X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরীই আইএস-বাংলাদেশের আবু ইব্রাহিম!

ফাহমিদা উর্ণি
০৮ জুন ২০১৬, ১২:০২আপডেট : ০৮ জুন ২০১৬, ১৮:২৮
image

আইএস গত এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-এর মুখপাত্র বলে পরিচিত দাবিক ম্যাগাজিনে শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামের এক ব্যক্তিকে আইএসের বাংলাদেশি শাখার প্রধান বলে পরিচিত করা হয়। এবার সেই হানিফ সম্পর্কেই নতুন তথ্য দিয়েছে কানাডীয় সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পোস্ট। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু ইব্রাহিম আল হানিফের প্রকৃত নাম তামিম চৌধুরী। তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক। এক সময় অন্তারিও উইন্ডসর শহরের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।
গত এপ্রিলে দাবিক-এর সর্বশেষ সংস্করণের একটা বড় জায়গা জুড়ে আলোচিত হয় বাংলাদেশে সংগঠনটির তৎপরতার প্রসঙ্গ। শেষ কয়েকটি পাতায় শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামের একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। দাবিক-এর দাবি অনুযায়ী হানিফই বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা পরিচালনা করছেন।
ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের নামে চলছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলিকে হত্যার দায় স্বীকার করেও আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আর এ আইএস-এর আঞ্চলিক শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামিম চৌধুরী। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে আইএস।

যেভাবে জানা গেল তামিমের পরিচয়

তামিম চৌধুরী সম্পর্কে জানতে সংবাদমাধ্যমটি ডালহাউসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিলেন্স গবেষণা কেন্দ্রের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো অধ্যাপক অমরনাথ অমরাসিংগামের শরণাপন্ন হয়। অমরনাথ বলেন, ‘তিনি (তামিম) উইন্ডসরে থাকতেন। যারা তাকে চিনতেন তারা বলেছেন উনি শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।’

বিদেশি যোদ্ধাদের ওপর গবেষণা করছেন অমরনাথ। তিনি জানান, কানাডীয় পুলিশের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে তামিম বাংলাদেশে ফিরে যান বলে জানতে পেরেছেন। তামিম বাংলাদেশে আইএসের আঞ্চলিক শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও তিনি শুনেছেন।

বৈরুত ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি খবরকে উদ্ধৃত করে ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তামিম চৌধুরী এখন আলিয়াস শায়েখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ নামে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দাবিক ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংস্করণে তাকে আইএসের বাংলাদেশ শাখার ‘আমির’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়। গত এপ্রিলে দাবিক ম্যাগাজিনে হানিফ ওরফে তামিম চৌধুরী সহিংস বিদ্বেষী হিসেবে হাজির হন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘নোংরা ও গরু পূজাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। যারা ইসলামের সশস্ত্র সংস্করণের সঙ্গে যোগ দেবেন না তাদেরকে হত্যারও হুমকি দেন হানিফ। 

আইএসের দাবি, এরা সবাই তাদের সংগঠনের বাংলাদেশি সদস্য
সাক্ষাৎকারে কী বলেছিলেন হানিফ/তামিম চৌধুরী

সে সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডিএনএ–তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার সরকারকে ভারতের প্রতি অনুগত বলে উল্লেখ করেছেন হানিফ। তিনি বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের মুসলমানরা বিশেষত বার্মার মুসলমানরা বৌদ্ধবাদ ও হিন্দুত্ববাদের ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার।’ তিনি জানান, আইএস বাংলাদেশে জিহাদি কার্যক্রম শক্তিশালী করার পর তারা বার্মায় তৎপরতা শুরু করবেন। একইসময়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাজফিডের খবরে বলা হয়, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন জোটের অংশ থাকার পরও কেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ‘আল্লাহর আইন’ প্রতিষ্ঠা করতে পারল না, তার সমালোচনাও করা হয় সাক্ষাৎকারে। আবু হানিফ মনে করেন, বাংলাদেশে জিহাদিদের একটি শক্ত ঘাঁটি তৈরি করা গেলে পশ্চিম ও পূর্ব বাংলা, দুই দিক থেকে ভারতের অভ্যন্তরে হামলা চালানো যাবে।

ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুযারি থেকে বাংলাদেশে উগ্রপন্থীরা প্রায় ৪০ জনকে হত্যা করেছেন। এর মধ্যে কিছু কিছু হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস। সর্বশেষ হিন্দু পুরোহিতকে হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস। জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আইএস’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খেলাফতের সেনারা এক পুরোহিতকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি নিরাপত্তা অভিযান চালিয়েছে। বাংলাদেশকে মুশরিক ও ধর্মভ্রষ্টদের নির্মূল করতে মুজাহিদীন চাপাতির ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।’

দাবিক এর সর্বশেষ সংস্করণ
কানাডা সরকারের পরিকল্পনা

ন্যাশনাল পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স সার্ভিসের পরিচালক জানিয়েছেন, বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ চালাতে কানাডার প্রায় ১৮০ জন উগ্রপন্থী দেশ ছেড়েছেন। এছাড়া ৬০ জন কানাডীয় দেশে ফিরেছেন এবং কানাডা ছাড়তে চাওয়া আরও বেশ কয়েকজনকে পুলিশ ঠেকাতে পেরেছে।

কানাডার জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী রালফ গুডেল চলতি সপ্তাহে এক ব্লগ পোস্টে তার জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্ডা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘যারা কানাডা ছাড়ছেন শিগগিরই তাদের ন্যুনতম পাসপোর্ট তথ্য সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিরাপত্তাজনিত ফাঁক বন্ধ করা যাবে।’

যারা বিমানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হবে কিংবা যারা বিদেশে গিয়ে সন্ত্রাসবাদে জড়াবে বলে মনে হবে তাদেরকে নো ফ্লাই লিস্টে রাখারও পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি। অর্থাৎ যাদের সন্দেহ করা হবে তাদেরকে বিমানে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। সূত্র: ন্যাশনাল পোস্ট, বাজফিড, ডিএনএ

আরও পড়ুন: 
কে এই আবু জান্দাল আল-বাঙালি
বাংলাদেশে আইএস-এর নতুন ফ্রন্ট, পরিচালনায় আবু ইব্রাহিম


পরবর্তী নিশানা বাংলাদেশ: আইএস


/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
ক্যানারি দ্বীপে নৌকাডুবি, ৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
সর্বশেষ খবর
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ