২০২৪ সালে ভারতে মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক বক্তব্যের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। বিষয়টি গত বছর দেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গত বছরে ১ হাজার ১৬৫টি ঘৃণাসূচক ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব। সেগুলোকে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগের বছর এমন ৬৬৮টি ঘটনা নথিবদ্ধ করেছিল তারা। ২০২৪ সালের মে মাসেই ২৬৯টি ঘৃণাসূচক ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা ওই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় মিছিল, প্রতিবাদ মিছিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘৃণাত্মক বক্তব্যের ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো রাজনীতিবিদেরা ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুসলমানদেরকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি ঘৃণাসূচক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এমন বক্তব্যের ৯৮.৫ শতাংশই তাদের বিরুদ্ধে ছিল বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেসব রাজ্যে মোদির দল বা বৃহত্তর জোট ক্ষমতায় ছিল, সেখানেই বেশিরভাগ ঘৃণাসূচক বক্তব্য সম্পর্কিত ঘটনা ঘটেছে।
বিগত বছরগুলোতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। তবে ক্ষমতাসীন দল বারবার ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণাসূচক বক্তব্যের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে মোদির দল বিজেপির একাধিক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি।
মঙ্গলবার বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র জয়বীর শেরগিল সিএনএনকে বলেন যে দেশটির একটি ‘খুব শক্তিশালী আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং যে কোনও মূল্যে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য গঠিত।’
জয়বীর শেরগিল আরও বলেন, ‘আজকের ভারতকে কোনও ‘ভারতবিরোধী রিপোর্ট ইন্ডাস্ট্রির’ কাছ থেকে কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই, যা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হয়ে ভারতের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়।’
বিজেপির অভিযোগ, ভারতবিরোধী চিত্র তুলে ধরে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব।
এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশ করা হলো, যখন কয়েক দিন বাদেই হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ এনেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভেদমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
গত মে মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশন বিজেপিকে এমন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট অপসারণের নির্দেশ দেয়, যা বিরোধী নেতারা বলেছিলেন ‘মুসলমানদের বিপক্ষে বিদ্বেষ ছড়ায়’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খ্রিস্টানরাও ঘৃণাত্মক বক্তব্যের শিকার হয়েছে, তবে মুসলমানদের তুলনায় কম মাত্রায়।