X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়ি ও সাজেকে এখন পর্যটক সমাগম কেমন

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৪আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৫

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকা খাগড়াছড়ি ও সাজেকের পর্যটন কেন্দ্রগুলো গত ২৮ আগস্ট ছয়টি শর্তে পুনরায় খুলেছে। তবে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এই খাতে প্রাণ ফেরেনি। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার পর্যটক সমাগম হতো। এখন সেই সংখ্যা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা, অসুস্থ অবস্থায় ভ্রমণ না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুসরণ করতে নির্দেশনা দিয়ে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা– করোনা আতঙ্ক, কয়েক মাস ধরে লকডাউনের কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, একা বেড়ানোর অনিচ্ছা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ঝক্কিসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের মধ্যে ভ্রমণের আগ্রহ কমেছে।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া জানান, খাগড়াছড়ি ও সাজেকে সব মিলিয়ে ১৫০টির মতো হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে। খাগড়াছড়ির গ্রিন স্টার হোটেলের এই মালিকের দাবি, গত ২৮ আগস্ট পর্যটন কেন্দ্র আবারও চালুর পর হোটেলটিতে কয়েকদিন ছয়-সাতজন করে পর্যটক পেয়েছেন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সব মিলিয়ে ১২ জন পর্যটক ওঠেন এখানে। তার কথায়, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গড়ে ১০ শতাংশ পর্যটক দেখা গেলেও অন্যান্য দিন তা ৫ শতাংশে নেমে যায়।’

সাজেকের রয়েল সাজেক এবং হিমাচল হোটেল দুটির পরিচালক এসএম জিয়াউল হক যুবরাজ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সাজেক আবারও চালু হলেও পর্যটক সংখ্যা খুবই কম। করোনাকালের আগে দিনে গড়ে চার-পাঁচ হাজার ভ্রমণপ্রেমী সাজেকে আসতো। গত কয়েকদিন সেই সংখ্যা ১০০-১৫০ জনের বেশি হয়নি। আগের মতো বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম না হওয়া পর্যন্ত প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে না।’

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকা জানা গেছে, আগে গড়ে প্রতিটি হোটেলে পাঁচ-দশজন কর্মী ছিল। কিন্তু এখন দুই-তিনজন কর্মী নিয়েই নতুনভাবে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস খোলা হয়েছে। তাছাড়া করোনাকালীন অনেক রিসোর্টে লোকজন না থাকায় তদারকির অভাবে থাকার পরিবেশ নেই। এগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। এমনিতেই লোকসানে পড়ে হোটেল মালিকরা বিপর্যস্ত।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকিট বিক্রেতা কোকোনাথ ত্রিপুরার দাবি, করোনাকালের আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৫৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এসব দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই স্থানীয়। তার আশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ডিসেম্বর মার্চ পর্যন্ত প্রত্যাশিত পর্যটক সংখ্যা দেখা যেতে পারে।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। এখানকার তত্ত্বাবধায়ক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মহামারির আগে টিকিট বিক্রি থেকে একদিনে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত এসেছিল। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ফের চালুর পর গত কয়েকদিনে গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা আয় হয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষের। তিনি উল্লেখ করেন, এখন গড়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০ পর্যটক দেখা যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। জেলার বাইরের পর্যটকরা বেড়াতে আসছেন না বললেই চলে।

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকা ভ্রমণপ্রেমীদের উপস্থিতি কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অলস সময় কাটছে। পার্বত্য জিপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, করোনাকালের আগে গড়ে ২০০ গাড়ি প্রতিদিন সাজেক, আলুটিলা, মায়াবিণী লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যেত। কিন্তু এখন গড়ে ৩০-৪০টি গাড়ি চলাচল করছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের মন্তব্য, করোনা আতঙ্কের কারণে পর্যটক সমাগম কম। তিনি মানছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পুরনো সুসময় ফিরে পাওয়া কঠিন। তার কথায়, ‘এখনও লোকজনের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কাজ করছে। ’

ভ্রমণপিপাসুরা শর্ত মেনে ঘোরাফেরা করছেন কিনা তা নজরদারি করছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ নিশ্চিত করেছেন, পর্যটকদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন আছে।


/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা