X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক প্লেসে মায়েদের মানসিক চাপ কেন বেশি?

বাহাউদ্দিন ইমরান
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০০আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০৫

বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মনজিলা ইয়াসমিন। তিনি জানালেন তার মানসিক চাপের কথা। স্বামী-স্ত্রী দুজনে চাকরিজীবী। ১৮ মাসের শিশুকে প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যান মনজিলা। তবে তার কর্মস্থলে নেই কোনও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার কিংবা ডে কেয়ার সেন্টার। ফলে বাচ্চা নিয়ে গেলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় তাকে। যেদিন অল্প ক্লাস থাকে— সেদিন বাচ্চাকে ঘরের ছোট গৃহকর্মীর কাছেই রেখে আসেন। অনেকক্ষণ বাইরে থাকতে হলে সঙ্গে নিয়ে যান সন্তানকে। কাজের ফাঁকে বাচ্চাকে নিরাপদে কোথাও কিছুক্ষণের জন্য রাখা কিংবা ব্রেস্ট ফিডিং করানো নিয়ে লজ্জায় পড়েন তিনি। বাচ্চাকে কোলে নিয়েই অনেক সময় ক্লাস করান। কখনও আবার বাচ্চাকে অন্য সহকর্মীদের কোলে রেখে খুব জরুরি কাজগুলো সেরে নিতে হয় তাকে।

মনজিলা বলেন, ‘স্কুলে বসে কিছুটা আড়ালে বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের সময় মনে হয়— এই বোধহয় কেউ হুট করে রুমে ঢুকে পড়লো, বা কেউ হয়তো দূর থেকে তাকিয়ে আছে এদিকে। ফলে ওই সময়টা আমি অন্যান্য কাজের তুলনায় বেশি মানসিক তাড়না অনুভব করি।’

সামিয়া রহমান নামের আরেক মা তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানালেন, ‘গত সপ্তাহের ঘটনা। বাসা থেকে কাছেই একটি বহুতল মার্কেটে গিয়েছিলাম। বাচ্চাটা সঙ্গেই ছিল। প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটার পর বাচ্চা কান্না শুরু করলো। কিন্তু ব্রেস্ট ফিডিং করানোর মতো কোনও জায়গা মার্কেটে খুঁজে পেলাম না। পুরো মার্কেটজুড়ে মানুষ। বাচ্চার কান্নাও থামছে না। এসির মধ্যে ঘামতে শুরু করলাম। বাচ্চার বাবাকে নিয়ে একটু আড়াল খোঁজার চেষ্টা করলাম। মার্কেটের কর্নারে কয়েকটা দোকান বন্ধ থাকায় আলো নেভানো ছিল। ওখানে কিছুটা অন্ধকারে বাচ্চার বাবা আমাকে আড়াল দিয়ে দাঁড়ালো। আমি কোনোরকম দাঁড়িয়ে থেকেই বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করালাম। আজ  যদি সেখানে একটি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা ডে কেয়ার সেন্টার থাকতো, তাহলে কি এতটা হয়রান হতে হতো? সেদিনের মানসিক কষ্ট কখনো ভুলে যাওয়ার না।’

পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ডে কেয়ার সেন্টার না থাকাটা মা ও শিশুর মাঝে নেতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মা যখন শিশুকে নিয়ে বাসার বাইরে থাকেন এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে না পারেন, তখন তিনি (মা) উদ্বেগে ভুগতে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই মায়ের সে উদ্বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মায়ের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। সে অস্থিরতা মায়েদের বিভিন্নভাবে ভোগায়। ফলে কোনও পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ডে কেয়ার সেন্টার না থাকাটা মা ও শিশুর মাঝে নেতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মা যখন শিশুকে নিয়ে ঘরের বাইরে থাকেন, তখন বাসার মতো করে তিনি শিশুর যত্ন নিতে পারেন না। এতে শিশুকে নিয়ে তিনি মানসিক বিড়ম্বনায় জড়িয়ে পড়েন এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। এর প্রভাব শিশুর ওপরেও পড়ে।’

২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর নিরাপদ পরিবেশে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মায়ের বুকের দুধ পান করতে ৯ মাসের  শিশু উমাইর বিন সাদিকের পক্ষে তার মা ইশরাত হাসান হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন। ওই রিটের বিষয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় প্রকাশ করেন। জনস্বার্থে দায়ের করা এই রিটের রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি শিশুর জন্মের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত তার মাতৃদুগ্ধ প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেকটরে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং রুমের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। শপিং মল, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চ ঘাটসহ সব পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং রুম থাকা প্রয়োজন— যাতে সব মা তার শিশুদের মাতৃদুগ্ধের ব্যবস্থা করতে পারেন। কোনও মা ও শিশু যেন এই রিটের পিটিশনারদের মতো পীড়াদায়ক পরিস্থিতিতে না পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ দ্রুততম যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং রুম স্থাপনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও রায়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাইকোর্ট।

রিটকারী শিশুর আইনজীবী মা ইশরাত হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মা ও শিশুকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। শিশুকে খাওয়ানো এবং রাখার পর্যাপ্ত ফিডিং কর্নার ও শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টার না থাকায় মায়েরা বিভিন্নরকম মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হন। কর্মক্ষেত্রে শিশুকে রাখার পরিবেশ ও সহযোগিতা  না পেয়ে অনেক মেধাবী নারী কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। যা নারী ক্ষমতায়নের পথে বিপর্যয়। একজন নারীকে যদি মা হওয়ার মতো গৌরবের বিষয়টিকে দুর্বলতা, সমস্যা এবং পীড়াদায়ক পরিস্থিতি হিসেবে মানসিক চাপ দেওয়া হয়— তবে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। হাইকোর্টের রায়ে মা ও শিশুদের সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সব কর্মস্থল ও অন্যান্য পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং রুম করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘প্রতিটি পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার কিংবা অন্তত ৫ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার করা যায়। এটি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করতে হবে। কেননা, আমাদের সন্তানরা যদি সঠিকভাবে না বড় হয়, তবে এর প্রভাব আমাদেরই বহন করতে হবে। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ডে কেয়ার সেন্টার থাকলে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জায়গা ঠিক থাকবে। তখন শিশুর মা মানসিকভাবে অনেকটাই স্বস্তিবোধ করতে থাকবেন। অর্থাৎ সামাজিকভাবে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে মায়েরাও নিরাপদ অনুভব করবেন।’

/এফএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত ঢাকাবাসী, ভিড় কমায় স্বস্তি
ঈদ এলে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন তারা
ঈদের আমেজে মেতেছে রাজধানীর শপিং মলগুলো
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!