ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি নারী মাহাসা আমিনির মৃত্যুর ১ বছর পার। হিজাব না পরায় পোশকবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আটক হয়েছিলেন তিনি। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মৃতুবার্ষিকীতে তার বাবা আমজাদ আমিনিকেও আটক করে পুলিশ। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছে পুলিশ।
মাহাসার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে যে কোনও সমাবেশের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল দেশটির সরকার। ধারণা করা হচ্ছিল, রাজধানী তেহরানে বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হতে পারে।
কুর্দিস্তান মানবাধিকার বিষয়ক নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, তার বাবাকে কোনও কারণ ছাড়াই আটক করেছিল পুলিশ। এর আগে, সামাজিক মাধ্যমে অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানায়, পশ্চিম ইরানের সাকেজে আমিনির বাড়ির চারপাশে নিরাপত্তা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
আমিনির বাবা-মা সপ্তাহের শুরুতে বিবৃতিতে বলেছিলেন, সরকারের সতর্কতা সত্ত্বেও সাকেজের যেখানে তাদের ২২ বছর বয়সী কন্যা সমাহিত হয়েছে সেখানে ধর্মীয়ভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, মৃত্যুবার্ষিকীতে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় ইরানের কুর্দি অঞ্চলে অতিরিক্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে তেহরানের উপর চাপ বাড়িয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা। কিছু ইরানি কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা এবং যুক্তরাজ্যসহ একাধিক পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনিকে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেফতার করে। ইরানের পশ্চিমাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল,তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি। পুলিশি হেফাজতে মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। তার পরিবার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন শুরু থেকেই দাবি করছে, গ্রেফতারের সময় মাহসার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠির আঘাত করে পুলিশ। সেদিন সন্ধ্যা থেকে ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পরে বিক্ষোভ। মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে নারীরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলে ইরানে। নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলা বিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।
এ ঘটনার প্রতিবাদসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কয়েকজন নারীকে ফাঁসি ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে দেশটির বিচারবিভাগ। হিজাববিরোধী আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।