X
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
৪ আষাঢ় ১৪৩২

আত্মহত্যা কেন করে মানুষ?

জামাল উদ্দিন
১০ অক্টোবর ২০২৩, ২০:০০আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৮

শুধু প্ররোচনায় নয়, নানা কারণেই আত্মহত্যা করেন অনেকে। এটা একটা মানসিক রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকোলজিক্যাল কিংবা নিউরো বায়োলজিক্যাল কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করে থাকে কোনও ব্যক্তি। তবে বর্তমানে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কিংবা মান-অভিমান থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা থেকে হতাশায় ভোগা, মাদক, অর্থনৈতিক সমস্যা ও আত্মবিশ্বাসে ঘাটতির কারণেও আত্মহত্যা করে থাকেন বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তি। তাদের বয়স প্রধানত ১৮ থেকে শুরু করে ৫০ বছরের মধ্যে দেখা যায়। এদের মধ্যে শিক্ষার্থীসহ তরুণদের সংখ্যাই বেশি।

একাধিক গবেষণার তথ্য ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি দিন গড়ে ৩২ জন আত্মহত্যা করে থাকেন।

আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করে আঁচল ফাউন্ডেশনে। সংগঠনটির এক জরিপে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ১৬৯ জন স্কুল শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের হার ক্রমবর্ধমান। গত আট মাসে ১৬৯ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ৯৬ জন কলেজ শিক্ষার্থী, ৬৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং ৩০ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। ২০২২ সালের একই সময়ে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমানের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি।

আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আত্মহত্যার তথ্যগুলোতে আমরা দেখেছি যে, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া কিংবা প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা বেশি করে থাকে। ভিন্ন তথ্যও সামনে আসছে। আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত, তা নিয়ে চিন্তার উদ্রেক করছে। মানসিক হতাশা থেকেও অনেকে আত্মহত্যা করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা একটি ফ্যাক্ট। এছাড়াও আত্মহত্যার জন্য আরও  অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কিছু কারণ আছে নিউরো বায়োলজিক্যাল। কিছু আছে সাইকোলজিক্যাল। নিউরো বায়োলজিক্যালের কিছু স্পর্শকাতরতা রয়েছে। যেগুলো ব্যক্তিকে এ ধরনের কেসের দিকে ধাবিত করে। অনেক সময় অনেকে এগুলো না জেনে তাৎক্ষণিক বলে দেয় যে, আত্মহত্যার জন্য ব্যক্তিকে প্ররোচিত করা হয়েছে। এটাও আছে। তবে সেটাকে আমরা বলে থাকি— এনভায়রনমেন্টাল বিষয় বা সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতির বিষয়। এই কালচারে কোনও ব্যক্তি হয়তো তাকে প্ররোচিত করছে। এটা হতে পারে। হয়। তার পরিবারের কোনও ব্যক্তি হতে পারে। বন্ধু-বান্ধব হতে পারে। সমাজের কোনও কারণ বা প্রভাব থাকতে পারে।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, সে যদি কাউকে আইডেন্টিফাই করে না যায়, তাহলে আমরা কীভাবে বলবো যে— তাকে প্ররোচিত করেছে। এটার কোনও সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তাৎক্ষণিকভাবে এটা বলা ঠিক নয়। অনেক কারণ থাকতে পারে। তার আগের কোনও বিষয় অর্থাৎ মানসিক হতাশা থাকতে পারে। চিকিৎসাধীন ছিল কিনা। এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

মনোবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরও বলেন, বায়োলজিক্যাল কারণগুলোর মধ্যে যেমন- পারিবারিক ইতিহাসের মধ্যে যদি আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে থাকে বা নজির থাকে, তাহলে এর প্রভাব থাকতে পারে। বাবা-মা কিংবা পূর্ব পুরুষদের মধ্যে যদি থাকে তবে জেনেটিক্যালি এটা বহন করতে পারে। আরেকটা কারণ হচ্ছে বায়োলজিক্যাল সেনসিটিভিটি। কোনও ব্যক্তি যদি বড় কোনও ঘটনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, আবার কোনও ব্যক্তি ছোট্ট একটা ঘটনাকে পাত্তা দিচ্ছে। যার ভেতরে হাইলি সেনসিভিটি থাকে তারা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হতে পারে। এটা ব্রেনের একটা ফ্যাংশন।

তিনি বলেন, এরপর আসে সাইকোলজিক্যাল। এরমধ্যে অনেক কারণ থাকতে পারে। কারও মধ্যে যদি কোনও ট্রমা থাকে। বিশেষ কোনও ইভেন্ট বা ঘটনা যদি তার জন্য ঘটে। কেউ ছোট বেলায় বাবা-মা হারিয়ে ফেলেছে। বিবাহিত জীবনে বিচ্ছেদ বা তার চোখের সামনে বিশেষ কোনও ঘটনা ঘটলেও আত্মহত্যার প্রবণতা আসতে পারে। তাছাড়া ব্যক্তি যদি মানসিকভাবে ডিজঅর্ডার বা ডিপ্রেশনে থাকে সেক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। এর পরেরটাই হচ্ছে সামাজিক বা পারিপার্শিক পরিবেশের কারণে হয়ে থাকে। যেমন সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া। বর্তমানে এটাই বেশি দেখা যায়। বিয়ের আগে কিংবা পরের সম্পর্ক হতে পারে। ফলে ব্যক্তি বা স্বজনরা আরেকজনকে দোষারোপ করে।   

/এফএস/এপিএইচ/    
সম্পর্কিত
বটগাছের ডালে ঝুলে ছিল ট্রাকচালকের মরদেহ
কারাগারে আত্মহত্যার চেষ্টা আসামির, ঢামেকে মৃত্যু
দাম্পত্য কলহে ফেসবুক লাইভে এসে ফ্রিল্যান্সারের ‘আত্মহত্যা’
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ জুন, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ জুন, ২০২৫)
ভিওআইপি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ২, বিপুল সরঞ্জামসহ ৩৯৬টি সিম উদ্ধার 
ভিওআইপি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ২, বিপুল সরঞ্জামসহ ৩৯৬টি সিম উদ্ধার 
মতিঝিলে অটোরিকশার ধাক্কায় ট্রাফিক পুলিশ আহত, চালককে এক মাসের কারাদণ্ড
মতিঝিলে অটোরিকশার ধাক্কায় ট্রাফিক পুলিশ আহত, চালককে এক মাসের কারাদণ্ড
৪৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী বরিশালে, উদ্বেগ আছে করোনা নিয়েও
৪৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী বরিশালে, উদ্বেগ আছে করোনা নিয়েও
সর্বাধিক পঠিত
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
জামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকজামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
ডিসি ফিট লিস্টের জন্য ডাক পেলেন ৪০ কর্মকর্তা
ডিসি ফিট লিস্টের জন্য ডাক পেলেন ৪০ কর্মকর্তা