পূর্ব লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বাংলাদেশি অধ্যুষিত মাইল অ্যান্ড ওয়ার্ডে ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ২০ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নিহত ও আটক করা ব্যক্তি উভয়েই আপন ভাই। এই ঘটনায় আরও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর ও ২০ বছর বয়সী এক তরুণী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এখনও নিহত ও আটককৃতের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডটি মাইল অ্যান্ডের একটি কাউন্সিল বিল্ডিং ব্লকের ভেতরে একটি ফ্ল্যাটে, ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে সংঘটিত হয়।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র বৃহস্পতিবার ভোররাতে জানায়, একটি আবাসিক ভবনে গুরুতর হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারা। সেখানে পৌঁছে জরুরি বিভাগের কর্মীরা ২০ বছর বয়সী এক যুবককে গুরুতর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পেছনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। টাওয়ার হ্যামলেটস পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা এটিকে একটি সন্দেহজনক মৃত্যু হিসেবে গণ্য করছে এবং দুই ভাইয়ের বচসার মধ্যে সংঘটিত এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ উদঘাটনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে।
ছুরিকাঘাতের এই ঘটনার পাশাপাশি আরও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর ও ২০ বছর বয়সী এক তরুণী আহত হয়েছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের আঘাতের বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘটিত এই সহিংস ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা পুরো কমিউনিটিকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, যেখানে একজন তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন।
পুলিশ এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী বা কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে, যাতে তদন্তে সাহায্য হয়।
খুনের খবরটি স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন। নিহত যুবকের বাবার বাংলাদেশের গ্রামের বাড়ির এলাকা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশে বহু বাংলাদেশি পরিবারের বসবাস।
মেট্রোপলিটন পুলিশ এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে, এই বিষয়ে নাম-পরিচয় বা গ্রেফতার সংক্রান্ত কোন বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
দুঃখজনকভাবে, পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ভাইয়ের হাতে ভাইকে হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের একটি ভয়ঙ্কর ঘটনায় জুয়েল আহমেদ (সেসময় ৩০ বছর বয়সী) নামে এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি যুবক তার ৩৬ বছর বয়সী ভাই রুহেল আহমেদকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাদের পারিবারিক বাড়ি স্টেপনির ডুকেট স্ট্রিটের টিমর হাউজে ফুলের টব ভাঙ্গার জের ধরে ঝগড়ার পর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে।
জানা যায়, নিহত দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ ছিল। হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে জুয়েলের ভাঙা ফুলের টব নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জুয়েল তার বড় ভাইকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নিজের হাতের আঘাতের চিকিৎসার জন্য সে হাসপাতালে যায়।