রুক্ষ রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন তীর্থযাত্রীরা। কেউ হাত, হাঁটু ও কনুই ঘষে এগোচ্ছেন। তাদের কষ্টার্জিত পথে রক্তের দাগ ছড়িয়ে পড়েছে। কিউবার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায়, সেন্ট লাজারাসের মিছিলটি সবচেয়ে বড় ও রঙিন বার্ষিক ধর্মীয় আয়োজনগুলোর একটি।
ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে সেন্ট লাজারাসের দিন উদযাপনের আগে হাজারো কিউবান নির্জন রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। কেউ আবার ন্যূনতম কাপড় পরে পাথুরে মাটিতে ক্রল করছেন। রাজধানী হাভানার উপকণ্ঠে অবস্থিত ছোট চার্চ এল রিঙ্কনে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটছেন।
তীর্থযাত্রী ফের্নান্দো ভালদেজ জানান, এটি আমার বাবার একটি প্রথা ছিল, যা আমি তার মৃত্যুর পর থেকে ২৭ বছর ধরে পালন করছি। লাজারাস আমার প্রার্থনা পূরণ করেন।
তিনি পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খালি পায়ে হাঁটেন ভাঙাচোরা পথে।
খ্রিস্টধর্মের নিউ টেস্টামেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যিশু মৃত্যুর চার দিন পর লাজারাসকে জীবিত করেছিলেন। ফলে, লাজারাসকে দরিদ্র ও অসুস্থদের রক্ষাকর্তা হিসেবে মানা হয়।
কেউ কেউ লাজারাসের প্রতি ভক্তি প্রকাশে আরও দূরের রুক্ষ পথ বেছে নেন। কেউ পেটের ওপর ভর দিয়ে এগোন, কেউ আবার উল্টো দিকে হাঁটেন, কেউবা পায়ে ভারী ব্লক বেঁধে যান। অনেকের হাতে-পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়, রক্ত ঝরে। এই সময়ে রেড ক্রসের মেডিকস তাদের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন এবং ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের পানি বিতরণ করেন।
১৯৯২ সালে কিউবা নিজেদের সংবিধানে পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রকে নাস্তিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর ১৯৯৮ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয়ের ঐতিহাসিক সফর কিউবায় ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
তবে এখনও তীর্থযাত্রার স্থানে ভারী পুলিশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এল রিঙ্কনের প্রবেশদ্বারে ফিদেল কাস্ত্রো, রাউল কাস্ত্রো এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-ক্যানেলের বিশাল পোস্টার টাঙানো ছিল।
কিউবার ধর্মীয় ঐতিহ্যে স্যান্টারিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আফ্রিকা থেকে দাস হয়ে আসা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এ ধর্মের উৎপত্তি জড়িত। তাদের ওপর খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরের চাপ ছিল। ফলে, এই দুই ধর্মের সংমিশ্রণে স্যান্টারিয়া গড়ে ওঠে।
স্যান্টারিয়া ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় আচারের মাধ্যমে লাজারাসের প্রতি সম্মান জানায়। কেউ কেউ চার্চের কাছে দাঁড়িয়ে ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন, আবার কেউ সিগারের ধোঁয়া ছিটিয়ে মূর্তিকে সম্মান জানান।
কিউবায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে অনেক তীর্থযাত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তীর্থযাত্রী ভালদেজ বলেন, বাঁচতে হলে মানুষের কাছে একটি কারণ থাকতে হবে। আমার জীবনে সেই আলো আমার বিশ্বাস। তা না হলে আপনি মারা যাবেন।
সূত্র: সিএনএন