X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনি বন্ড থেকেই সর্বোচ্চ আয় তৃণমূলের

রক্তিম দাশ, কলকাতা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩৪আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩৪

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনি বন্ড স্কিমটিকে অসাংবিধানিক বলে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ সালে তৃণমূল এই আর্থিক বছরে যে আয় করেছে, তার ৯৭.৪৯ শতাংশ এসেছে নির্বাচনি বন্ড থেকে। শতাংশের হিসাবে যা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ছয় বছর ধরে দেশে নির্বাচনি বন্ড চালু রয়েছে। এই বন্ড চালু হওয়ার পর যে অর্থ উঠেছে তার অর্ধেকের বেশি গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির কাছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি পেয়েছে ৬ হাজার ৫৬৫ কোটি রুপি। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস পেয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি রুপি। আর তৃতীয় স্থানে থাকে তৃণমূল পেয়েছে ১ হাজার ৯৩ কোটি রুপি।

২০২২-২৩ সালে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরে নির্বাচনি বন্ড থেকে বিজেপির আয় (৫৪.৮২ শতাংশ) ১ হাজার ২৯৪ কোটি রুপির বেশি। কংগ্রেসের আয় (৩৭.৮০ শতাংশ) ১৭১ কোটির বেশি আয় এসেছে নির্বাচনি বন্ডের মাধ্যমে। আর তৃণমূল ওই আর্থিক বছরে যে আয় করেছে, তার ৯৭.৪৯ শতাংশ এসেছে নির্বাচনি বন্ড থেকে। ওই বছরে তাদের মোট আয় দেখানো হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৪৫ লাখ রুপির বেশি। এর মধ্যে নির্বাচনি বন্ড থেকে এসেছে ৩২৫ কোটির বেশি। এই হার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের (এডিআর) তথ্যে বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে বার্ষিক অডিট অ্যাকাউন্টগুলোর হিসাবে তৃণমূল প্রথম বছরে ২০১৭-১৮ সালে নির্বাচনি বন্ডের মাধ্যমে কিছুই পায়নি, তারপর ২০১৮-১৯ সালে ৯৭ কোটি রুপি। ২০১৯-২০ সালে ১০০ কোটি রুপি, ২০২০-২১ সালে ৪২ কোটি, ২০২১-২২ সালে ৫২৮ কোটি রুপি পেয়েছে।

ওই সংস্থারই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ সালে ৩২৫ কোটি রুপি পেয়েছে নির্বাচনি বন্ডের মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশন দলগুলোর ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করতে পারেনি। তবে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৮-র মার্চ থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনি বন্ড তহবিলে মোট জমা পড়েছে ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি রুপি।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনি বন্ড স্কিমটিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে নির্বাচনি বন্ড ইস্যু করা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি ২০১৯-এর ১২ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত কেনা নির্বাচনি বন্ডের হিসাব বিশদে জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্বাচনি বন্ড বা ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে যেকোনও ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা কোম্পানি দেশের যেকোনও রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে পারেন। বিভিন্ন দামে এই নির্বাচনি বন্ড বাজারে রয়েছে। স্টেট ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা থেকে তা কেনার সুযোগ রয়েছে। ন্যূনতম এক হাজার রুপি, ১০ হাজার, এক লাখ, ১০ লাখ এবং এক কোটি রুপি মূল্যের নির্বাচনি বন্ড কেনার সুযোগ রয়েছে। এই বন্ড কে বা কারা কিনছেন তার পরিচয় সম্পূর্ণভাবে গোপন রাখার কথা বলা হয়েছে।

২০১৭ সালে এই বন্ড নিয়ে আসা হয়, তবে ব্যবহার ২০১৮ সাল থেকে করা হচ্ছে। কোনও দল যদি এই বন্ড পায় তা ১৫ দিনের মধ্যেই ভাঙাতে পারবে। এই বন্ড কবে কেনা যাবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেমন জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই এবং অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে এই বন্ড কেনার সুযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, যে বছর লোকসভা নির্বাচন রয়েছে সেই বছর সরকার এই বন্ড কেনার জন্য অতিরিক্ত আরও ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়। রিপ্রেজেনটেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫১ সেকশন ২৯ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনি বন্ডের সুবিধা পাবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে অনেক বিরোধী দলই একে স্বাগত জানিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে তৃণমূলও। দলীয় সাংসদ সাকেত গোখলে বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের গত পাঁচ বছরের মধ্যে সব থেকে ঐতিহাসিক রায়।’ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে হাজার কোটি রুপি ফেরত দিতে হবে তৃণমূলকে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনি বন্ড বাতিল করে অর্থ ফেরত দিতে বলেছে। এক হাজার কোটি রুপি তৃণমূলের অ্যাকাউন্টে রয়েছে। সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে। আগে নির্বাচনি বন্ডে তৃণমূলের আয় ছিল ৮৫৬ কোটি রুপি। তা এখন বেড়ে হাজার কোটি হয়েছে।’

অন্যদিকে, এডিআর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে তৃণমূলের সম্পদের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। সেই বৃদ্ধির হার ১৫১.৭০ শতাংশ। এডিআরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ঘোষিত অর্থবর্ষ থেকে ১৭ কোটি টাকা পেয়েছিল তৃণমূল। সেখানে অজানা উৎস থেকে তৃণমূল ৫২৮.০৯৩ কোটি রুপি পেয়েছিল। অর্থাৎ মোট যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছিল তৃণমূল, সেটার ৯৬.৭৭ শতাংশই এসেছিল অজ্ঞাত উৎস থেকে। যা ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জাতীয় দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ হার। শতাংশের নিরিখে অজ্ঞাত উৎস থেকে সর্বাধিক আয়ের তালিকার জাতীয় দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যেখানে কংগ্রেসের ঘরে মোট ৫৪১.২৭৫ কোটি রুপি পেয়েছিল, যেখানে শুধু অজ্ঞাত সূত্র থেকে এসেছিল ৩৮৮.৮৩৯৭ কোটি রুপি। অর্থাৎ কংগ্রেসের ঝুলিতে আসা ৭১.৮৪ শতাংশ অর্থই অজ্ঞাত উৎস থেকে পাওয়া। জাতীয় দলগুলোর এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মোট এসেছিল ১ হাজার ৯১৭.১২ কোটি রুপি। এর মধ্যে অজ্ঞাত উৎস থেকে ১ হাজার ১৬১.০৪৮৪ কোটি রুপি পেয়েছিল দলটি। যা অঙ্কের বিচারে বাকি জাতীয় দলগুলো থেকে অনেকটা বেশি হলেও শতাংশের হিসাবে তিন নম্বরে ছিল বিজেপি।

/এএ/
সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
পাকিস্তানে বৃষ্টিতে মৃত্যু ২২
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ