প্রশ্ন: আমার নাম মিজানুর রহমান (ছদ্মনাম), থাকি হবিগঞ্জে। আমার বয়স ২৬। পেশা সাংবাদিকতা। স্থানীয় পত্রিকায় টুকটাক কাজ করি। বাবা মারা যান আমার বয়স যখন ১০ বছর, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। ১৭/১৮ বছর বয়স থেকে প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি, পরিবারের খরচ, মায়ের ঔষধ খরচ, নিজের ও ছোট ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ জোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি, বিনিয়োগ ছিল ৫ জনের ১০ লাখ টাকা। সেখানেও ধোঁকা খেয়ে দুই লাখ টাকা হারিয়েছি। ছোট্ট থেকে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠায় পড়াশোনা ভালোভাবে হয়নি, চাকরিও করতে পারছি না তাই। কিছু করার মতো অর্থ নেই, নেই অর্থ সংগ্রহ করার কোনও ব্যবস্থাও। এই ব্যর্থ জীবনে এসেছে প্রেমও, নিকট আত্মীয় এক মেয়ের সঙ্গে রয়েছে সম্পর্ক। তবে চাকরি কিংবা কিছু করতে না পারায় সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। সব মিলিয়ে অনেক প্রচণ্ড মানসিক অশান্তিতে রয়েছি, সাংবাদিকতার কাজেও মনোযোগ দিতে পারছি না। অনেকবার চেষ্টা করেছি আত্মহত্যা করবো, কিন্তু বারবার ফিরে আসছি। কী করবো আমি এমন পরিস্থিতিতে?
উত্তর: আপনার এই পরিস্থিতিতে জীবনে সবাইকেই কখনও না কখনও পড়তে হয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনার চাইতে ভালো অবস্থানে যেমন অনেকে আছে, তেমনি আপনার চাইতে খারাপ অবস্থানেও আছে কেউ না কেউ। আমরা জীবনে কী পাইনি সেটার হিসাব করি। এটা আমাদের দোষ না। আমাদের মস্তিষ্ক এভাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত। আমরা চাইলেই পারি নতুনভাবে চিন্তা করতে। আমরা কার কার কাছ থেকে বা প্রকৃতির কাছ থেকে অতি ক্ষুদ্র হলেও কী কী পেয়েছি সেটা নিয়ে ভাবতে পারেন। আপনি এই মুহূর্ত পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে আছেন। আপনার শরীরে হাত, পা, চোখ সব ঠিক মতো আছে। আজকে পর্যন্ত আপনি কিছু না কিছু খেতে পেয়েছেন। আজকে পর্যন্ত ঘুমনোর সময় আপনার মাথার উপরে একটা ছাদ আছে। এগুলোর অনেক কিছুই কিন্তু পৃথিবীর অনেক মানুষের এই মুহূর্তে নেই! আপনি অনেকের চাইতেই এখনও অনেক ভাগ্যবান। এই শুকরিয়া আপনার মনের কষ্টকে লাঘব করবে এবং আপনার মধ্যে কাজের স্পৃহা তৈরি করবে।
প্রশ্ন: আমি ছোটবেলা থেকে একটা সমস্যায় ভুগছি।সমস্যাটা হলো আমি অপমান কিংবা কারো দ্বারা খারাপ আচরণ কখনও ভুলতে পারি না। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভুগি। এমনকি অনেক পুরোনো খারাপ আচরণ আবার নতুন করে এসে তীব্র ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে। নিজের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ জেগে ওঠে। নিজে নিজে একা রুমে ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করতে থাকি। বিগত ৯ বছর যাবত এ সমস্যায় আছি। প্রতিদিন এসব হচ্ছে। আমি কীভাবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব?
উত্তর: আপনাকে আগে এটা মেনে নিতে হবে যে পৃথিবীটা নিরবিচ্ছিন্ন সুখের জায়গা নয়। আবার নিজের সাথে যুদ্ধ করে আপনি কখনও জিততে পারবেন না, এটাও মেনে নিতে হবে। সুতরাং কারোর আচরণ যদি খারাপ লাগে, পারলে তার প্রতিবাদ করুন। না পারলে তা মেনে নিন। পরে নিজের কাছে খারাপ লাগলে সেটাও আপনাকে মেনে নিতে হবে। যতক্ষণ আপনি আপনার জীবনের দায় নিজে না নিয়ে অন্যের কৃপায় বেঁচে থাকবেন, অন্যদের খারাপ ব্যবহারের কথা ভেবে নিজে কষ্ট পেতে থাকবেন, ততোদিন কেউই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। আপনাকে কষ্টসহিষ্ণু হতে হবে এবং কষ্টসহিষ্ণুতা শেখার কোনও সহজ পদ্ধতি নেই। কষ্ট পাওয়ার মাধ্যমেই সব মানুষকে কষ্টসহিষ্ণুতা শিখতে হয়। আপনিও এর ব্যতিক্রম নন। সুতরাং কষ্টকে এড়ানোর চেষ্টা না করে একে সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে।