যুক্তরাজ্য যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায় তবে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও যেকোনও ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করা থেকে পিছিয়ে পড়বে। অর্থাৎ দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহসা কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তিনদিনের যুক্তরাজ্য সফরের প্রথম দিনে লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একইসঙ্গে ইইউতে যুক্তরাজ্যের থাকার পক্ষে ভোট দিতে ব্রিটিশদের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকা নিয়ে ওবামার মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ইইউবিরোধীরা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে আসছে ২৩ জুন গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিন ব্রিটিশ জনগণ তাদের রায় জানাবেন। এমন অবস্থায় ব্রিটেন সফর শুরুর প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাজ্যের ইউতে থাকা প্রশ্নে তৎপরতা চালাচ্ছেন ওবামা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরণের বাণিজ্য চুক্তিতে দেশটি শেষের কাতারে চলে যাবে। বরং ইইউতে থেকেই একটি শক্তিশালী ইউরোপকে নেতৃত্ব দেয়াই ব্রিটেনের জন্য ভালো। কারণ এর ফলে তারা বিশ্বেও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
আরও পড়ুন: যে কারণে ইইউবিরোধী রক্ষণশীলদের তোপের মুখে ক্যামেরন
ওবামার মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ বিশ্বে ব্রিটেনের প্রভাব কমায়নি বরং তা আরও দৃঢ় হয়েছে।
এদিকে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ওবামার মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ইইউবিরোধী ব্রিটিশরা। ইউকেআইপি-এর নেতা নিজেল ফারেজ বলেন, ‘ওবামা ব্রিটেনকে নিচু করছেন।’
টোরি নেতা লিয়াম ফক্স বলেন, ‘ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ওবামা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলছেন তা অপ্রাসঙ্গিক।’
ওবামাকে মেয়াদহীন প্রেসিডেন্ট বলে বিদ্রূপ করেছেন টোরি এমপি ডোমিনিক রাব।
অবশ্য ওবামা বলছেন, তিনি ভোটকে প্রভাবিত করতে চান না, শুধুমাত্র ব্রিটেনের একজন বন্ধু হিসাবেই এই পরামর্শ দিচ্ছেন। আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে আত্মহত্যার হার
এই গণভোটের ফলাফলে যেহেতু যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে তাই মার্কিনিরাও এ গণভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওবামা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও অবশ্য বলছেন, ‘ইউনিয়নে ব্রিটেন থাকবে কি থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ জনগণের। তবে আমাদের বন্ধুরা কি বলছে, সেটাও আমাদের অবশ্যই শোনা উচিত।’
যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আধিক্য নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রবেশ করতে পারে। আর সেকারণে গত মেয়াদে ক্যামেরন সরকার ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও ইইউভুক্ত নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবারের মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে আগমন নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাদের দাবি, সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে তা হবে ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
আর তা নিয়ে যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়। এমন অবস্থায় ইইউভুক্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিবাসীদের সুবিধা সীমিত করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন। কিন্তু ইইউতে থাকার প্রশ্নে ক্যামেরনের এ উদ্যোগকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না খোদ কনজারভেটিভদের অনেকে। তবে লেবার পার্টি শুরু থেকেই ইইউ তে থাকার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম), এসএনপি এবং গ্রিন পার্টিও চায় যুক্তরাজ্য ইইউতে থাকুক। অপর পক্ষে ইউকেআইপি যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকার ঘোরতর বিরোধী।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে একই পরিবারের ৮ জনকে হত্যা
যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবারও লন্ডনেই কাটাবেন ওবামা। এদিন লেবার নেতা জেরিমি করবিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি গ্লোব থিয়েটার পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার। শেকসপিয়ারের মৃত্যুর ৪০০ তম বর্ষপূর্তি পালন করা হচ্ছে এ থিয়েটারে।
এর আগে শুক্রবার ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেলকে ডিউক ও ডাচেস অব কেমব্রিজ উইলিয়াম-মিডলটন ও প্রিন্স হ্যারির পক্ষ থেকে নৈশ ভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কেনসিংটন প্যালেসে তারা ওই নৈশ ভোজে অংশ নেন। এর আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ডিউক ও এডিনবার্গের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন ওবামা-মিশেল। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান
/এফইউ/