X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা ট্যাংকের পর কি যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে ইউক্রেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:০৯আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:২৯

ইউক্রেন অত্যাধুনিক পশ্চিমা যুদ্ধের ট্যাংক পাবে, কয়েক মাস আগেও বিষয়টি অচিন্তনীয় ছিল। কিন্তু জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও অপর পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে মূল যুদ্ধের ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সেই অচিন্তনীয় বিষয়কে বাস্তব করে তুলেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহযোগিতায় ঐক্যে দেখিয়ে কিয়েভকে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলার ভয় তারা পাশে ঠেলে দিয়েছে।

রুশ আক্রমণ মোকাবিলায় পশ্চিমাদের কাছে ট্যাংক, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান চেয়েছিল ইউক্রেন। এই তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে ট্যাংক। শিগগিরই মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পেতে পারে ইউক্রেন। বাকি থাকবে যুদ্ধবিমান।

ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ গত সপ্তাহে সিএনএনকে বলেছিলেন, গত বছর সান্তা ক্লসের কাছে একটি ইচ্ছে তালিকা পাঠিয়েছিলাম। এই তালিকায় যুদ্ধবিমান ছিল।

পশ্চিমা নেতারা প্রকাশ্যে এমন আচরণ করছেন যেনও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান পাঠানো নিয়ে কোনও আলোচনা হচ্ছে না। তাদের মধ্যে আলোচনার আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়টি নেই।

তবে গত বছর থেকেই ইউক্রেনে মার্কিন যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টি বিভিন্নভাবে আলোচনায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার বলছেন, এফ-সিক্সটিনসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে পাঠানোর বিষয়টি একেবারে বাতিল করা হয়নি। গত বছর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি বলেছিলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান পাঠালে দেশটির সেনাবাহিনীর সামর্থ্য সামান্য বাড়বে কিন্তু উচ্চ ঝুঁকি থাকবে।

শুক্রবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধবিমান চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত ইউক্রেনীয়দের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, তাদের চাহিদা পূরণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যখন আমরা পারছি না যখন আমাদের মিত্র ও অংশীদাররা সেই চাহিদা পূরণ করছে।

গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডস এই বিষয়ে জল্পনা কিছুটা বাড়িয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টের এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যখন সময় আসবে নেদারল্যান্ডস এফ-সিক্সটিন পাঠাতে পারবে। এটি সরবরাহ একেবারে বাতিল করা হয়নি।

১৯৭০ দশকে নির্মিত এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান ছয়টি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিমান এখন আর ক্রয় করে না। তবে বাহরাইন ও জর্ডানের মতো দেশগুলো এখনও এটি কিনছে।

ইউক্রেনে এই যুদ্ধবিমান পাঠানোর বিষয়টি এর নির্মার্তা কোম্পানি লকহিড মার্টিনের নজরেও রয়েছে। কোম্পানিটির চিফ অপারেটিং অফিসার ফ্রাঙ্ক সেন্ট জন স্বীকার করেছেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ইউক্রেনকে এফ-সিক্সটিন পাঠানোর বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিমানটির নতুন উৎপাদন সম্ভাব্য এই চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

ডাচ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার উইননিঙ্গা বলছেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ত সবাইকে একটু নাড়া দিচ্ছেন। তিনি সতর্ক করতে চাইছেন, প্রত্যাশিত সময়ের আগেই ইউক্রেন যুদ্ধবিমান চাইতে পারে।

নেদারল্যান্ডসের কাছে ২৪টি এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান রয়েছে। আগামী বছর এগুলো ব্যবহার বন্ধ করতে চায় দেশটি। তারা নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ ব্যবহার শুরু করেছে। ২০২১ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১২টি এফ-১৬ বিক্রি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এগুলো প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করছে।

ডাচ কর্নেল বলেন, বেশ কয়েকটি এফ-১৬ অপর দেশগুলোর কাছে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হবে। ইউক্রেনকে সরবরাহের জন্য পথ খোলা থাকবে। আমার মনে হয় আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানোর জন্য তারা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

যুদ্ধবিমান কেমন প্রভাব ফেলবে?

এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সরবরাহ করা অনেক অস্ত্রের মতোই এফ-১৬ কোনও ম্যাজিক বুলেট হবে না। দ্য হগ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর গবেষণা প্রধান টিম সুয়েইজিস বলেন, শুধু যুদ্ধবিমান গেম চ্যাঞ্জিং হবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু ট্যাংক, সেনা, হিমার্সের মতো দূরপাল্লার অস্ত্রের সঙ্গে এফ-১৬ সমন্বিতভাবে যুদ্ধের গতি ইউক্রেনের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের সিনিয়র গবেষক জাস্টিন ব্রংক বলছেন, রাশিয়ার অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাকে ঠেকানো হবে প্রধান বাধা। সাধারণভাবে ধারণা হলো পশ্চিমা যুদ্ধবিমান পাওয়ার ফলে ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডে আকাশযুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে। কিন্তু যেকোনও স্বাভাবিক বিবেচনা এটি কল্পনা। বাস্তবতা হলো পশ্চিমা যুদ্ধবিমানকে নিয়মিত রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার হুমকিতে থাকতে হবে। যেমনটি এখন রয়েছেন ইউক্রনীয়রা।

তার মতে, অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হতে পারে এফ-১৬। যা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আগের চেয়ে বেশি ভূপাতিত করতে পারবে। একই সঙ্গে রণক্ষেত্রে থাকা রুশ যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা করবে।

ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশেরই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকার অর্থ হলো প্রায় এক বছরের যুদ্ধে কোনও দেশই আকাশ দখল করতে পারেনি।

অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার উইননিঙ্গা বলেন, এফ-১৬ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হলে ইউক্রেনকে নিজেদের আকাশসীমায় কিছু মাত্রায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। এর অর্থ হলো ইউক্রেনকে রাশিয়া এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে হবে। ধ্বংস করতে রাশিয়ার এস-৩০০ ব্যবস্থাও।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনকে এফ-১৬ সরবরাহ করাই মূল বিষয় নয়। পশ্চিমাদের নিশ্চিত করতে হবে নিজেদের আকাশসীমায় ইউক্রেন যেনও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।

সূত্র: সিএনএন

/এএ/
সম্পর্কিত
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ