ কিলোমিটার। কার কাছে এত টাকা আছে? ব্যাংক বন্ধ, এটিএম মেশিন কাজ করছে না।’
হোসনা নামে এক নারী জানান, তার দুই মেয়ে সুদানের রাজধানীতে আটকা পড়েছে। খার্তুম থেকে সীমান্তে আসতে এখন জনপ্রতি ৪০০ ডলার নেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যা ছিল ২৫ ডলার।
সহিংসতা শুরু হওয়ার আগেই হোসনা মিসরীয় শহর আসওয়ানে পৌঁছেছিলেন। কাজ করছেন বাস স্টেশনে একটি চায়ের দোকানে। এখন বাস স্টেশনটি শরণার্থীদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা আশেপাশে আর্টিলারি শেল পড়ে থাকতে দেখেছে। আমি তাদের এখানে আনতে পারিনি। তাদের সাহায্য করার জন্য আমার স্বামী বা ছেলে নেই।’
হোসনা বলেন, ‘সুদান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যোদ্ধারা বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করছে’।
সুদানি-আমেরিকান শিক্ষাবিদ এসরা বানি আসওয়ানে আসা লোকদের সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘বাস ভাড়া এমন বেড়েছে তা কল্পনা করাও কঠিন। এটা বেদনাদায়ক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’।
সূত্র: বিবিসি