X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে আরও এক প্রাচীন মসজিদের ভেতর মন্দিরের অস্তিত্ব খোঁজার নির্দেশ

বিদেশ ডেস্ক
১২ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪১আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪১

বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর রাম মন্দির নির্মাণের রায়ের পর এবার ভারতে আরও একটি প্রাচীন মসজিদের ভেতর মন্দিরের অস্তিত্ব খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বারাণসী এলাকার জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর কোনও মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায় নিয়ে এরইমধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।

একজন হিন্দু আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছে, কোনও মন্দির ভেঙে ওই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল কি না ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তা সমীক্ষা করে দেখবে। এই সমীক্ষার খরচ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে বহন করতে হবে। কিন্তু ভারতের মুসলিম নেতারা অনেকেই মনে করছেন, কোর্টের এই রায় অসাংবিধানিক এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকাও আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।

এই রায় অযোধ্যার পর ভারতে আরেকটি মন্দির-মসজিদ বিবাদ নতুন করে উসকে দেবে বলেও অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন।

ভারতের সুপ্রাচীন শহর বারাণসী বা কাশী, যা এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংসদীয় এলাকাও বটে, সেখানে হিন্দুদের কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং মুসলিমদের জ্ঞানবাপী মসজিদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকশ’ বছর ধরে।

দুই ধর্মের এই দুই উপাসনালয়ের মাঝে অভিন্ন দেয়াল পর্যন্ত আছে। হিন্দুরা অনেকে বিশ্বাস করেন, মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হুকুমে দুই হাজার বছরের প্রাচীন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটা অংশ ভেঙে ফেলে মসজিদ নিমির্ত হয়েছিল। সেই জমি হিন্দুদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বছর দেড়েক আগে আদালতে পিটিশন দাখিল করেন আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রাস্তোগি।

রাস্তোগি বলেন, ‘পুরো জ্ঞানবাপী পরিসরজুড়েই আগে স্বয়ম্ভূ বিশ্বেশ্বর শিবের জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ছিল। ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে ১৬৬৯ সালে বাদশাহ আওরঙ্গজেব সেই মন্দির ভেঙে ফেলার ফরমান জারি করেন। তবে সেই ফরমানেও কোথাও মসজিদ তৈরির কথা বলা ছিল না।’

সিভিল কোর্ট তার দাবির প্রেক্ষিতে এখন রায় দিয়েছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি মসজিদ চত্ত্বরের ভেতর সমীক্ষা চালিয়ে দেখবে সেখানে আগে কোনও মন্দির ছিল কি না। আর সেই কমিটির দুই জন সদস্য হতে হবে মুসলিম। কিন্তু জ্ঞানবাপী মসজিদ কর্তৃপক্ষ আদালতের কাছ থেকে এ ধরনের রায় আশা করেননি।

সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদ খানের ভাষায়, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সার্ভে কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ এই পর্যায়ে সমীচিন হয়নি বলেই আমরা মনে করি। তবু আদালতের রায়কে আমরা সম্মান করবো। সামনে যে ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটিও নেবো।’

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরইয়াব জিলানি প্রশ্ন তুলেছেন, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি মামলা যখন এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে এবং হাইকোর্ট সেখানে তাদের রায় মুলতুবি রেখেছেন; সেখানে কীভাবে সিভিল জজ এই আদেশ দিতে পারেন?

তাছাড়া ভারতে ১৯৯১ সালে পাস হওয়া ধর্মীয় উপাসনালয় আইনও বলে, অযোধ্যা ছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। বারাণসী সিভিল কোর্টের নির্দেশ সেই রায়েরও লঙ্ঘন।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখার্জি বিবিসিকে বলেন, ‘ওই আইনটাতে পরিষ্কার লেখা আছে দেশের সব ধর্মস্থানে যেভাবে উপাসনা চলছে সেটাকে কেউ বদলাতে পারবে না। শুধু অযোধ্যায় রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ প্রাঙ্গণকে সেই আইনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা জানি, রাজনীতির অঙ্ক অন্য হিসেবে চলে। ফলে বিজেপি-আরএসএস বা তাদের সমর্থক উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো এটাকে রাজনীতিতে কীভাবে ব্যবহার করবে সেটা তো বলা যায় না।’

হায়দ্রাবাদের প্রভাবশালী এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-ও এই রায়ের বৈধতা নিয়ে সন্দিহান। তিনি টুইট করেছেন, ‘ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আগেও বহু হিন্দুত্ববাদী মিথ্যার ধাত্রী হিসেবে কাজ করেছে। তাদের কাছ থেকে কোনও নিরপেক্ষতা আশা করা যায় না।’

ভারতের সুপরিচিত ইসলামী পণ্ডিত আতিকুর রেহমান বলেন, ‘পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট ও জ্ঞানবাপী মসজিদ কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল এই রায় তার লঙ্ঘন। তা ছাড়া নানি পাল্কিওয়ালার মতো কিংবদন্তী আইন-বিশেষজ্ঞ অযোধ্যা মামলার শুনানিতেই বলেছিলেন আদালত আইনের প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাবে - প্রত্নতত্ত্ব বা ইতিহাসের ভেতর ঢোকার এখতিয়ার তাদের নেই। আর অযোধ্যায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নাটক তো আমরা এর মধ্যেই দেখে ফেলেছি।’

ভারতে রাম মন্দির আন্দোলনের সময় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর খুব জনপ্রিয় স্লোগান ছিল, ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়!’ যাতে প্রচ্ছন্ন হুঙ্কার ছিল, অযোধ্যায় মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির গড়ার পর তারা কাশী-মথুরাতেও মসজিদ দখলের অভিযানে নামবে। জ্ঞানবাপী মসজিদের ভেতরে সার্ভের নির্দেশে সেই হুমকি বাস্তবায়নের চেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

ভারতের নামী সম্পাদক ও সাংবাদিক শেখর গুপ্তা তার নিয়মিত কলামে লিখেছেন, ভারতে অযোধ্যা বিতর্কের আর পুনরাবৃত্তি হবে না, সেই আশাতেও পানি ঢেলে দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রাকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে কোর্টের এই বিতর্কিত রায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

/এমপি/
সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার