X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ধর্মীয় কোনও বাধা নেই’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মার্চ ২০২৪, ০৫:০০আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০৫:০০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) লাখো প্রাণ বাঁচাতে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টে (অঙ্গ প্রতিস্থাপন) ধর্মীয় ও আইনি গুরুত্ববিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাডাভেরিক অঙ্গদান ও ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে ধর্মীয়, আইনি ও সমাজের বিশিষ্টজনদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান হয়।

সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলে গোলটেবিল বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের লোকবলের সে সক্ষমতা নেই। এ জন্য আমরা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট টিম তৈরি করছি। ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করছি। আমরা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে কডিনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য শিশু হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্যও বিশেষজ্ঞ দল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামি দেশ যেমন ইরান, সৌদি আরব, কুয়েত  ইত্যাদি দেশেও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে। এতে কোনও ধর্মীয় বাধা নেই। ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্মসহ সব ধর্মেই মানবকল্যাণের কথা বলা হয়েছে। মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। তাই এই ধরণের মহৎকাজে অঙ্গদান করলে তাতে কোনও ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই। আজ গোলটেবিল বৈঠকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্মানিত মুফতিও এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

উপাচার্য আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ট্রান্সপ্লান্টের রোগীরা সেবা নিতে যাচ্ছে। এতে দেশের প্রচুর অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। যদি পার্শ্ববর্তী দেশে যেতে হয়, সে জন্য দূতাবাসে একটি সেল গঠন করে বোর্ডের সুপারিশের মাধ্যমে যেতে হবে। এ জন্য দূতাবাসগুলোকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বার জানান তিনি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের আহ্বায়ক প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সংযুক্ত করতে এবং দেশে এর অগ্রগতির বিষয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে  চাই। সারাহ ইসলামের মাধ্যমে দেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট শুরু হয়েছে, এটা আমাদের জন্য বড় একটি বিষয়। এই মহৎ কাজটিকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে আমি কাজ করতে চাই। আমাকে যদি ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়, তাহলে আমি এটা নিয়ে সংসদে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে। তবে নিজের কোনও অঙ্গ দিয়ে যদি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা যায়, তা অনেক বড় পাওয়া। আজ সব ধর্মের মানুষই কথা বলেছেন। তাদের কথায় বোঝা গেল, কোনও ধর্ম যেহেতু দেহদানে বাধা দেয় না, তাই সবাই দিতে পারে এটি।

অনুষ্ঠানে প্রথম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টে অঙ্গ দেওয়া সারাহর মা শবনম সুলতানা বলেন, আমার সন্তান যে মানুষের উপকারে ভূমিকা রেখেছে, তা আমাকে আনন্দিত করে। সারাহ সবার মাঝে বেঁচে থাকবে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের দেশের মানুষকে যাতে চিকিৎসার জন্য বাইরের অন্য দেশের কোথাও যেতে না হয়, তার ব্যবস্থা প্রয়োজন।

দেশের দ্বিতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টে দেহদান করেন মাসুম। তার স্ত্রী তানিয়া স্বামীর জন্য সবার কাছে দোয়া চান। তবে আবেগতাড়িত হয়ে যাওয়ায় এর বেশি কিছু বলেননি তিনি।

সারাহর দান করা চোখে আলো ফিরে পাওয়া মো. সুজন বলেন, আমার দুই চোখের কর্নিয়ায় সমস্যা ছিল। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। বিএসএমএমইউ থেকে জানিয়েছিল কর্নিয়া পেয়ে আমাকে কল দেবে। এরপর কল দিয়ে কর্নিয়া প্রাপ্তির কথা জানায়। পরে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে আমার কর্নিয়া স্থাপন হয়। এখন আমি দুই চোখেই ভালো দেখতে পাই। সারাহ ইসলামের চোখে আমি চোখে আলো ফিরে পেয়েছি৷ তার জন্য অনেক দোয়া করি আমি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাদেবমহ অন্য ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

/এসও/এনএআর/
সম্পর্কিত
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
গরমে বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, রংপুর হাসপাতালে পাঁচ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বশেষ খবর
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে