‘মুক্তামনির হাতে জ্বালা-যন্ত্রণা হচ্ছে। তার হাতে কোনও বোধশক্তি নেই। তবে মাঝখানে কিছুদিন জ্বালা-যন্ত্রণা ছিল না। গত দুই মাসে হাত আস্তে আস্তে ফোলা বেড়েছে। এখনই সে বাড়ি ফিরতে চায়। তার হাত ফুলে ওঠায় আমরা আশঙ্কার মধ্যে আছি।’ রক্তনালীতে টিউমার আক্রান্ত শিশু মুক্তামনির মা আসমা খাতুন মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবে মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতির বর্ণনা দেন।
বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তামনি ঘুমোচ্ছে। শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, তার হাতে আগামীকাল (বুধবার) বা পরশু ব্যান্ডেজ করা হবে। এরপর কী পরিবর্তন হয়, দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, মুক্তামনির মা আসমা খাতুন বলেন, ‘নভেম্বরের পাঁচ তারিখে তার হাতে দ্বিতীয় দফা অপারেশন করা হয়। তখন তার হাত এত ফোলা ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে, হাত আগের মতো ফুলে উঠেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাঝখানে ওর গায়ে বিশাল (অনেক) জ্বর ছিল। তখন ডাক্তার বলেন, ক্যানোলার জন্য জ্বর থাকতে পারে। ক্যানোলাটা খুলে দিলে জ্বর চলে যাবে।’
মুক্তামনির মা বলেন, ‘হাতের যন্ত্রণায় সে খুব ভেঙে পড়েছে। পরশু রাতে ওর সেকি কান্না! কাঁদতে কাঁদতে বলে, আম্মু আমার এখানে থেকে ভালো লাগে না। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।’
মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী তার মা-বাবা। মা আসমা খাতুন বলেন, ‘ডা. রুমানা এখন আমার মেয়েকে দেখতে রাউন্ডে আসেন। তিনি দিনে তিন বেলা এসে মেয়েকে দেখে যান। এখন ডাক্তারদের ওপরই আমরা ভরসা করে আছি। তারা যা বলবেন, সেটাই হবে। ডাক্তাররা বলেছেন, ওর হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ দিলে এই ফোলাটা আস্তে আস্তে কমে যাবে।’ আর বাবা ইবরাহীম হোসেন বলেন, ‘আমরা মেয়ের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের দিকেই তাকিয়ে আছি।’
মুক্তামনির হাত ফুলে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘ওর হাত ফুলে গেছে। ওটা আমরাও দেখেছি। ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে আমরা দেখব, ঠিক হয় কিনা।’
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মুক্তামনি এখন ভালো আছে। সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে আমরা তাকে রিলিজ দেওয়ার চেষ্টা করব। তাকে আবার ছয় মাস পরে ডাকব।’ তিনি বলেন, ‘ও তো পুরোপুরি ভালো হবে না। তবু ভালো রাখার চেষ্টা থাকবে।’
এ বছরের ১২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয় মুক্তামনিকে। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। এ সময় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা। তারা মুক্তামনির সমস্ত রিপোর্ট দেখে তার চিকিৎসা করতে অপারগতা জানান। এরপর ঢামেকের ডাক্তাররা তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসার সব ধরনের ব্যয়ের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তামনির হাতে প্রথম ১০ অক্টোবর অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার হাতের ফোলা অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেন ডাক্তাররা। এরপর তার দুই পায়ের ত্বক নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক মুক্তামনির স্ক্রিন গ্রাফটিং (ত্বক লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন।