X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ সমকালীন সাহিত্য

মোজাম্মেল হক নিয়োগী
১০ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০০আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০০

সমকালীন সাহিত্য একই কালে বর্তমান বা ঘটিত সাহিত্যকর্মকে বোঝানো হয়ে থাকে যাকে ইংরেজিতে contemporary literature হিসেবে গণ্য করা হয়। তার মানে সমকালীন সাহিত্য হলো বর্তমান সময়ের প্রতিনিধিত্বমূলক সাহিত্য, সময়ের ধ্বনি ও ভাষা, সময়ের ছবি, সময়ের সুর, সময়ের তাল ও লয়, সময়ের ছন্দ এবং সময়ের সাহিত্যবিভা।
একইসূত্রে প্রশ্ন দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক যে বর্তমান সময়ের অর্থাৎ সমকালের ব্যাপ্তি কী? কত বছরকে সমকাল হিসেবে বিবেচনা করা উচিত? এর উত্তর সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া সম্ভব নয়; কেননা এ-রকম কোনো সংজ্ঞা এখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি তথাপি ইন্টারনেটের যুগে গুগলে সার্চ দিয়ে সমকালীনতা ও সমাকালীন সাহিত্যের একটি সীমারেখা পাওয়া যায় যে সীমারেখা ধরে সমকালীন সাহিত্যসম্ভার নিয়ে কথা বলা যেতে পারে- বর্তমানে যা ঘটছে অথবা আমাদের যাপিত জীবনের বিষয়ই সমকালীনতা বুঝায়। সুতরাং আমরা যখন সমকালীন সাহিত্য নিয়ে কথা বলি, তখন বর্তমানে যা লেখা হচ্ছে তাই বোঝানো হয়। কিন্তু এর মাধ্যমে কি সবকিছু বোঝানো যায়? তাই সমকালীন সাহিত্য বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যা লেখা হচ্ছে তাই বোঝানো হয়। যদিও এই সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা রয়েছে। যদিও এর মাধ্যমে এই ধারণার পরিষ্কার কিছু বোঝা যায় না তবু সাহিত্যাচার্যগণ এই ধারণাই পোষণ করেন। এই নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহিত্যাচার্য মনে করেন ১৯৪০ সালের পরবর্তী সময়ের সাহিত্যকে সমকালীন সাহিত্য বলা যুক্তিযুক্ত।
ইন্টারনেটের প্রাপ্ত সূত্র থেকে সাহিত্যে সমকালীনতার অনুসন্ধানে নেমে আরও একটি বিষয় সামনে এসে দাঁড়ায় যে, আধুনিক সাহিত্য বা মডার্ন সাহিত্যের কোন সময়কে বিবেচনা করা উচিত। এখানেও সংশয়পূর্ণ একটি সময়রেখা পাওয়া যায় যেখানে খুব সুনির্দিষ্ট করে আধুনিক সাহিত্যের সময়কে বিভাজন করা হয়নি। অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যায় যে, আধুনিক ও সমাকালীন সাহিত্যের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো সময়ের ব্যাপ্তি। আধুনিক সাহিত্য উনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে শুরু করে ১৯৬০ পর্যন্ত বুঝানো হয় এবং সমকালীন সাহিত্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর থেকে ধরা হয়। সমকালীন ও আধুনিক সাহিত্য একটির সঙ্গে অন্যটির যুগপৎ ঘটনা বা একটির সঙ্গে অন্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং অনেকেই এই দুটির মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারেন না। যদিও উভয় ধারণাই নতুন ও বর্তমানকে বোঝায় এবং শাব্দিক অর্থে সমকালীন সাহিত্য আধুনিক সাহিত্যের অনুগামী।  কিন্তু এই সময় বিভাজনের ক্ষেত্রে মতানৈক্যতা রয়েছে।
অন্য একটি ইন্টারনেটের সূত্র থেকে জানা যায় যে, অনেক ইতিহাসবেত্তা আধুনিক যুগ বলতে ১৫০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত বুঝিয়ে থাকে। সময়ের এই ব্যাপ্তি মধ্যযুগের শেষ ভাগকে বোঝানো হয়ে থাকে। অধিকন্তু, ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনাকাল এবং কেন্দ্রিয় সরকারের উত্থানকাল থেকে আধুনিক যুগকে চিহ্নিত করা হয়।
যাহোক, সাহিত্যে সমকালীনতার সুনির্দিষ্ট কোনো সময়রেখা পাওয়া না গেলেও মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যায়, যে ধারণা থেকে সমকালীন বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।   
বাংলাসাহিত্যের সমকালীনতা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে গিয়ে যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়কে বিবেচনা করা হয় তাহলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সাহিত্যকে এড়িয়ে যেতে হয়। তখন এই সময় নিয়ে আরও দোদুল্যমানতা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। সমকালীন ও আধুনিক সাহিত্য থেকে তাহলে এই দুই মহান সাহিত্যিককে এড়িয়ে যেতে হবে? তাঁদের সাহিত্যকর্মে কি আধুনিতকার উত্তাপ নেই? আমাদের কি সে রকম মনে হয়? বরং এই দুজনের সঙ্গে তখনকার অর্থাৎ ত্রিশের দশকের খ্যাতিমানদের সাহিত্যকর্মকে আমরা এখনও আধুনিক সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করে থাকি এবং তাঁদের সাহিত্যকে বাদ দিয়ে সাহিত্যালোচনা গৌণ হয়ে যায়। এরপরও আমাদের চিন্তা বিশ্ব সাহিত্যের আঙ্গিনায় আধুনিকতার মানদণ্ডে পূর্বোক্ত সুখ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিকদের কীর্তি ধোপে টিকবে কিনা সন্দেহও থেকে যায়। তাই বলা যায় যে, এসব জটিল সমীকরণে না গিয়ে বরং চোখ-কান বন্ধ করে যদি ভাবা যায়, সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির বর্তমান কালকে কোন সময় থেকে বিবেচনা করা উচিত তখন অন্তত বাংলা সাহিত্যকে বিগত একশ বছর মোটা দাগে ধরা পড়ে।
আজকের আলোচনায় বিগত একশ’ বছরের সাহিত্য নিয়ে জটিল আলোচনায় যাওয়া দুরূহ বলে এখানে স্বাধীনতার পরবর্তীকালই চোখের সামনে মোটা দাগের কিছু বিষয় এবং এই সময়কে আরও সংকীর্ণ করে তিন চার দশকে বিভাজন করে কিছু বিষয়কে উল্লেখ করার প্রয়াস চালালাম। একটি কথা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন যে, শিল্পসাহিত্যের ব্যাপারে সময়ের বুকে বেশি করাত চালালে শিল্পসাহিত্য বিধ্বস্ত ও বিপন্ন হতে বাধ্য। এ-কারণে সময়কে কাটাছেঁড়া না করে আমাদের হালের সাহিত্যকর্ম নিয়ে কথা বলাই উত্তম মনে করি। 
সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশেষ কোনো একটি শাখাকে নিয়ে আলোচনা করা সমীচীন নয় বলে মনে করি। তাহলে সাহিত্যালোচনার অপূর্ণতা থেকে যায়। এদিক থেকে ধরা হলে শিশু-কিশোর সাহিত্য থেকে শুরু করে বড়দের সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার আলোচনা-পর্যালোচনা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়; যেমন- ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, গান ইত্যাদি। কিন্তু এই শাখাগুলোর সব বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। শিশুসাহিত্যে এই সময়ে সৃজনশীলতা ধারাবাহিকতায় উল্লেখযোগ্য বাঁক পরিবর্তন হয়েছে যা বর্তমান লেখকের দু-তিনটি প্রকাশিত প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের শুরুটা হয়েছিল স্বাধীনতার পর থেকেই কয়েকটি এনজিও-র মাধ্যমে এবং বিগত এক দশকে মূলধারার লেখক ও প্রকাশকের মাধ্যমে অনেকাংশে পূর্ণতা লাভ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রশ্ন আসতে পারে কী পরিবর্তন? বিষয়টি অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শিশুসাহিত্য বলতে পূর্বের খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের যে ধরনের গল্প বা ছড়া পড়েছি সেগুলো বয়স বিবেচনায় ছোটো শিশুদের (ইংরেজি সাহিত্যে যাদের ইয়ং চিলড্রেন বা আর্লি গ্রেড চিলড্রেন বা টডলার গ্রুপ বলা হয়) জন্য উপযোগী ছিল না। ছোটো বলতে তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের বোঝানো হয়ে থাকে। বিগত এক দশকে ছোটো শিশুদেরসহ বয়সভিত্তিক চাহিদা পূরণের জন্য কয়েকটি এনজিও, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও অনেক লেখক সচেতনভাবে উল্লিখিত বয়সের শিশুদের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হয়েছে। এসব সাহিত্যে শুধু বয়সভিত্তিকই নয় বরং বই রচনার সময় লেখকরা সচেতনভাবে শব্দ চয়ন, বাক্যগঠন, গল্প ও ছড়া-কবিতা নির্মাণ করছেন। অবশ্য স্বীকার করতে হবে যে, শিশুসাহিত্যের উপাদান রূপকথা, কল্পনাশ্রিত ঘটনা, ভৌতিক ঘটনা ইত্যাদির কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও কিছু সাহিত্যে পাওয়া যায় রূপকথা, বিজ্ঞান ও পরাবাস্ততার মিশ্রিত রূপ যা শিশুদের মনোজগত বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। 
অনস্বীকার্য যে, যেকোনো দেশের শিল্পসাহিত্যে সেই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত ও সর্বোপরি মানুষের জীবনবাস্তবতার ঘটনাপ্রবাহ প্রতিফলিত হয় যা সময়েরও আনুভূমিক নির্দেশক। সে হিসেবে সাহিত্যে সময় মৌল ধ্রুবক নয়, মৌল ধ্রুবক সমাজের ঘটনাপ্রবাহ যে ধ্রুবক বিশ্লেষণ করলে সময়ের প্রতিলিপি পাওয়া যায়। স্বভাবতই বাংলাসাহিত্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত উপাদানই বিদ্যমান। স্বাধীনতার পর পরই কবিতার প্রধান আশ্রয় ছিল মানবতা, যুদ্ধ এবং সাম্যবাদ তথা সমাজতান্ত্রিক মতবাদের স্রোত। বাংলাভাষার প্রধান প্রধান কবি-সাহিত্যিকগণও সমাজতান্ত্রিক তথা বামধারার রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এবং সেই আদর্শেই তাদের লেখালেখি করতেন। মূলত বাম রাজনীতি ঘরানাতে সাহিত্যের মোড়লদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। কিন্তু সেই স্রোত থমকে যেতে বেশিদিন সময় লাগেনি; নব্বইয়ের দশকেই কবিতা ও কথাসাহিত্যের প্রধান উর্বর ভূমি হয়ে ওঠে সামারিক জান্তাদের দুরাচারের দিনলিপি। দেশের প্রায় সব কবি-সাহিত্যিকের লেখায় রাজনীতি একটি বিশেষ স্থান দখল করে। তাঁদের লেখায় স্থান পায় গণমানুষের যাপিত জীবনের কথা, মানবেতর জীবনগাথা। স্বাধীনতার পর যেমন সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রায় সব কবি-সাহিত্যিক লিখেছেন ঠিক তেমনই আশির দশক থেকে সেই ধারা মুখ থুবড়ে পড়ে। একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, সাহিত্যে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মানবপ্রেম সব সময়ই টাটকা ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। 
বাংলাসাহিত্য অনেক সময়ই পশ্চিমা সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত এই অভিযোগকেও উপেক্ষা করার উপায় নেই। বঙ্কিমচন্ত্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাসের ধারায় পশ্চিমাদের প্রভাব রয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বঙ্কিমচন্ত্র চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমাদের উপন্যাসের কাঠামো অনুসরণ করেছেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যে চেতনাপ্রবাহ রীতির প্রভাব রয়েছে বলে যে অভিযোগ সমালোচকদের লেখায় পাওয়া যায় সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও কমলকুমার মজুমদার এই ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্ত রয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন। তিনি নিজস্বতা বজায় রেখেই সাহিত্য রচনা করেছেন বলে আচার্যগণের অভিমত। 
কালের উত্তরণে আরও প্রমাণ মিলে যে, মার্কেসসহ আরও কয়েকজন লাতিন আমেরিকান সাহিত্যিকদের জাদুবাস্তবতার সাহিত্যের প্রভাব বাংলা সাহিত্যে প্রবলভাবে স্থান করে নিয়েছে যা এখনও চলমান রয়েছে। গত দুই দশকে জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতার স্রোতধারায় আমাদের কবিসাহিত্যিকদের মধ্যে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে। হয়তো ভুল বা অত্যুক্তি নয় যে, প্রায় সব কবিসাহিত্যিকই এসব মতবাদের ভিত্তিতে সাহিত্য রচনা করতে প্রয়াসী হয়েছেন এবং কেউ কেউ সফল হলেও অনেকেই ব্যর্থও হয়েছেন।
জাদুবাস্তবতার ভিত্তিতে রচিত কথাসাহিত্যে শহীদুল জহিরই এখন পর্যন্ত একজন সফল লেখক হিসেবে স্বীকৃত এবং অনেক নবীন লেখক তাঁর অনুসারী হয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে লক্ষ করা যায়। 
বাংলা কবিতা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কবিতার সঙ্গে পাঠক এগুতে পারেননি বলেই কবিতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই বিষোদাগার হচ্ছে এই মর্মে যে এখনকার কবিতা বোধগম্য নয়। বাংলা কবিতাতেও জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, উত্তরাধুনিকতা শিকড় গেড়েছে বলে পাঠককুল তাল মিলাতে পারছেন না। তবে একথাও সত্য যে, পাঠকের অনগ্রসরতার জন্য শিল্পসাহিত্য থেমে থাকতে পারে না; বরং আশা করতে পারি পাঠকও একসময় তৈরি হয়ে যাবেন, সেদিন হয়তো দূরে নয়। 
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে, বিশেষ করে উপন্যাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করেছে মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক বিষয়। ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে কেবল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ইতিহাস নয় বরং অনেক লেখক দীর্ঘকাল পরিশ্রম করে বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা বা ইতিহাসকে বিচার-বিশ্লেষণ করে চরিত্র ও কাহিনি নির্মাণ করেন। বলা বাহুল্য যে, সাহিত্যে অবদানের জন্য দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবৎ কালে সবচেয়ে বেশি ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাস বা কথাসাহিত্যকেই পুরস্কারে ভূষিত করেছে। যদিও সামাজিক উপন্যাস সাহিত্যের সমকালীনতা বেশি প্রতিনিধিত্ব করে তথাপি সামাজিক উপন্যাসের হয়তো নির্মাণের জন্যই বাংলাদেশে মর্যাদা কম পাচ্ছে। সাহিত্যের পুরস্কারও একটি বিশেষ প্রণোদনা বলে প্রতীয়মান হয় যার ফলে অনেককেই ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস বা গল্প লেখার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এমন একটি প্রবণতা বা ঝোঁক সাহিত্যিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। 
সমকালের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। খ্যাতিমান কবিসাহিত্যিকবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে যে দলকেই সমর্থন করেন না কেন শিল্পসাহিত্যে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বা বলিষ্ট ভূমিকা রাখছেন তাঁরা প্রায় সবাই অগ্রসর চিন্তক ও বাম ঘরানার। এখানে নেতৃত্ব বলতে সাংগঠনিক নেতৃত্বের চেয়ে তাঁদের উৎকর্ষিত লেখা ও অগ্রসর চিন্তার প্রতিফলনকেই বুঝানো হচ্ছে।   
সবশেষে নাটক-সিনেমার কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। মঞ্চ নাটকগুলো ইতিহাস ও মিথের প্রাধান্য লাভ করলেও সিনেমা ও টিভি নাটকগুলো সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও হালকা জলো প্রেমের রসিকতাই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে বলে এগুলো বোদ্ধা শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। শিল্পসাহিত্য মূলত ছেলেখেলার বিষয় নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্বতা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত, লেখার গভীরে দর্শনের স্থান না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সাহিত্যই মহাকালে টিকে থাকবে বলে মনে হয় না। এজন্য উপসংহারে বলা যায়, শিল্পের চর্চা করতে এসে আত্মত্যাগী প্রকৃত শিল্পী হতে হবে এবং সমকাল বিবেচনায় রেখে শিল্পের উন্নয়নের জন্য নিজস্বতা তৈরি করতে হবে। নিজস্বতা বা মৌলিক ধারা তৈরির জন্য মৌলিক চিন্তার দ্বার উন্মোচন করা অত্যাবশ্যক।    

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা