ইসরায়েলের ওপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান হামলা চালাতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সরকার ও দুই মার্কিন কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তারা এই হামলার প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন জন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে। তবে আরেক কর্মকর্তা জানান, হামলার প্রকৃতি এখনও পরিষ্কার নয়।
এর আগে, একজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ইরান আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে, বিশেষ করে রাতের বেলায়, ইসরায়েলের ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে। তিনি জানান, ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে।
এপ্রিল মাসে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইসরায়েল ও দেশটির মিত্ররা সেই হামলা প্রায় পুরোপুরি ব্যর্থ করেছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ইসরায়েল এখনও ইরান থেকে কোনও আকাশ প্রতিরক্ষা হুমকি চিহ্নিত করেনি। তবে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধবিমানগুলো যেকোনও হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, ইরান থেকে ইসরায়েলে আক্রমণ হলে তার পরিণতি মারাত্মক হবে। এর বেশি কিছু বলছি না।
এই ধরনের হামলা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছায়াযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সংঘাত চলছে। ইরান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের প্রভাব খর্ব, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস এবং সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের গাজা ও লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে। এই উত্তেজনা আরও বাড়ে যখন ইসরায়েল গত মাসে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে এবং দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে সামরিক অভিযান চালায়।
ইরান হিজবুল্লাহকে সহায়তা করার চাপে রয়েছে। তবে তারা ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণের ভয়েও তটস্থ। তাদের আশঙ্কা, ইসরায়েল পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারে কিংবা শীর্ষ ইরানি নেতাদের হত্যা করতে পারে।
তিন জন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের পরিকল্পিত হামলার লক্ষ্য তিনটি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং তেল আবিবের উত্তরে অবস্থিত একটি গোয়েন্দা সদর দফতর। মঙ্গলবার দুপুরে এই সদর দফতর খালি করে ফেলা হয়েছে।
এর আগে এপ্রিল মাসে ইরান ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ওই সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ায় থাকা ইরানি শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করেছিল। তখন উভয় পক্ষই বড় ধরনের যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেশি। ইরানের নতুন হামলার পর ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করতে প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসরায়েলের মিত্ররা এপ্রিলের হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করতে সহায়তা করেছিল। ফলে ইসরায়েলের অবকাঠামোয় সীমিত ক্ষতি হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে বেড়েছে মার্কিন যুদ্ধবিমান
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকম জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত তিনটি যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রনের মধ্যে একটি ইতোমধ্যে পৌঁছেছে। পেন্টাগন সোমবার জানিয়েছে যে তারা বিমানগুলো নতুন করে মোতায়েন করছে। আগে থেকেই সেখানে থাকা যুদ্ধবিমান বহরের সঙ্গে যোগ দেবে।