লাখো গাজাবাসী আবারও বাস্তুচ্যুত। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণের শেষ আশ্রয়স্থল রাফাহ শহরে প্রবেশ করে নতুন ঘোষিত ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ দখল শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৯৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গাজা সিটির শেখজাইয়া উপশহরে ভোরের হামলায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজা সিটির একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। স্কুলটি বাস্তুচ্যুত পরিবারদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
রাফাহ থেকে পালিয়ে আসা এক সন্তানের জনক রয়টার্সকে বলেন, রাফাহ এখন ধ্বংসস্তূপ। যা কিছু দাঁড়িয়ে ছিল, সেগুলোও এখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় নতুন করে বাস্তুচ্যুতি
গাজাবাসীরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলের প্রকৃত উদ্দেশ্য গাজার উত্তর ও দক্ষিণের এলাকাগুলো স্থায়ীভাবে জনশূন্য করে ফেলা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনারা মোরাগ অক্ষ নামে একটি এলাকা দখল করছে, যা রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী একটি পরিত্যক্ত ইসরায়েলি বসতি ছিল।
গাজাবাসীরা বলছেন, ইসরায়েল গাজার শেষ কৃষিজমি ও পানির অবকাঠামো দখল করতে চাইছে। গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার জন্য সব ধরনের পণ্য প্রবেশে অবরোধ জারি করেছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মানবিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করতে বাধ্য করছে।
স্কুলে হামলা, বেসামরিক হতাহত
গাজা সিটির দারুল আরকাম স্কুলে হামলার ঘটনায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনটি মিসাইল স্কুল ভবনে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা একটি কমান্ড সেন্টার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা দিয়ে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা পরিকল্পনা করত।
উত্তর গাজার শেখজাইয়ায় ইসরায়েলের নির্দেশে শত শত বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। উম্মু আয়েদ বারদা বলেন, আমি মরতে চাই। আমাদের মেরে ফেলুক, এই জীবন থেকে মুক্তি দিক। আমরা বাঁচতে পারছি না, মৃতের মতো জীবন কাটাচ্ছি।
রাফাহ বাসিন্দা বাসেম বলেন, অনেকে কোথায় যাবে না বলে রয়ে গেছে। আমরা ভয় পাচ্ছি, তাদের হয়তো হত্যা করা হবে, না হয় আটক করা হবে।
জিম্মি সংকট ও যুদ্ধের ভবিষ্যৎ
ইসরায়েলের লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা, কিন্তু কোনও বিকল্প প্রশাসন গঠনের চেষ্টা না করায় হামাস আবারও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে। হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে মৃত ও জীবিত উভয়ই আছে। হামাস বলছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হলে তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে না।
গত অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ নিহত ও ২৫০ জনের বেশি জিম্মি করা হয়েছিল। জবাবে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।