গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে বিমান হামলার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। রবিবার দিবাগত রাতে চালানো হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ ছিলেন বেসামরিক। উদ্বাস্তুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এই হামলা চালানো হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার (২৭ মে) ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসের দুই সিনিয়র কর্মকর্তাকে নিশানা করে এই হামলা চালিয়েছে। তবে বিমান হামলায় রাফাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় তেল আল-সুলতানে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। এখানে হাজারো বেসামরিক ফিলিস্তিনি তাঁবুতে বসবাস করছেন। বোমার আঘাতে বেশ কয়েকটি তাঁবুতে আগুন লেগেছে।
সোমবার দুপুরে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬৫ জন।
পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও মিসর সোমবার সকালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে উদ্বাস্তুদের নিশানা করার অভিযোগ তুলেছে।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সব আন্তর্জাতিক আইনি প্রস্তাবের জন্য চ্যালেঞ্জ।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে উদ্বাস্তু মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিকল্পিত বোমাবর্ষণের অভিযোগ করেছে। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অনুসারে রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলও আইসিজের নির্দেশ মেনে চলতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা সোমবার হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আশ্রয় খুঁজতে থাকা পরিবারগুলোর ওপর আরও হামলা সম্পর্কে রাফাহ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা ভয়ংকর। শিশু ও নারীসহ ব্যাপক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। গাজা এখন পৃথিবীর নরক। গত রাতের দৃশ্য এর পক্ষে আরেকটি প্রমাণ।
কাতার সতর্ক করে বলেছে, এই হামলার কূটনৈতিক পরিণতি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সমঝোতার আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ইতালি বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলা এখন আর ন্যায়সংগত নয়। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এটিই দেশটির সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রসেত্তো বলেছেন, সেখানে ক্রমবর্ধমান কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাফাহতে নিরীহ ফিলিস্তিনি পুরুষ, নারী ও শিশুদের অধিকারের কথা বিবেচনা না করে তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এদের সঙ্গে হামাসের কোনও সম্পর্ক নেই এবং এমন হামলা আর ন্যায়সংগত হতে পারে না। আমরা হতাশার সঙ্গে পরিস্থিতি দেখছি।
এক বিবৃতিতে রাফাহতে জাতিসংঘ সংস্থার গুদামের কাছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুগুলো লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।