X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে আত্মহত্যা ঠেকানো যায়

উদিসা ইসলাম
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০০আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৩১

১৪ বছর বয়সী রাতুল নিতান্তই কৌতূহল আর ‘জাস্ট ফান’ করতে গিয়ে সহপাঠীকে অশালীন ভিডিও পাঠায়। এক-দুইবার তার সহপাঠী নিষেধ করার পরেও পাঠায়। একসময় সহপাঠীর বাসা থেকে রাতুলের বিরুদ্ধে স্কুলে অভিযোগ যায়। স্কুল থেকে রাতুলের অভিভাবকদের জানানো হয়—রাতুল গর্হিত অপরাধ করেছে এবং এর জন্য তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে। একইসঙ্গে স্কুল থেকে অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হয় সালিশের জন্য। কিন্তু সালিশ বিচারের আগেই রাতুলকে পড়তে হয় বাবা-মায়ের তোপের মুখে।

ছেলের কাছে মায়ের প্রশ্ন— এমন সন্তানের কারণে সমাজে মুখ দেখাবো কী করে? ছেলের কাছে এর কোনও জবাব ছিল না। কিশোর মন ভেবেছে—তাহলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই। একদিন পর রাতুলকে ডেকে সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে অজ্ঞান অবস্থায় বের করা হয়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায়, রাতুল ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় অচেতন হয়ে পেড়েছে।

রাতুল এ দফায় প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু তার হয়রানি পোহাতে হয়েছে অনেক দিন। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বস্তি হতো, বাবা-মায়ের সামনে স্বাভাবিক হতে পারতো না সে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, তার বড় একটা অংশই ঠেকানো সম্ভব। কম বয়সে যেকোনও ব্যর্থতাবোধ তৈরি হলে আত্মহত্যাকে অনিবার্য ভাবেন তারাই, যারা মনে করেন—এই বিপদে তাদের পাশে কেউ নেই, এমনকি বাবা-মাও না। বাবা-মা যদি বিপদগ্রস্ত বা কোনও অসহায়ত্বের শিকার সন্তানকে এই বোধটুকু দিতে পারেন যে, তার যেকোনও পরিস্থিতিতে তারা পাশে আছেন এবং সবাই মিলে যেকোনও সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব। তাহলে আত্মহনন প্রতিরোধ সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে আট লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। সংস্থাটির মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ‘আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা’ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে থাকে।

যারা আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করেন, তারা বলছেন, দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। একটা ধরন হচ্ছে, যারা আগে থেকে পরিকল্পনা করে এবং সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন, আরেক ক্ষেত্রে হুট করে করণীয় নির্ধারণ না করতে পেরে আবেগের বশে আত্মহত্যা। পারিপার্শ্বিকতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এই দ্বিতীয় ধরনের আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অন্যতম। সন্তানের ওপর চাপ না দিয়ে, তার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারাটা জরুরি। দ্য ল্যানসেটে  ‘ই ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ নামে ওপেন-এক্সেস পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে ৪২.৭ শতাংশ কিশোর এবং ৫৫.৩ শতাংশ কিশোরী মনে করে যে বাবা-মায়েরা তাদের সমস্যা বুঝে।

দুই কন্যা সন্তানের মা কাকলী তানভীর কেবল নিজের সন্তান না, অন্য শিশু-কিশোরদেরও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে জানার চেষ্টা করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশিরভাগ মা-বাবার সন্তানকে জানার চেষ্টা করার চেয়ে নিজেরা যা জানেন, তা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মা হিসেবে যা জানি সেটাই মানতে হবে, সেটাই আদর্শ এমনটা মনে করেন। এর বাইরে যাওয়াটাকে নিজের জন্য ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে চান। সেটা না করে যদি সন্তানের যেকোনও ব্যর্থতার অনুভূতি ও অসহায়ত্বের অনুভূতি সহানুভূতি দিয়ে বুঝে এই বোধ তৈরি করতে পারেন যে তোমার যেকোনও প্রয়োজনে আমি আছি। আমাকে সবকিছু বললে তোমাকে কোনও হেয়-প্রতিপন্ন হতে হবে না। তাহলে যেকোনও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে সন্তানদের বিরত রাখা যায়। কেবল নিজের কথাগুলো না বলে, তাদের কথাগুলোও শোনার চেষ্টা করুন। সন্তানকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে পারে।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা নেতিবাচক পরিস্থিতিতে টিকে থাকার লড়াইটা জানে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে মনোচিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাও জরুরি। যেকোনও ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে সমাধান বের করা সহজ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবা-মা ও সন্তানকে পরস্পরের আবেগের জায়গা বুঝতে হবে। বাবা- মা বেশিরভাগ সময় ‘গাইড’ না হয়ে ‘ডিরেক্টর’ হয়ে যান। বিপদটা ঘটে তখনই। বাবা-মা নির্দেশকের ভূমিকায় যাবেন না, তাকে  সব সময় ‘কোচের’ ভূমিকায় থাকতে হবে। সন্তানকে যেকোনও পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করে দিতে হবে। সব বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া যাবে না। এটাকেই আমরা গুণগত প্যারেন্টিং বলে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেন বলা হয়ে থাকে। আমরা সেটাতেও আপত্তি জানাই। বন্ধুকে বন্ধুর জায়গায় থাকতে দিন। বাবা-মায়ের দায়িত্বশীলতার জায়গা বন্ধুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।’

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
বাবার সঙ্গে অভিমান করে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
সর্বশেষ খবর
দুবাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
দুবাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড