X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য

আদিবাসী ভোটব্যাংক হাতছাড়া হতে পারে তৃণমূলের

রক্তিম দাশ, কলকাতা
১৫ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২৫আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২৫

ভারতে প্রথম আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আসা নারী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অখিল গিরির বিতর্কিত মন্তব্যে ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজ। প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গলমহলসহ রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন আদিবাসী সমাজের মানুষরা। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক এফআইআর। খোদ জাতীয় তপশিলি কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সেজন্য উদ্যোগী হতে হয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা করলেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন বিতর্কের জেরে যথেষ্ট বিপাকে শাসকদল। রাজনৈতিক মহলের একাংশর মতে, এই ঘটনায় একুশের ফেরত আসা আদিবাসী ভোট ফের হাতছাড়া হতে পারে।

নন্দীগ্রামের একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী অখিল গিরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেন। অভিযোগ তারপরেই রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করেন, ‘আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে বাবা?’

শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে উল্টো বুমেরাং হয়ে গিয়েছেন মন্ত্রী। এমন মন্তব্য করে ফেলেছেন যা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতি শুধু নয়, দেশ উত্তাল হয়েছে। দেশজুড়ে আদিবাসী সম্প্রদায় তৃণমূলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানানো শুরু করেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরসহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও  আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। আদিবাসী ভোটব্যাংকের একটা বড় অংশ তৃণমূলের হাত থেকে বেরিয়ে বিজেপির ঝুলিতে যায়। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে চলে যায়। এরপরেই বিজেপি তথা এনডিএ যখন আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা দ্রৌপদী মুর্মুকে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করে দেয়, তখনই বোঝা যায় আসন্ন বেশকয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ও চব্বিশের লোকসভা ভোটে আগে কত বড় দাবার চাল দিয়েছে গেরুয়া শিবির। প্রত্যাশিতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন দ্রৌপদী। কিন্তু সেই নির্বাচনে দ্রৌপদীর পক্ষে ভোট দেয়নি তৃণমূল। উল্টো তৃণমূল নিজেই তাদের দলের যশবন্ত সিনাহাকে প্রার্থী করায় রাজ্যের আদিবাসী সমাজের আবেগে আঘাত লাগে। তারা ক্ষুব্ধ হন। এবার এই কাণ্ডে ফের আদিবাসী আবেগ উসকে গেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি বাঁকুড়ার খাতরায় আদিবাসী সমাজ থেকে আসা রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান আদিবাসীরা। বিক্ষোভের মুখে পড়ে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেটে ফিরতে হয় তৃণমূলের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীকে। জ্যোৎস্না মান্ডিকেও এই ঘটনার বিরোধিতা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে উল্লেখ করে অখিল গিরি যে মন্তব্য করেছেন ব্যক্তিগতভাবে আমি সমর্থন করি না। দলও সমর্থন করে না। অখিল গিরি যা মন্তব্য করেছেন তা তার ব্যক্তিগত মত। আমি একজন আদিবাসী নারী হয়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।’

ভারতের আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘অখিল গিরি যেভাবে কথা বলেছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল সরকার ও মন্ত্রীদের নারীদের প্রতি কোনও সম্মান নেই। এমনকী আদিবাসী সমাজের প্রতি তারা চূড়ান্ত অসম্মান প্রদর্শন করেছেন।’ 

যদিও এই ঘটনায় চাপে পড়ে অখিল গিরি বলেছেন, তিনি অনুতপ্ত। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন আদিবাসী সমাজের নেতারা। রীতিমত হুমকির সুরে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনার সবং মুলুকের সভাপতি মিঠুন মুর্মু বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে মন্ত্রী যে বিতর্কিত কথা বলেছেন এবং শারীরিক ভাষার প্রয়োগ করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। মুখ ফস্কে বাজে কথা বেরোতেই পারে, কিন্তু তিনি বারবার যে ভাষা রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ব্যবহার করেছেন তা সব আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে অপমান করেছে। রাষ্ট্রপতি কোনও দলের না, তিনি দেশের সর্বোচ্চ সম্মানের একজন নাগরিক। আমাদের দাবি, তৃণমূলের মন্ত্রী অখিল গিরিকে অবিলম্বে মন্ত্রীত্ব থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এই অপমানজনক ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি করেছি। সাত দিন অপেক্ষা করব, এর মধ্যে কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে সামিল হবো।’

আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের পক্ষ থেকে বিভূতি টুডু বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অখিল গিরির কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকে আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই।’ আদিবাসী সমাজের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের নেতৃত্বে দুলাল চাঁদ হাঁসদা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নামে প্রকাশ্য জনসভায় রাজ্যের মন্ত্রীর কুরুচিকর মন্তব্যে চরম অপমানিত হয়েছে আদিবাসী সমাজ। অখিল গিরির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে আমরা প্রতিবাদে নেমেছি।’

মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য উত্তরবঙ্গে আদিবাসী বিকাশ পরিষদও রাস্তায় নেমে পড়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এই মন্তব্যের প্রভাব পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহল তথা উত্তরবঙ্গের আদিবাসী সমাজে তার বড় প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। আর তা হলে নিঃসন্দেহে সুবিধা পাবে বিজেপি। এমনিতেই শিক্ষাসহ একধিক দুর্নীতি, কয়লা আর গরুপাচারের ঘটনায় তৃণমূলের প্রভাবশালী মন্ত্রী-নেতাদের জেল যাত্রা ঘটছে। এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন অখিল গিরি। যা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। অযাচিত মন্তব্য করে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ায় দলের অভ্যন্তরে এখন প্রবল সমলোচনার মুখে তিনি। তড়িঘড়ি ড্যামেজ কনট্রোলে নেমেছে তৃণমূল, কিন্তু এই প্রচেষ্টা কতটা কাজে আসবে তা বোঝা যাবে আদিবাসী অঞ্চলগুলোর পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল দেখে।

/এএ/
সম্পর্কিত
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা