মেদ ঝরাতে চাইলে খাবার নির্বাচন করার আগে তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, যা অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ রাখবে আপনার পেট। দ্বিতীয়ত, রক্তে শর্করা বাড়াবে না বা রক্তে খুব বেশি চিনি চর্বি হিসেবে জমা হবে না। এবং সর্বশেষ বিষয়টি হচ্ছে, যেসব খাবার মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়াবে। অর্থাৎ আপনি যা খান এবং পান করেন তা শক্তিতে পরিণত করার জন্য আপনার শরীরের সিস্টেম যেন প্রস্তুত থাকে সবসময়।
শক্তিশালী বিপাক ক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা খাবারের মাধ্যমে যে পুষ্টি গ্রহণ করি, সেগুলো শরীরের বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বিপাক ক্রিয়া ধীরে হলে ক্যালোরি কম খরচ হয়। ফলে বাড়তি ক্যালোরি শরীর সংরক্ষণ করে। এর ফলে মেদ বেড়ে যায়। বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে। পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ঘুম, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, সকালে ভরপেট খাওয়া, দিনে চার থেকে ছয়বার খাওয়াসহ কিছু নিয়ম মেনে আপনি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারেন। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট কিছু খাবার রাখলেও বাড়বে মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়া।
আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খান
থাইরয়েড গ্রন্থি বিপাক ক্রিয়াকে ক্যালোরি পোড়াতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কাজ করার জন্য থাইরয়েডের আয়োডিনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা প্রয়োজন। নিশ্চিত করুন যে আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত থাকছে ডায়েট লিস্টে। লবণ, ডিমের কুসুম, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার ও তৈলাক্ত মাছে পাওয়া যায় আয়োডিন।
বিভিন্ন ধরনের ডাল খান
মটর ডাল এবং মসুর ডালের মতো খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার বিপাক ত্বরান্বিত করে এবং আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ বোধ করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মসুর ডাল কম খেতে এবং শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। তাই ক্যালোরিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। আপনাকে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে সাহায্য করবে পানি। এছাড়া ক্যালোরি বার্নিং বাড়াতে পারে পানি।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন পাতে
ক্যালসিয়াম শুধু হাড় বা দাঁতই শক্তিশালী করে না, পাশাপাশি বাড়ায় বিপাক প্রক্রিয়া। কারণ এটি শরীরকে খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম পেতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যালসিয়াম পাউন্ড এবং চর্বি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। ডায়েটে স্বাস্থ্যকর, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, ব্রোকলি এবং সার্ডিন বা স্যামন মাছ ক্যালসিয়ামের উৎস।
আদা খান
গবেষণা বলছে, শরীরের ওজন এবং রক্তে শর্করার উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে আদা। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সকালে আদা মিশ্রিত গরম পানীয় পান করলে ক্ষুধার অনুভূতি কমে যায় এবং এটি একটি শক্তিশালী থার্মোজেনিক (ক্যালোরি-বার্নিং) প্রভাব ফেলে।
লো-গ্লাইসেমিক খাবারের উপর জোর দিন
লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (লো-জিআই) খাবারে কার্বোহাইড্রেট তুলনামূলকভাবে কম থাকে। শরীর উচ্চ-কার্ব, উচ্চ-গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবারের চেয়ে ধীরে ধীরে হজম করে। এর মানে হলো এগুলো খাওয়ার সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় না। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, কম-জিআই ডায়েট ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। লো-জিআই খাবারের মধ্যে রয়েছে সবুজ শাকসবজি, ছোলা, বেশিরভাগ ফল এবং মটরশুঁটি।
তথ্য: ওয়েবএমডি
