ভারতে ফসলের ন্যূনতম মূল্য বিষয়ে আইন প্রণেয়নের দাবিতে আনন্দোলন করছেন হাজার হাজার কৃষক। এই দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) আবার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা দিল্লিতে জড়ো হয়েছেন। এর আগে একই দাবি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লি অবরোধ করেছিলেন কৃষকরা। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
কৃষি যন্ত্রপাতি বা গাড়ি ব্যবহার না করার শর্তে কৃষকদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পুলিশের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে তাদের লাঠি বা তলোয়ার বহনেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এরইপ্রেক্ষিতে এবার আনন্দোলনে যাওয়ার পথে ট্রাক্টর ব্যবহার পরিহার করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় কৃষি কাজে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তারা। ফসলের নির্ধারিত মূল্যের গুরুত্ব নিয়ে তারা বলেন, ফসলের ন্যায্য মূল্য ছাড়া বাজারে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
ইউনাইটেড ফার্মার্স ফ্রন্টের আয়োজনে রামলীলা ময়দানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাঠটি মূলত ধর্মীয় সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, পাঁচ হাজার জনের বেশি মানুষ না আনার শর্তে এই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
এই সমাবেশ এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন ভারতের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। আশা করা হচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনেও টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার চিন্তা-ভাবনা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন দল।
এদিকে, ভারতের একটি প্রভাবশালী ভোটিং ব্লক কৃষক। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই পেশার।
২০২১ সালের বিক্ষোভের সময় ঋণ মওকুফ করার এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা আইনি মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন কৃষকরা। এবার সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন তারা। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত করা বেশ কয়েকটি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শাম্ভুতে আনন্দোলন করে আসছেন হাজার হাজার কৃষক। দিল্লি অভিমুখে আসা কৃষকদের বাধা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারীদের প্রবেশ প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন ব্যারিকেড দিয়ে তাদের বাঁধা দেওয়া হয়। সেই বাঁধা অতিক্রম করার জন্য বুলডোজার নিয়ে এসেছিলেন তারা।
আনন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি একজন কৃষক নিহত হয়েছেন। সেসময় ফসলের দাম নির্ধারিত না হওয়ায় আবার আনন্দোলন শুরু করেছেন তারা।
কয়েক সপ্তাহ আগে, ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে কয়েক হাজার কৃষক ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই আনন্দোলনে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা, কৃষিঋণ মওকুফ এবং স্বামীনাথন কমিশনের সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়নসহ একাধিক দাবি করেছিলেন।
ওই আন্দোলনের প্রভাব উল্লেখ করে হরিয়ানার পুলিশ জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের আক্রমণে ১২ জন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। তখন কৃষকরা তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করে দেন। কারণ তাদের ইউনিয়নগুলো সরকারি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় করেন।
সেই আলোচনায় ভুট্টা, শস্যদানা ও তুলাসহ নির্দিষ্ট কিছু ফসলের নির্ধারিত মূল্যের পাঁচ বছরের চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তারা।