কঠিন এক সংকটের জন্য প্রস্তুত হতে নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তরফ থেকে উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই আহ্বান জানালেন তিনি। দলীয় এক সম্মেলনে কিম জং উন বর্তমান পরিস্থিতিকে ১৯৯০ দশকের প্রাণঘাতী দুর্ভিক্ষের সঙ্গে তুলনা করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। এর কারণে দেশটির অর্থনীতির চালিকা শক্তি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়াও পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দেশটির ওপর বহাল রয়েছে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির খারাপ অবস্থা নিয়ে বিরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বৃহস্পতিবার কিম জং উন দলীয় কর্মীদের আরেকটি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি কর্মীদের ‘আর্ডাস মার্চ’-এর প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দেন। উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা এই টার্মটি ব্যবহার করে ১৯৯০’র দশকের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা মনে করিয়ে দিয়ে থাকেন।
ওই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশটির বৈদেশিক ত্রাণের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। ওই সময়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এই সপ্তাহের শুরুতে কিম জং উন সতর্ক করে দিয়ে বলেন তার দেশ এ যাবতকালের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।
গত কয়েক মাস ধরেই উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের খাবারের জন্য হাহাকার করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে চীন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে এই খবর আসছে। এসব এলাকার বহু মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস সীমান্ত চোরাচালান।
উত্তর কোরিয়ার প্রধান খাদ্যপণ্য ভুট্টার দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক পর্যায়ে এক কেজি ভুট্টার দাম একজন মানুষের এক মাসের আয়ের সমানে পৌঁছে যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক লিনা ইয়োন বলেন, গত দুই মাসে চীন থেকে প্রায় কোনও খাদ্যশস্যই উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেনি। তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ ভিক্ষা করছে, সীমান্ত এলাকায় অনেকেই মারা গেছে। আর কোনও খাবার নেই, সাবান নেই, টুথপেস্ট কিংবা ব্যাটারিও পাওয়া যাচ্ছে না।‘
উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টমাস ওজিয়া কুইনটানা গত মাসে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মারাত্মক খাদ্য সংকটের কারণে দেশটিতে ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও ক্ষুধা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর কথা জানা যাচ্ছে। আর পরিবার খাবার দিতে অক্ষম হয়ে পড়া শিশু ও বয়স্ক ভিখারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।‘