X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে চীনা পণ্য বর্জনের ডাকে ক্ষতি কার?

বিদেশ ডেস্ক
২৭ জুন ২০২০, ০৫:৩৬আপডেট : ২৭ জুন ২০২০, ০৫:৪০

কাশ্মিরের লাদাখে চীনা বাহিনীর হাতে অন্তত ২৩ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় ভারতজুড়ে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন প্রচারণায় আসলে লোকসান হবে ভারতের সাধারণ মানুষের। ভারতে চীনা পণ্য  বর্জনের ডাকে ক্ষতি কার?

সহস্রাধিক চীনা পণ্যের একটি তালিকা করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন সেই তালিকা নিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে কথা বলছে তারা।

সূত্র জানিয়েছে, এই তালিকায় থাকা কোনোটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নয়। এসবের মধ্যে রয়েছে খেলনা, প্লাস্টিক, স্টিল, ইলেকট্রনিক্স এবং গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশের মতো সামগ্রী। দিল্লিা চায়, তালিকায় থাকা পণ্যগুলো আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দিতে। উদ্দেশ্য, লাদাখে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের পর চীনা সামগ্রীর ওপর নির্ভরতা কমানো এবং দেশীয় শিল্পগুলোকে চাঙ্গা করা। সেজন্যই দেশের কোম্পানির সঙ্গে কথা চলছে তারা। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ এবং রিনিউয়েবল এনার্জির যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তি কাস্টমস শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে চীনা জিনিস থামাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দিল্লি।

বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরতা এতটাই বেশি যে, সেখানে বিধিনিযেধ চাপালে খোদ ভারতীয় নাগরিকরাই বিপাকে পড়বে। কারণ, ওই জিনিসগুলোর দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আছে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ওষুধ, ক্রীড়া সরঞ্জাম, টেলিকম ইত্যাদি। ভারতে চীনা পণ্য  বর্জনের ডাকে ক্ষতি কার?

গত আর্থিক বছরে চীন থেকে সাত হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। রফতানি করেছিল এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলারের সামগ্রী। ফলে আমদানি ও রফতানির মধ্যে বিপুল ফারাক রয়েছে। অন্য কোনও দেশের সঙ্গে দিল্লির এতো বেশি ফারাক নেই।  এর মূল কারণ হলো, অনেকগুলো ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা খুবই বেশি। যেমন গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে।

২০১৯ সালে চীন থেকে ৪২০ কোটি ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এর সঙ্গে কথা বলেছেন মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আর সি ভার্গব। তিনি বলেন, ‘এমন নয় যে, আমরা চীন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করাটা পছন্দ করি। আমাদের কাছে আসলে কোনও বিকল্প নেই। দেশের কোম্পানি যদি প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে অন্য দেশের তুলনায় কম দামে জিনিস দিতে পারে তো খুবই ভালো। এখন যদি উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে কিন্তু চীনের চেয়ে ভারতের বেশি ক্ষতি হবে।’ ভারতে চীনা পণ্য  বর্জনের ডাকে ক্ষতি কার?

সেন্ট্রাল বোর্ড অব এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমসের সাবেক প্রধান সুমিত দত্ত মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘আগে দেখতে হবে, যে জিনিস ও যন্ত্রাংশ চীন থেকে আসছে, সেগুলি আমরা দেশে বানাতে পারছি কি না, ওই দামে দিতে পারছি কি না। চীনের জিনিস যদি এখন বন্ধ করা হয়, তাহলে চীন নয়, অবশ্যই বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে ভারতের। ওই যন্ত্রাংশ বা জিনিস, তখন অন্য দেশ থেকে কিনতে হবে। দাম বেশি পড়বে। দেশের কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে সময় লাগে। আর জিনিসের দাম বেড়ে গেলে তখন সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়বে।’

খুব ছোট একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ওষুধের ক্ষেত্রে। ভারতের ৭০ শতাংশ প্যারাসিটামল চীন থেকে আসে। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে হয়। এই অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্যও চীনের ওপর নির্ভরশীল ভারত। তাছাড়া থার্মোমিটার থেকে শুরু করে ওষুধ ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রেও ভারতের চীন-নির্ভরতা প্রবল।

ওষুধের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘মাঝখানে একবার দূষণের কারণে, চীন কিছুদিন কারখানা বন্ধ রেখেছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে ওষুধের দাম বেড়ে গিয়েছিল। ওষুধ চীনের থেকে না নিলে অন্য দেশ থেকে নিতে হবে। অভিজ্ঞতা বলছে, তখন দাম বাড়তে বাধ্য। কারণ, চীনের জিনিস দামে অনেক কম। মানেও ভালো। তাই তারা এভাবে ওষুধের ক্ষেত্রে ঢুকে পড়েছে।’

তার মতে, ‘বাজার খুঁজতে খুব দেরি হয় না। আসল কাজটা তো উৎপাদন। দামে সস্তা, মানে ভালো জিনিস যদি দেশে বানানো যায়, তাহলে তো কথাই নেই। তখন কেন আমরা চীনের জিনিস নেবো? সেটা না করে চীনের জিনিস বন্ধ করলে ধাক্কাটা লাগবে সাধারণ মানুষের।’

আসলে অর্থনীতির গণিতটা আলাদা। আর বাজার অর্থনীতির পাঠই হলো, ক্রেতা যেখান থেকে কম দামে জিনিস পাবে, সেখান থেকেই কিনবে। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, টিভির মতো সামগ্রীর ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। সেখানেও চীনের রমরমা। ভারতে চীনা পণ্য  বর্জনের ডাকে ক্ষতি কার?

দিল্লিতে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হলো সদর বাজার। সেখানে খেলনার দোকান ভরা চীনা জিনিসে। দোকানদারদের বক্তব্য, একই দামে চীনা খেলনার বিকল্প তাদের দিতে হবে। তা হলেই চীনা জিনিস ছেড়ে দেশের খেলনায় দোকান ভরাবেন তারা। এমনকি ভারতে সাজাবার জন্য, বাড়িতে রেখে পূজার জন্য দেবদেবীর মূর্তিও আসছে চীন থেকে। বুদ্ধ থেকে বজরঙ্গবলী সবই মেড ইন চায়না।

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্যের যুদ্ধটা আলাদা। সেখানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। না হলে মুশকিল। ভারতীয় কোম্পানিগুলি ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারলে চীনা জিনিসের ওপর নির্ভরতা এমনিতেই কমে যাবে। কিন্তু এখনও সেই সময় আসেনি।’

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চীনা জিনিস বয়কটের স্লোগান এই সংঘর্ষের আবহে উঠতেই পারে। তবে এটি আদৌ কার্যকর করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সূত্র: ডিডব্লিউ।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী