X
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হিন্দুত্ববাদের মন্ত্রে দক্ষিণ ভারত জয় করতে পারবেন মোদি?

সুলতানা স্বাতী
০৯ মে ২০২৪, ২৩:০০আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ২৩:০০

ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের সাত দফার তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৩ মে। নির্বাচনি প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘আব কি বার চারশো পার’ করার ডাক দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে চার শতাধিক আসনে জয় পাবে। কিন্তু ভোটাররা তার সেই ডাকে কতটা সাড়া দেবেন? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চারশো পার এর লক্ষ্য পূরণের ম্যাজিক আর মোদির হাতে নেই। কারণ, এত আসন পেতে হলে বিজেপিকে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে জয় পেতে হবে। কিন্তু এসব রাজ্যে মোদির হিন্দুত্ববাদ কিংবা মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা খুব একটা কাজে আসছে না।

গত ১০ বছর ধরে ভারতে ক্ষমতায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এই দশ বছরে পুরো ভারতজুড়ে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর এই হিন্দুত্ববাদ বলতে এখন ব্যবহারিক রাজনীতিতে যা দাঁড়াচ্ছে তা হলো, মুসলিমবিদ্বেষ। বিজেপির হিন্দুত্ববাদ আর মুসলিমবিদ্বেষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সমার্থক।

তাই তো মোদি তার নির্বাচনি জনসভায় বারবার টেনে আনছেন ধর্মকে। মূলত তার প্রতিটি ভাষণেই নিশানায় থেকেছে কংগ্রেস ও মুসলিমরা। ভারতের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪ ভাগ হলেন মুসলমান। আর এই মুসলমানেরা সাধারণত ভোট দেন কংগ্রেসকে। তাই কংগ্রেসকে ঘায়েল করতেও ধর্মকে ব্যবহার করছেন মোদি। যদিও কংগ্রেসের অবস্থা এবার এতটাই নাজুক যে বিজেপির সামনে ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেক বিশ্লেষক। তারপরও সম্প্রতি রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের দুটি জনসভায় কংগ্রেসকে ঘায়েল করতে প্রকাশ্যেই মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন মোদি।

অবশ্য শুরুতে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গিয়ে হিন্দু অথবা মুসলমান শব্দগুলো ব্যবহার করেননি নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এখন তার বক্তব্যে মুসলিম বিদ্বেষ স্পষ্ট। যেমন- রাজস্থানে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের বেশি বেশি ছেলেমেয়ে আছে’ বিরোধী কংগ্রেস তাদের মধ্যেই দেশের ধনসম্পদ ভাগবাটোয়ারা করে দিতে চায়। আরেকটি জনসভায় তিনি বলেন, কংগ্রেস ‘আপনাদের (হিন্দুদের) সম্পত্তি’ ছিনিয়ে নিয়ে ‘নির্দিষ্ট মানুষদের মধ্যে বিলি করতে চায়’। মানে মুসলিমদের মাঝে! 

হিন্দুত্ববাদ কাজে আসছে না দক্ষিণ ভারতে! ছবি: এপি।

এসব বক্তব্যে কংগ্রেসকে ঘায়েল করতে গিয়ে তিনি মূলত মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষকেই আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। আগে যা স্পষ্ট ছিল না। এখন তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

অবশ্য মোদি প্রকাশে দাবি করছেন যে, তিনি ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী না। 

তাহলে কি তিনি আসলে ভয় পাচ্ছেন? তার আত্মবিশ্বাসে কি চিড় ধরছে? যার কারণে তিনি মরিয়া হয়ে আরও বেশি বেশি মুসলিম-বিদ্বেষী ভাষণ দিচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, মোদির আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। কারণ বিজেপির হিন্দুত্ববাদের মন্ত্র দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে  প্রভাব ফেলতে পারছে না।

ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বাস দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য- তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা ও তেলেঙ্গানায় এবং কেন্দ্রশাসিত পদুচেরি ও লাক্ষাদ্বীপে। এই অঞ্চলগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। জিডিপিতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর অবদান ৩০ শতাংশের বেশি।

পাঁচ রাজ্যে মোট ১৩০ টি আসনে গতবার বিজেপির দখলে ছিল মাত্র ২৯ টি আসন। এর মধ্যে ২৫ টিই আবার কর্নাটকে। বাকি চারটি তেলেঙ্গানায়।

মোদির চারশো পার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিজেপিকে দক্ষিণ ভারতে আরও বেশি আসন পেতে হবে; যা মূলত অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেন দক্ষিণ ভারতে মোদির হিন্দুত্ববাদ কাজ করছে না?

চেন্নাইয়ে মোদি বিরোধী প্রচারণা স্থানীয় দলগুলোর। ছবি: এপি।

এর জবাবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের দক্ষিণ আর উত্তরভাগের মধ্যে বিপুল সাংস্কৃতিক ব্যবধান রয়েছে। প্রধানত উত্তর ভারতের ও হিন্দিভাষীদের দল হিসেবে পরিচিত বিজেপি দক্ষিণে এসে সেই বৈচিত্র্যের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেরালাতে গরুর মাংস খুবই জনপ্রিয় খাবার। তামিলনাডুতেও গরুর মাংস নিষিদ্ধ নয়। অথচ দেশের অপর অঞ্চলগুলোতে গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে বিজেপির উগ্র ও মারমুখী অবস্থান ওই রাজ্যগুলোতে দলটি সম্পর্কে উচ্চ ধারণা তৈরি করতে পারেনি।

তামিল সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার মাথুর সত্যা বলেছেন, বিজেপির বৈষম্য প্রতিফলিত হয়েছে খাদ্য-শিল্প-সংস্কৃতির মতো ভাষার ক্ষেত্রেও। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছে, তাতে সংস্কৃত ভাষার কথা অন্তত ২০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সারাদেশে সংস্কৃতে কথা বলেন বড়জোর ১৪ হাজার মানুষ।অথচ কোটি কোটি মানুষের মুখের ভাষা তামিল বা মালায়লাম কিন্তু শিক্ষানীতিতে কোনও গুরুত্বই পায়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

হায়দরাবাদ আইআইটি-র অধ্যাপক সৌম্য জানা বলেছেন, বিজেপিকে এই সব কারণেই দক্ষিণ ভারতে এলিয়েন বা বাইরে থেকে আসা বিজাতীয় দল হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই পুরনো বা স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো প্রাধান্য পেয়ে আসছে।

সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও তামিলনাডুর প্রবীণ রাজনীতিক জি রামাকৃষ্ণন বলেছেন, দক্ষিণ ভারতের মানুষ হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে নন, তবে তারা হিন্দুত্ববাদের বিরোধী। তাই তো এখানে মোদির হিন্দুত্ববাদ কাজ করছেনা।

সূত্র: বিবিসি ও আলজাজিরা

/এস/
সম্পর্কিত
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকার স্থগিতের নির্দেশ দিলো যুক্তরাষ্ট্র
সৌদি আরবে ঈদুল আজহা ৬ জুন
সরাসরি আলোচনায় সিরিয়া ও ইসরায়েল
সর্বশেষ খবর
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডিএমপির প্রতিনিধিদল
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে ডিএমপির প্রতিনিধিদল
২০৩১ সাল পর্যন্ত ইয়ামাল বার্সেলোনার
২০৩১ সাল পর্যন্ত ইয়ামাল বার্সেলোনার
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের খালাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের খালাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
পান্তের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দারুণ জয়ে প্রথম কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরু
পান্তের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দারুণ জয়ে প্রথম কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরু
সর্বাধিক পঠিত
সৌদি আরব থেকে উট এনে খামারে লালন-পালন, প্রতিটির দাম ৩০-৩২ লাখ
সৌদি আরব থেকে উট এনে খামারে লালন-পালন, প্রতিটির দাম ৩০-৩২ লাখ
ঈদের আগেই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দেশ
ঈদের আগেই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দেশ
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে বাইরে ২ ছাত্র সংগঠনের অবস্থান
সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে বাইরে ২ ছাত্র সংগঠনের অবস্থান