নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) মুসলিমবিরোধী আখ্যা দিয়ে গর্জে উঠেছে ভারতের কেরালা রাজ্য। সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব পাস হয়েছে সেখানকার বিধানসভায়। এবার এক দরিদ্র হিন্দু নারীর বিয়ের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে কেরালার এক মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তাদের তত্ত্বাবধানেই মসজিদের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিয়ে। কেবল বিয়ের আয়োজন করা নয়, নববধূকে ১০টি স্বর্ণমুদ্রা এবং দুই লাখ টাকাও উপহার দিয়েছে মসজিদ কমিটি।
গোলাপি-সোনালি শাড়িতে লজ্জাবনত নববধূ, বরের পরনেও দক্ষিণী ঐতিহ্যবাহী সাদা শার্ট আর মুন্ড। সামনে সাজানো বিয়ের উপাচার। হিন্দু বিয়ের প্রতিটি আচার মেনে চার হাত এক হলো অঞ্জু-শরতের। আর সাক্ষী থাকতে কেরালার চেরুভাল্লি মুসলিম জামাত মসজিদ চত্বরে ভিড় জমালেন নানা ধর্ম ও শ্রেণির মানুষ। সাম্প্রদায়িক অশান্তির প্রেক্ষাপটে কেরালার মসজিদে হিন্দু দম্পতির বিয়ে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে।
রবিবার চেরুভাল্লির মুসলিম জামাত মসজিদ যেন পরিণত হয় এক অস্থায়ী বিয়েবাড়িতে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মসজিদ চত্বরেই টাঙানো হয়েছিল চাঁদোয়া। তার নিচে মালা বদল থেকে শুরু করে সব হিন্দু আচার-আচরণ মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। আর তারপর প্রীতিভোজ। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হাজার খানেক আমন্ত্রিত দক্ষিণী নিরামিষ খাবার খান তৃপ্তিভরে, দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করেন নবদম্পতিকে। মসজিদ কমিটির এই সহযোগিতায় অভিভূত নবদম্পতি।
রাজ্যে সম্প্রীতির নজির তুলে ধরার সুযোগ ছাড়তে চাননি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেই বিয়ের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেছেন, 'এটিই কেরালার ঐক্যের চিত্র'।
দু'বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছিলেন বিন্দু। তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে কোনোক্রমে দিন গুজরান হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু মেয়ে অঞ্জুর বিয়ে দেওয়ার মতো টাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারছিলেন না। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিবেশী নিজামউদ্দিন আলুমুত্তিল। তিনিই বিন্দুকে জামাত কমিটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ কি হিন্দু মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে রাজি হবেন? মনে এই দ্বিধা নিয়েই জামাত কমিটির দ্বারস্থ হন বিন্দু। কিন্তু সেখানে মেলে অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া। জামাতের একজন সদস্য বিয়ের খরচের দায়িত্ব নেন। কিন্তু অভ্যাগতদের তো খালি মুখে ফেরানো যায় না, তাই শুরু হয় প্রীতিভোজের ব্যবস্থাপনা। জুমার নামাজে যোগ দিতে আসা মুসলিমদের জানানো হয় বিয়ের বিষয়টি। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি হন অনেকেই। আর তাতেই সংকটের সমাধান হয়।