X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হেমাটোলজি বিভাগ ছাড়াই ক্যান্সার হাসপাতাল!

জাকিয়া আহমেদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১১আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১১

স্বাস্থ্য বিভাগকে বিকেন্দ্রিকরণের অংশ হিসেবে আট বিভাগে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এর কার্যক্রমও শুরু হয়েছে জানিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এতে অন্য বিভাগের রোগীদের কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হবে না। এতে টাকার সাশ্রয় হবে, অনেকের জীবন বাঁচবে, আবার ঢাকার হাসপাতালের ওপর চাপও কমবে। কিন্তু আট বিভাগের ক্যান্সার হাসপাতালগুলোর জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালগুলোর অর্গানোগ্রামে হেমাটোলজিস্টের কোনও পদই রাখা হয়নি। অথচ ক্যান্সারের চিকিৎসায় এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ। হেমাটোলজিস্টের পদ ছাড়া কী করে ক্যান্সার হাসপাতাল হতে পারে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ২০ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এর সঙ্গে প্রতি বছর যোগ হচ্ছেন আরও এক থেকে দেড় লাখ। মৃত্যুও প্রায় লাখের কাছাকাছি। সেই হিসেবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোজ মারা যাচ্ছেন ২৭৩ জন।

রক্তের ক্যান্সার নির্ণয় ও এর চিকিৎসা হয় হেমাটোলজি বিভাগে। এ বিভাগের মাধ্যমে পরীক্ষা না হলে প্রাথমিকভাবেই রক্তের ক্যান্সার ধরা পড়বে না। এর চিকিৎসাও তখন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না।

‘যারা এই ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন তারা কোনোভাবে এটা মিস করেছেন বলে আমার ধারণা’ এমনটা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকাতেই এটা হয়েছে।’

হেমাটোলজি বিভাগ কেন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘ব্লাড ক্যান্সার অন্য যে কোনও ক্যান্সারের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। এর চিকিৎসা বা চরিত্র কিংবা শনাক্ত করার প্রক্রিয়া সবই আলাদা। বিশেষ করে লিউকেমিয়া বা মায়ালোমার চিকিৎসা একেবারেই ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় অত্যন্ত উচ্চমাত্রার কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরসঙ্গে স্পেশাল প্রিভেশন কেয়ার, ভালো মানের ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস- এই বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার বা খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সঙ্গে এর চিকিৎসা একেবারেই মিলবে না।’

অধ্যাপক অখিল রঞ্জন আরও বলেন ‘আমাদের দেশে একসময় এটা ছিল না। যে কারণে ভালো চিকিৎসাও ছিল না। কিন্তু গত ১০ বছরে বাংলাদেশে হেমাটোলজি বিভাগ দ্রুত বিকশিত হওয়ায় ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা যে সম্পূর্ণরূপে করা যায় এ সম্পর্কে চিকিৎসক ও রোগীরা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।’

হেমাটোলজি বিভাগের গুরুত্ব ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন, ক্যান্সারের পাশাপাশি রক্তের আরও কিছু মারাত্মক অসুখ রয়েছে যেগুলোর চিকিৎসা হেমাটোলজিস্টরা একই ডিসিপ্লিনে করে থাকেন। সেগুলো ক্যান্সার না হলেও ক্যান্সারের মতোই। এমনকি কখনও ক্যান্সারের চেয়েও মারাত্মক হয়ে যায়।

‘বিষয়টি যদি আমরা আলাদাভাবে তুলে না ধরি, তবে বিভাগীয় পর্যায়ে ক্যান্সার হাসপাতাল হলেও গুরুতর রক্তরোগ বা গুরুতর ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগীরা পাবেন না। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলনও ঘটবে না।’

ক্যান্সার হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে হেমাটোলজি বিভাগ না থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যত ক্যান্সার রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশই হেমাটোলজির ক্যান্সার। অন্য সব ধরনের চেয়ে হেমাটোলজির ক্যান্সারই বেশি নিরাময়যোগ্য, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়।

‘ফুসফুস, লিভার বা হাড়ের ক্যান্সার কখনও ভালো হয় না। কিন্তু ব্লাড ক্যান্সার ভালো হয়।’ জানালেন ডা. সালাউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘যে ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য, সেই ক্যান্সারের বিভাগ বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে রাখা হয়নি- এটা কেবল হতাশার খবরই নয়, আমাদের চিন্তা-চেতনার দৈন্যতারও উদাহরণ।’

বিশ্বজুড়েই রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা ক্যান্সারের চিকিৎসা করেন। এর ব্যতিক্রম কোথাও নেই জানিয়ে অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ বলেন, ‘অন্যান্য ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়েও রক্ত সম্পর্কিত যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলোর ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিভাগীয় শহরগুলোতে যদি হেমাটোলজি বিভাগ থাকে তাহলে সেখানে রক্তের অন্য অসুখ যেমন থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফেলিয়াতে আক্রান্তরাও চিকিৎসা পাবে।’

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালগুলোর প্রজেক্ট প্রোফাইল যখন প্রস্তুত করা হয়েছে তখন সেখানে রেডিওশন অনকোলজির বাইরে আর কোনও বিভাগের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি এই জনবল কাঠামোয় মেডিক্যাল অনকোলজিও নেই, হেমাটো অনকোলজিও নেই।’

‘কিন্তু ক্যান্সার হাসপাতালে যদি হেমাটো অনকোলজি বিভাগ না থাকে সেখানে লিউকেমিয়ার চিকিৎসাই হবে না। হেমাটো অনকোলজিস্ট ছাড়া কোনোভাবেই একটা ক্যান্সার হাসপাতাল দাঁড়াবে না।’ বলেন ডা. গুলজার হোসেন।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জম্মু ও কাশ্মীরে জোড়া হামলা, নিহত ১, দম্পতি আহত
জম্মু ও কাশ্মীরে জোড়া হামলা, নিহত ১, দম্পতি আহত
মিরপুরে অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে চালকদের বিক্ষোভ
মিরপুরে অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে চালকদের বিক্ষোভ
১১ বছর পর এভারেস্ট ছুঁলেন আরেক বাংলাদেশি
১১ বছর পর এভারেস্ট ছুঁলেন আরেক বাংলাদেশি
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
ধানের বাম্পার ফলনেও ‘অখুশি’ কৃষকেরা
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক