যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোর সমকামী পালস নাইটক্লাবে হামলাকারী ওমর মতিন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ছাড়াও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি অনুগত ছিলেন বলে দাবি করেছে এফবিআই। গোয়েন্দা সংস্থাটির পরিচালক জেমস কোমি সোমবার (১৩ জুন) সাংবাদিকদের জানান, তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
কোমি জানান, আফগান বংশোদ্ভূত ওমর মতিন কেবল আইএস-এর প্রতিই অনুগত ছিলেন না। বরং আইএস-এর সঙ্গে মতাদর্শিক বিরোধপূর্ণ গোষ্ঠীর প্রতিও তিনি অনুগত ছিলেন। তিনি বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলাকারী সারনেভ ভাইদের প্রতিও সংহতি জানিয়েছেন, আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর আল-নুসরা ফ্রন্ট এবং আইএস পরস্পর বিরোধী মতাদর্শের অনুসারী।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, এফবিআই-এর বক্তব্য অনুযায়ী, মতিন একজন বিভ্রান্তিকর মতাদর্শের মানুষ ছিলেন। তিনি ধর্মের নামে গড়ে ওঠা সকল জঙ্গি গোষ্ঠীকেই সমর্থন করতেন।
এফবিআই কর্মকর্তা কোমি মনে করেন, গত কয়েক বছর ধরে ওমর মতিনের মধ্যে ‘সুস্পষ্ট জঙ্গি লক্ষণ’ দেখা গিয়েছিল। তিনি আরও জানান, মতিন আল-কায়েদা এবং হিজবুল্লাহকেও সমর্থন করতেন।
এর আগে এফবিআই-এর অরল্যান্ডো অফিসের কর্মকর্তা রন হপার জানান, ওমর মতিন এর আগে দু’বার তদন্তানাধীন ছিলেন। আর দু’বারই তাকে নির্দোষ বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালে প্রথমবার যখন তদন্ত করা হয়, তখন অভিযোগ ছিল, তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে।
একই বছর এফবিআই কর্মকর্তারা ওমরের সঙ্গে মনির মোহাম্মদ আবুসালহার সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। মনির মোহাম্মদ আবুসালহা হলেন প্রথম মার্কিন নাগরিক, যিনি সিরিয়ায় বোমা হামলা চালান। তবে আবুসালহার সঙ্গে ওমর মতিনের কোনও বিশেষ যোগাযোগ এফবিআই-এর নজরে আসেনি বলে জানান হপার। উল্লেখ্য, আবুসালহাও ফোর্ট পিয়ার্সে বসবাস করতেন। যা ওমর মতিনেরও বাসস্থান।
উল্লেখ্য, শনিবার দিনগত রাত ২টায় ওই হামলা চালানোর সময় মতিন নিজেই জরুরি সাহায্যের জন্য দেওয়া ৯১১ নম্বরে ফোন করে হামলার কথা জানিয়ে আইএস-এর প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
ওমর মতিনের এক বন্ধু জানিয়েছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের পর ওমর সৌদি আরবে যান কিছু সময়ের জন্য। তখন থেকেই তিনি ধর্মের প্রতি আরও আকৃষ্ট হন। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) অথবা অন্য কোনও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রতি ওমরের সহানুভূতি ছিল, এমনটা ওমরের ওই বন্ধু নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে আইএস ওমরকে তাদের যোদ্ধা বলে দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, নাইটক্লাবে চালানো ওই সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে শুরুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে ৪৯ বলা হয়।আরও ৫৩ জন আহত হয়েছে ওই ঘটনায়। শনিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের পালস নাইটক্লাবে ঢুকে গুলি চালান ওমর মতিন নামক এক ব্যক্তি। এরপর তিনি নাইটক্লাবে অবস্থান করা লোকজনকে জিম্মি করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ওমর মতিনের কাছে একটি এআর-১৫ রাইফেল, একটি পিস্তল এবং দুটি সন্দেহজনক যন্ত্র ছিল। স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে এসডব্লিউএটি-এর বিশেষ কমান্ডোরা জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য অভিযান চালান। ওই অভিযানে ওমর মতিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
সূত্র: আলজাজিরা।
আরও পড়ুন:
যেভাবে জঙ্গিতে পরিণত হন ওমর মতিন
ফ্লোরিডার নাইটক্লাবে হামলাকারী বউ পেটাতেন!
/এসএ/