একটি সরকারি নামি হাসপাতালের প্রধান ফটক। মূল রাস্তা থেকে গেট দিয়ে ঢোকার মুখে আটকে থাকতে হবে মিনিট দশেক। হাসপাতালে ঢোকার রাস্তার দুই ধারে বসেছে ‘মেলা’। কী নেই সেখানে! স্কুল ব্যাগ থেকে শুরু করে পুতুল, থ্রিপিস, চুলের ফিতাও বিক্রি হচ্ছে দেদার। রাস্তার একপাশজুড়ে আছে ভেলপুরি, আমড়া-পেয়ারা, আর সিঙ্গাড়ার জমাটি বেচাকেনা। মুখের সামনে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে পাশ দিয়ে লোকজনের হেঁটে বেড়ানোও মামুলি ঘটনা।
বলছিলাম সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কথা। এই নামকরা হাসপাতালের প্রবেশপথের প্রতিদিনকার দৃশ্য এটি। এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখার কারণে রাস্তায় হাঁটার জায়গাও থাকে না।
রবিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এই হাটবাজার সরানোর চেষ্টা করছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন। কেউ লাঠি হাতে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখাচ্ছেন, কেউ রাস্তা খালি করার কথা বলছেন। কিন্তু হকাররা খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না তাদের কথা। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন তারাও কিছুক্ষণ থেকে বোধহয় হাল ছেড়ে চলে গেলেন।
এক জায়গায় ভেলপুরি খাচ্ছিলেন একজন পুরুষ ও তিনজন নারী। হাসপাতালের প্রবেশমুখে জটলা কেন করছেন জানতে চাইলে তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়জ্যেষ্ঠ এক নারী বলেন, ‘আমার দুসম্পর্কের আত্মীয় হাসপাতালে। তাকে দেখে চলে যাচ্ছিলাম। বাচ্চাটা বললো ভেলপুরি খাবে। তাই সবাই খাচ্ছি।’
তার সঙ্গের আরেক নারী খাওয়ার পাশাপাশি পাশের হকারের কাছে জানতে চান ‘ভ্যানিটি ব্যাগের দাম কত?’ কিছু চুলের ক্লিপও কেনেন তিনি।
কিছুক্ষণ পরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা আবারও ফিরে আসেন। এসে আবারও ‘এখানে না, এখানে না’ বলে কিছুক্ষণ দাঁড়ান। একজনকে বাউন্ডারি থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন। এসময় ওই ব্যক্তি একটু আড়াল হলেও পরে আবার এসে বসেন।
কেন হকার সামলানো সম্ভব হচ্ছে না প্রশ্নে এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে সম্ভব হয় না। এদের কাছে যদি রোগীর স্বজনরা না দাঁড়ায় তাহলেই হয়। মানুষও ভীষণ অসচেতন। হাসপাতালের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে খাওয়া শুরু করেছে। নিষেধ করলাম, বলে খেয়ে চলে যাবো।’
এখানে যারা বিক্রিবাট্টা করছেন তারা বলেছেন, তারা বিভিন্নজনকে টাকা দিয়ে এখানে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। এর সত্যতা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন, ‘বললেই হলো? কে বলেছে তার কাছে চলেন। প্রমাণ দেখাতে পারবেন?’
এদিকে ভিড় পার হয়ে হাসপাতালের ভেতর ঢুকতেই চোখে পড়ে কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা মানুষের ভিড়। লম্বা লাইন। অনেক জায়গায় এতো বিশৃঙ্খল যে লাইন বোঝার উপায় নেই। ন্যূনতম দূরত্ব মানার কোনও লক্ষণও নেই। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই।
বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি না থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা যায়। কয়দিন ছিলাম না। আগামীকাল থেকে ঠিক হয়ে যাবে।’