দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম। দেশটিতে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক শাসন বিদ্যমান।
১৯৭৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম দখল করে সমাজতান্ত্রিক উত্তর ভিয়েতনাম। এর মাধ্যমে একক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ দেশটি।
পরের তিন দশক ধরে যুদ্ধবিগ্রহ চলে দেশটিতে। প্রথমে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের সঙ্গে লড়তে হয় দেশটির। তারপর যুক্তরাষ্ট্রপন্থী দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অসদাচরণে জর্জরিত ভিয়েতনাম। এছাড়া দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন পরিস্থিতিও ভয়াবহ।
ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
রাষ্ট্রীয় নাম: সোশালিস্ট রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম
রাজধানী: হ্যানয়
আয়তন: ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৯ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা: ১০ কোটি ৩৮ লাখ
ভাষা: ভিয়েতনামিজ
গড় আয়ু: পুরুষ ৭১, নারী ৭৯ বছর
নেতৃত্ব
প্রেসিডেন্ট ভো ভ্যান থুং
২০২৩ সালের মার্চে জাতীয় পরিষদে প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন ভো ভ্যান থুং। দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট তিনি।
কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রং
ভিয়েতনামের সর্বময় ক্ষমতা নিহিত থাকে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের হাতে। ২০১১ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন নগুয়েন ফু ট্রং। কমিউনিস্ট দলের প্রধান হওয়ার পাশাপাশি দেশটির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনেরও সম্পাদক তিনি। কমিউনিস্ট পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটি ‘পলিটব্যুরো’র ডি ফ্যাক্টো প্রধানও তিনি।
সংবাদমাধ্যম
দেশটির সংবাদমাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
সংবেদনশীল কোনও বিষয়ে কথা বললে অথবা সরকারের সমালোচনা করলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা নিষেধাজ্ঞা এমনকি গ্রেফতার হতে হয়। হুমকির মুখে কাজ করে দেশটির গণমাধ্যম।
কমিউনিস্ট দলের জন্য হুমকি মনে হলে যেকোন অনলাইন কন্টেন্টও ব্লক করে দেওয়া হয় দেশটিতে।
ভিয়েতনামের ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১৮৫৯-৮৩: ধীরে ধীরে ইন্দোচীনে উপনিবেশ বিস্তার করে ফ্রান্স।
১৯৪০: ইন্দোচীনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় জাপান।
১৯৪৫: ক্ষমতা দখল করে ভিয়েত মিন (স্বাধীনতা জোট)। কিংবদন্তি নেতা হো চি মিন স্বাধীনতা ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী ভিয়েতনাম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৬: নভেম্বরে ভিয়েত মিনের হাইফং অঞ্চলে আক্রমণ করে ফ্রান্স। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে দেশটি।
১৯৫০: স্বাধীন ভিয়েতনামকে স্বীকৃতি দেয় চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।
১৯৫৪: সাত সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধের পর ফ্রান্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচ্ছিন্ন সামরিক ঘাটি ‘দিয়েন বিয়েনব ফু’তে আক্রমণ করে ভিয়েত মিন। এই যুদ্ধের ফলে ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ফ্রান্স। জেনেভা কনফারেন্সে শান্তি আলোচনা করতে রাজি হয় ভিয়েতনাম সরকার। কিন্তু জেনেভা কনফারেন্সের আলোচনার মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্ত হয়ে যায় দেশটি।
১৯৫৬: রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগো দিন দিয়েম। পরবর্তী দুই দশক ধরে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বা দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ চলে। দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৬৪: মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজে উত্তর ভিয়েতনামের টহল নৌযান থেকে গুলি করার অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। এটিকে টনকিন উপসাগরের ঘটনা বলা হয়ে থাকে। টনকিন রেজুলিউশনের পরিপ্রেক্ষিতে অঞ্চলটিতে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দেয় মার্কিন সরকার।
১৯৬৫: দক্ষিণ ভিয়েতনামে ২ লাখ সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৬৬: ভিয়েতনামে সেনা বাড়িয়ে প্রথমে ৪ লাখ ও তারপর ৫ লাখ করে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৬৮: মার্কিন সেনাদের ওপর ভিয়েত কং ও উত্তর ভিয়েতনাম যৌথ আক্রমণ শুরু করে। এটি ‘টেট অফেনসিভ’ নামে পরিচিত।
১৯৬৯: কিংবদন্তি নেতা হো চি মিনের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধের বিরুদ্ধে দেশটিতে জনমত গড়ে উঠতে থাকে। এ কারণে ভিয়েতনাম থেকে ধীরে ধীরে মার্কিন সেনা কমাতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।
১৯৭৩: ফ্রান্সের প্যারিসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মার্চের মধ্যে দেশটি থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭৫: উত্তর ভিয়েতনামের সেনা প্রবেশ করে দক্ষিণ ভিয়েতনামে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ডুং ভ্যান মিন আত্মসমর্পণ করার পর পুরো ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় উত্তর ভিয়েতনাম।
১৯৭৬: সোশালিস্ট রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম নামে একক রাষ্ট্র গঠিত হয়। দেশটি থেকে হাজার হাজার মানুষ এ সময় পালিয়ে যায়।
১৯৭৯: কম্বোডিয়ায় আক্রমণ করে পল পটের খেমার রুজ শাসনের অবসান ঘটায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ভিয়েতনামের উত্তর সীমান্তে চীনা আক্রমণ করে চীন। ভিয়েতনামের সেনাদের পাল্টা আক্রমণে পিছু হটে চীনা বাহিনী।
১৯৮৬: দলের নেতা হন নগুয়েন ভ্যান লিন। তিনি আরও উদারনৈতিক অর্থনীতি প্রবর্তন করেন।
১৯৮৬: কম্বোডিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ভিয়েতনাম।
১৯৯৪: ভিয়েতনামের ওপর থেকে ৩০ বছরের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৯৫: আসিয়ানের সদস্য হয় ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোদস্তুর কুটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে দেশটি।
২০০০: তিন দিনের সরকারি সফরে ভিয়েতনামে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
২০০১: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে ভিয়েতনাম।
২০০২: ক্যাম রন বে নৌঘাঁটি ভিয়েতনামকে ফিরিয়ে দেয় রাশিয়া। ওয়ারশ চুক্তির বাইরে এটি রাশিয়ার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি ছিল।
২০০৪: ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর প্রথম মার্কিন বাণিজ্যিক বিমান ভিয়েতনামে অবতরণ করে।
২০০৭: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদান করে ভিয়েতনাম।
২০১১: ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বিষাক্ত গ্যাস অরেঞ্জ ডিফোলিয়েন্ট থেকে দূষণ পরিষ্কার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায় ভিয়েতনাম। দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধ মেটাতে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ভিয়েতনাম।
২০১৪: প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীনের সঙ্গে ১৯৭৪ সালের সংঘর্ষের বর্ষপূর্তি চিহ্নিত করে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
২০১৬: ভিয়েতনামের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর আরোপিত দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।