পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার জেলায় একটি স্কুলবাস লক্ষ্য করে চালানো বোমা হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চার শিশু, বাসের চালক ও সহকারী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। বুধবার সকালে আর্মি পাবলিক স্কুলের ওই বাসটি যখন শিক্ষার্থীদের নিতে যাচ্ছিল, তখন সেটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। খুজদারের সরকারি কর্মকর্তা ইয়াসির ইকবাল দাশতি জানান, হামলায় অন্তত ৩৮ জন আহত হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাসটিতে ৪৬ শিক্ষার্থী ছিল এবং প্রাথমিক তদন্তে এটি গাড়িবাহী আইইডি বিস্ফোরণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুগতি বলেন, আহত শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের হেলিকপ্টারে কোয়েটায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, এই হামলা কোন ধরনের তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, তদন্ত চলছে।
এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় ভারতীয় সন্ত্রাসী প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছে। যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেনি তারা।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ হামলাকে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা বলে অভিহিত করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে ভারত জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজেদের পরিচিতি আড়াল করতেই পাকিস্তান বারবার ভারতের ওপর দোষ চাপায়।
এই নির্মম হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, স্কুলে যাওয়া কোনও শিশুর জন্য কখনও বিপজ্জনক কাজ হতে পারে না। কিন্তু পাকিস্তানে বহু শিশুর জন্য এটি এখন নির্মম বাস্তবতা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামাবাদ দূতাবাস এক বিবৃতিতে ঘটনাটিকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আখ্যা দিয়ে বলেছে, নিরীহ শিশুদের হত্যা ভাষায় প্রকাশের বাইরে। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সম্প্রতি বেলুচিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে। কয়েক দিন আগেই কিল্লা আবদুল্লাহ এলাকায় একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণে চার জন নিহত হন। খনিজসমৃদ্ধ এই প্রদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বালুচ গোষ্ঠীগুলো সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।
বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন অতীতে এমন বহু হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও বুধবারের হামলার দায় তারা স্বীকার করেনি। পাকিস্তান বলে আসছে, এই গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিবেশী ভারত সমর্থন দেয়, যা তারা অস্বীকার করে।
চলতি বছরের মার্চে বিএলএ একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা চালিয়ে ৩৩ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন সেনা সদস্য। সংগঠনটি সম্প্রতি আরও হামলার হুমকি দিয়েছে।
তবে সাধারণত বেলুচিস্তানে স্কুলশিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হামলা খুব বিরল। তবে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় এর আগে এমন হামলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে আর্মি পাবলিক স্কুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হামলায় ১৪০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছিল।