ভিটামিন বি-১২ বা কোবালামিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। লোহিত রক্তকণিকা তৈরি, ডিএনএ সংশ্লেষণ, স্নায়বিক ফাংশন এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-১২। তবে এই ভিটামিন আমাদের শরীর নিজ থেকে তৈরি করতে পারে না। ফলে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-১২ গ্রহণ করতে হয় আমাদের। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি-১২ প্রয়োজন। ভিটামিনটির ঘাটতির কারণে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ক্লান্তি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিনটির অভাবে শরীরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো প্রভাবিত হতে পারে। জেনে নিন আরও বিস্তারিত।
- ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি স্নায়ুর চারপাশে মায়েলিনের আবরণ ও প্রতিরক্ষামূলক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে খিঁচুনি ও হাত পায়ে অসাড়তার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। হঠাৎ হাতে পিন বা সুঁই ফোটার মতো অনুভূতি হতে পারে বা হাতের অংশে জ্বলন্ত অনুভূতি অনুভব হতে পারে। এই অবস্থাকে প্যারেস্থেসিয়া বলা হয়। এই সংবেদনগুলো সাধারণত হাতে, পায়ে বা কখনও কখনও মুখেও ঘটে। ভিটামিন বি-১২ এর অভাবের কারণে স্নায়ুর ক্ষতির ফল এগুলো।
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এই ভিটামিনের ঘাটতি। এতে স্মৃতিশক্তির সমস্যা, বিভ্রান্তি, মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হওয়া, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়া হতে পারে। ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি নিউরোট্রান্সমিটার ফাংশনকে প্রভাবিত করে। এতে বিষণ্ণতা, খিটখিটে মেজাজের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অ্যানিমিয়া হতে পারে ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে। মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলে লাল রক্ত কণিকা অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যায় এবং অক্সিজেন বহনে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এতে ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ত্বক এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে সব ধরনের রক্ত কণিকা (লাল রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লেটলেট) কমে যায় এবং সংক্রমণের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সহজে ক্ষত তৈরি হওয়া এবং রক্তপাত হওয়ার মতো সমস্যা বাড়তে পারে।
- শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি-১২ না থাকলে হার্ট ঝুঁকিতে থাকে। ভিটামিন বি-১২ এর অভাব হোমোসিস্টাইনের মাত্রা বাড়াতে পারে। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের সাথে সম্পর্কিত। উচ্চ হোমোসিস্টাইনের মাত্রা ধমনীর ক্ষতি এবং করোনারি ধমনী রোগ, স্ট্রোক এবং পেরিফেরাল ভাস্কুলার রোগের মতো অবস্থার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ভিটামিনটির অভাবে দেখা দেওয়া অ্যানিমিয়া হৃৎপিণ্ডকে চাপ দিতে পারে। কারণ রক্তে অক্সিজেন-বহন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় হৃদপিণ্ডকে।
- অন্ত্র এবং মুখের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি। জিহ্বার প্রদাহ (গ্লোসাইটিস) এবং মুখে ঘা বা আলসারের কারণ হতে পারে এই ভিটামিনের অভাব। কারোর কারোর ক্ষেত্রে হজমের ব্যাঘাত, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দিতে পারে।
কোন কোন খাবারে পাবেন ভিটামিন বি ১২
প্রাণীজ প্রোটিন যেমন মাংস ও কলিজায় পাওয়া যায় এই ভিটামিন। টুনা, সার্ডিন ও স্যামন মাছে পাবেন ভিটামিন বি ১২। প্রচুর পরিমাণে বি ভিটামিন মেলে ডিম থেকে। এছাড়া পনির ও দই খেতে পারেন নিয়মিত।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া