X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্প

ঘটনার অপূরণীয় ধ্বনি

সুমন গুণ
১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৬আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৭

বাস্তবতাকে স্পর্শ করে মানুষের মনে তার অতিজীবিত উত্থান বাংলা কথাসাহিত্যে যে লেখকেরা নির্মমভাবে বর্ণনা করেছেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁদের একজন। বিষয় ও ভাষার আলোছায়াময় সরণি নির্মাণে তাঁকে এই ধারায় অগ্রগণ্য বলা যায়। তাঁর আগে এই ঘরানার শীর্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায়। জগদীশ গুপ্তের নামও এই প্রসঙ্গে মনে পড়তেই পারে, কিন্তু বাস্তবতার শ্রম, গন্ধ, ঘাম আর আর্তি, আহ্লাদ, হাহাকারের চলন মনে রাখলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সখ্য টের পাওয়া যাবে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখা,  এখন আমরা যাদের নিম্নবর্গ বলি, তাদের জীবনযাপনের নানা মাত্রা স্পর্শ করে রচিত। তাঁর প্রথম গল্পের বই ‘নয়নচারা’র নামগল্প আর ‘মৃত্যু-যাত্রা’র ভর ছিল সেই সময়ের বাংলার করাল দুর্ভিক্ষ। পরের গল্পের বই ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’-এর প্রকাশকাল খণ্ডিত স্বাধীনতার ক্ষতে দূষিত। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সময়ের এই বিধ্বস্ত প্রেক্ষিত কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবন নিরন্ন করে দেয়, নিঃস্ব করে দেয়, নিরর্থক করে দেয়, তার অপূরণীয় ভাষ্য। এই চর্চার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে ভাষার গূঢ় স্থাপত্যে। এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা আবারও মনে পড়ে। মানিকের গল্প-উপন্যাসের ভাষার মধ্যেও আছে মোহিনী উত্থান। ভাষা নিজেই সেখানে নিজস্ব ঠমকে আলাদাভাবেই ধনী হয়ে ওঠে, বিষয়ের জটিল দর্শনের সঙ্গে তার রমণীয় অনাচার তৈরি হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে সফলতমভাবে এই অঘটন ধরে রাখতে পেরেছিলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্। তাঁর ভাষার মধ্যেও অনেক গুপ্তকক্ষ আছে, অমীমাংসা আছে, উদ্ধারও আছে। ভাষাকে তিনি স্বাধীনভাবে গড়িয়ে যেতে দেননি, তাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, শাসন করেছেন, পথ দেখিয়েছেন। এটা না করে তাঁর উপায় ছিল না, কারণ তাঁর রচনার ভর যে বিষয়ে, তার ঐতিহ্যসম্মত সরণি ও গন্তব্য আছে, সমাধানও আছে এবং এই চলন সমর্থন আদায় করে নেয় পারিপার্শ্বিক থেকে, নৈতিকতা থেকে, বন্ধুত্ব থেকে। এই ঘরানার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এই যে, নির্ধারিত রটনার সঙ্গে সহমত না হলে যেকোনো মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে, হাতের রাশ ঈষৎ শিথিল হয়ে পড়লেই পতন অবধারিত। ভাষার ওপর অসহনীয় কর্তৃত্ব না থাকলে এই কৌশল আত্মহত্যার সমান। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সেই দাপট ছিল। ঘটনাকে গ্রহণ করে গ্রহান্তরের রহস্য ও সৌন্দর্য উদ্ধার করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এখানে সৌন্দর্য শব্দটি ভুল বোঝার সুযোগ করে দিতে পারে। ক্ষুধা ও ক্ষয় যে-লেখার বিষয়, সৌন্দর্যের সঙ্গে তার বোঝাপড়া অসম্ভব বলেই মনে হতে পারে আমাদের। এখানে সাহিত্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশ্বজোড়া নানা তত্ত্ব ও দর্শনের হদিস না দিয়ে আমরা বরং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘নয়নচারা’ গল্পটি থেকে অল্প উদ্ধৃতি নিতে পারি :

‘ঘনায়মান কালো রাতে জনশূন্য প্রশস্ত রাস্তাটাকে ময়ূরাক্ষী নদী বলে কল্পনা করতে বেশ লাগে। কিন্তু মনের চরে যখন ঘুমের বন্যা আসে, তখন মনে হয় ওটা সত্যিই ময়ূরাক্ষী : রাতের নিস্তব্ধতায় তার কালো স্রোত কলকল করে, দূরে আঁধারে ঢাকা তীররেখা নজরে পড়ে একটু একটু, মধ্যজলে ভাসন্ত জেলেডিঙিগুলোর বিন্দু বিন্দু লালচে আলো ঘন আঁধারেও সর্বংসহা আশার মতো মৃদু মৃদু জ্বলে।

তবে, ঘুমের স্রোত সরে গেলে মনের চর শুষ্কতায় হাসে : ময়ূরাক্ষী! কোথায় ময়ূরাক্ষী! এখানে তো কেমন ঝাপসা গরম হাওয়া। যে হাওয়া নদীর বুক বেয়ে ভেসে আসে সে হাওয়া কি কখনো অত গরম হতে পারে।’

নিরন্ন ও ছিন্নমূল একজন মানুষের অনুভবের মধ্যে একটি উহ্য অথচ নিরুপায় কল্পনা অগোচরেই সৌন্দর্যের শিখা উসকে দেয়। সাহিত্যের কাজই তো তাই। বিস্ময়ের উদ্বোধন। যা বাকপথাতীত, তাকে প্রকাশ করা এবং এই প্রকাশকালীন পর্যটনে সৌন্দর্যের ছোট ছোট স্টেশন ছুঁয়ে ছুঁয়ে  যাওয়া। সব স্টেশন যে সমানভাবে লক্ষণীয় তা নয়। কোনোটি নিচু ও নিঃশব্দ, কোনোটি আলোকোজ্জ্বল, কোনোটিতে অন্ধকার বেশি পাঠ্য। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচনা এই বিচিত্র সান্নিধ্যের অভিজ্ঞতা দান করে আমাদের।

‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে হরিহরের সেই অবিশ্বাস্য ও অব্যক্ত কান্নার দৃশ্যটি আমাদের সবারই মনে আছে। ‘নয়নচারা’ গল্পের এই অংশটি আমাকে সেই দৃশ্যের কথা মনে পড়ায় :

‘অনেকক্ষণ পর তার খেয়াল হলো যে একটা বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে, আর তার গলার সুড়ঙ্গ দিয়ে একটা আর্তনাদ বেয়ে বেয়ে উঠছে ওপরের পানে এবং যখন সে আর্তনাদ শূন্যতায় মুক্তি পেল, রাত্রির বিপুল অন্ধকারে মুক্তি পেল, অত্যন্ত বীভৎস ও ভয়ংকর শোনাল তা। এ কি তার গলা- তার আর্তনাদ? সে কি উন্মাদ হয়ে উঠেছে? অথবা কোনো দানো কি ঘর নিয়েছে তার মধ্যে? তবু, তবু, তার মনের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে সুড়ঙ্গের মতো গলা বেয়ে তীক্ষ্ম তীব্র বীভৎস আর্তনাদের পর আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে লাগল, আর সে থরথর করে কাঁপতে লাগল আপাদমস্তক।’

বেদনা ও আর্তির সান্নিধ্যে এই বর্ণনা ‘পথের পাঁচালী’র সেই দৃশ্যটির সঙ্গে তুলনীয় হয়। হরিহরের মনের বিপন্নতা ও হাহাকার বোঝানোর জন্য সত্যজিৎকে সেই দৃশ্যটির কল্পনা করতে হয়েছিল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ও মূলত মনের বহুস্তর ও অনিশ্চিত ভাষার অনুবাদ করতে চান। মুমূর্ষুর অন্নভিক্ষার কাতরতা কত মর্মান্তিক হতে পারে, এই বর্ণনাটি তা নীরব নিরাসক্তির সঙ্গে ধরিয়ে দেয়।

এই নিরাসক্তি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ভাষার সম্পদ। এত  নিস্পৃহভাবে তিনি তীব্র ও নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দেন যে আমাদের স্তম্ভিত হতে হয়। এই সংবরণ বিষয়ের বিপর্যয় আরও উগ্র করে। ‘স্তন’ গল্পের মাজেদা প্রতিবেশীর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে যখন দেখল যে তার বুক থেকে দুধ বের হচ্ছে না, তখন তার মনে অমঙ্গল চিন্তা আসে। কারণ তিন দিন আগেই তার সদ্যোজাত সন্তানকে সে হারিয়েছে। ‘মনের প্রান্তে একটি নির্লজ্জ কণ্ঠধ্বনি স্পষ্টভাবেই সে শুনতে পায়। সে কণ্ঠ বিজয়ীর সুরে বলে, নিজের সন্তান মরে গেছে তো, বুকে দুধ আর আসবে কেন।’ কিন্তু ‘তার যে স্তনভরা দুধ, সে কথা কি সে জানে না?’

তার মনে হয়, ‘তবে কুচাগ্রে কী যেন আটকে আছে বলে দুধটা সরছে না। বোতলের গলায় ছিপি আটকে গেলে যেমন কিছু সরে না, এও তেমনি হয়েছে।’

মাজেদা হঠাৎ ধীরস্থিরভাবে উঠে বসে। তার মুখে একটি বিচিত্র শান্তির ভাব। সে জানে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তার মাতৃত্বের দাবি স্থাপিত হবে, তার মৃত সন্তানও ফিরে আসবে।

মাজেদা আর দেরি করে না। তার সময় নেই। দৃঢ় হাতে সে ব্লাউজের বোতাম খুলে প্রথম ডান স্তন, তারপর বাম স্তন উন্মুক্ত করে। এবার বালিশের নিচে থেকে একটু হাতড়ে একটি সরু দীর্ঘ মাথার কাঁটা তুলে নেয়। তারপর নিষ্কম্প হাতে সে কাঁটাটি কুচাগ্রের মুখে ধরে হঠাৎ ক্ষিপ্রভাবে বসিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ একটি সুতীক্ষ্ম ব্যথা তিরের মতো ঝলক দিয়ে ওঠে। সহসা চতুর্দিক নিবিড় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়। তবে সে টুঁ-শব্দটি করে না। একটু অপেক্ষা করে পূর্ববং দৃঢ় নিষ্কম্প হাতে একবার শুধু স্পর্শের সাহায্যেই নিশানা ঠিক করে সে দ্বিতীয় কুচাগ্রেও কাঁটাটি বিদ্ধ করে। আবার সে মর্মান্তিক ব্যথাটি জাগে। ক্ষণকালের জন্য তার মনে হয়, সে চেতনা হারাবে। কিন্তু অসীম শক্তিবলে সে নিজেকে সুস্থির করে। দেহে কোথাও মর্মান্তিক ব্যথা বোধ করলেও সে বুঝতে পারে, তার স্ফীত সুডৌল স্তনদুটি থেকে তরল পদার্থ ঝরতে শুরু করেছে। স্তনের নালায় যে বাধাটি ছিল সে বাধা দূর হয়েছে। স্তন থেকে দুধ সরতে আর বাধা নেই।

বাইরে এবার সালাহউদ্দিন সাহেবের গাড়ির আওয়াজ শোনা যায়। মাজেদা সে আওয়াজে এবার আতঙ্ক বোধ করে না। তার স্তন থেকে যখন দুধ ঝরতে শুরু করেছে তখন আতঙ্কের আর অবকাশ নেই। তার স্তন থেকে দুধ ঝরে, অশ্রান্তভাবে দুধ ঝরে। তবে সে দুধের বর্ণ সাদা নয়, লাল।

বাখতিন ‘কার্নিভালাইজড লিটারেচার’-এর যে লক্ষণের কথা বলেছেন, আদর্শ আর আঘাতের যে সমন্বয়ের নজির তিনি দেখেছিলেন ভলতেয়ারের রচনায়,  বাংলার আরও কয়েকজন লেখকের মতো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচনাতেও তার পরিচয় আছে। তাঁর লেখা, ‘কার্নিভালাইজড লিটারেচার’-এর মতোই লোকজীবনের ভেতর থেকে সূত্র অর্জন করে। যদিও উপন্যাসের মতো চঞ্চল শিল্পমাধ্যমের কোনো স্থায়ী সংজ্ঞা দেয়া এখনও অসম্ভব, কারণ প্রথমত, তা মহাকাব্যের মতো মৃত পরিসর নয়; আর দ্বিতীয়ত, উপন্যাসের ভেতরে ভেতরে এত সমারোহময় জটিলতা যে প্রতি মুহূর্তে তার বিস্ফোরণ ঘটছে। উপন্যাসের মতোই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্পও একই সঙ্গে কথার যুগল মুহূর্তকে স্পর্শ করে বহুস্বরের দিগন্তে উড়াল দেয়। আর এই স্তরান্তরের মাধ্যম হলো সংলাপ। প্রত্যক্ষ আর অপ্রত্যক্ষ সংলাপ। উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিবাচনিক হয়ে ওঠে ভাষা আর এই দ্বৈতস্বর তার ভেতরে ধারণ করে, ছড়িয়ে দেয় বহুস্বরের বৈভব।

বাখতিনের উপন্যাসতত্ত্বের আর একটি বড় কথা হলো ব্যক্তি আর সমাজ-সময়-ইতিহাসের সম্পর্কের বিন্যাস। ব্যক্তি যে প্রথমত স্বতন্ত্র, সে কথা জানিয়ে বাখতিনের সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে হবে তার সময়ের প্রেক্ষিতে, সমাজের আওতায়, ইতিহাসের নিরিখে। তাহলেই একটি সামগ্রিক স্বর আর স্তরান্তরের বুনোট টের পাওয়া সম্ভব হবে। দেবেশ রায় ব্যাখ্যা করে বলেছেন  এভাবে : ‘টনি মরিসন যখন অ্যাফ্রো-আমেরিকান অতীত নিয়ে বা কার্টেজার যখন অস্উইথস্-এর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নিয়ে বা বাংলাদেশের অনেক ঔপন্যাসিক যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ন’মাসের বর্বরতা নিয়ে উপন্যাস লেখেন, তখন সেগুলো ব্যক্তির কাহিনি হয় না, ব্যক্তির বিকাশের বা ধ্বংসের কাহিনি থাকে না, তখন সেগুলো হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্ববিনাশী এক সিস্টেমের সশস্ত্র আক্রমণের কাহিনি ও সিস্টেমের বিজয়গাথা।’ 

আমি আগেও লিখেছি যে, কথাসাহিত্য প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা আমি ই এম ফর্স্টারের উদার উক্তিটি স্পর্শ না করে শুরু করতে পারি না। উপন্যাসের মহার্ঘ ভাষ্য রচনা করতে গিয়ে সরবে বলেন তিনি : ‘Yes...oh, dear, yes...the novel tells a story’। গল্প ও উপন্যাস থেকে গল্প হরণ করে নেয়ার অভিপ্রায়ের সঙ্গে আমরা বহুদিন ধরেই পরিচিত। ফিল্মেও কাহিনির নাছোড় চলনে টোল দিয়ে তৈরি সৃষ্টির জন্য আনুগত্যময় প্রস্তুতি রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়েই। আর কবিতা যে সংহতির শিল্প, সেই শিক্ষা আমরা মালার্মে-সহ আরও অনেক বরেণ্য রূপকারের কাছ থেকে সফলভাবে অর্জন করেছি। কিন্তু এটাও আমরা জানি যে, শিল্পের এই সমস্ত পরিসরেই গল্পের জন্য, কাহিনির জন্য, বিস্তৃতির জন্য আরাধনা সবসময়ই অক্ষুণ্ন ছিল। কথাসাহিত্যের বিশ্বযাত্রায় গল্প কখনোই অস্পৃশ্য ছিল না। জর্জ এলিয়ট এমনও মনে করতেন যে গল্প বলার জন্য কোনো একটিমাত্র পদ্ধতি না ধরে বিভিন্ন ঘরানা বেছে নেয়া জরুরি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাস নিয়ে কথা বলার সময় অনেকবারই ব্যবহার করেছেন গল্প শব্দটি। রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে বহুবর্ণময় সমারোহ, সেখানেও গল্পের সুবর্ণমণ্ডিত আসনটি যত্ন পেয়েছে, আদর পেয়েছে, লালন পেয়েছে। কেউ কেউ সেই বুননে নিজস্ব চলন যুক্ত করেছেন, ভাঙন রচনা করেছেন, স্পর্শ সঞ্চার করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহও গল্প বলেছেন, তাঁর গল্পেও কাহিনির চলন আছে, কিন্তু সেই গতির মুখটি ঘোরানো ভেতরের দিকে। এত পদধ্বনিময় গমন বাংলার খুব বেশি গল্পকারের লেখায় আমরা পাব না। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর কথা আমাদের মনে পড়বে, তবে তাঁর জোর মনের সর্পিল ভঙ্গিমার অনুগ্র জাগরণে। দেবেশ রায়ের গল্পের কথাও মনে পড়তে পারে, ‘দুপুর’ গল্প আমার এক্ষুনি মনে পড়ছে। এত নিপুণ, অবধারিত, অনুভূতিময় গল্প বাংলায় খুব বেশি লেখা হয়নি। একটি কথার সূত্রে এখানে আরেকটি কথা এসেছে, তার সূত্রে আরেকটি। যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি কথাকে তার সবটুকুসহ ধরে দিতে পারছেন তিনি, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ছাড়েননি। এটাই তাঁর গল্পের মৌলিক ধরন। অনুভূতির সুদূরতম স্তরে আলো না পড়া পর্যন্ত তাঁর স্বস্তি হতো না। নির্দিষ্ট কোনো দৃশ্যের সর্বস্ব নিঙড়ে না নিয়ে থামতেন না তিনি। তাঁর বর্ণনা একবগ্গা ছিল না। সুললিত বর্ণনার ছলে ভাবনাহীন পাতা ভরানোর একেবারে বিপরীত ছিল তাঁর ধরন। তাঁর প্রতিটি  গল্পেই এই ধরনটি প্রতিষ্ঠিত। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্পেও অনুভূতির তরঙ্গ স্পর্শ করার উদ্যোগ আছে, তবে  তা এতটা একরোখা নয়, আর একটু আসক্ত ও ধীর। 

 

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নামের বানানে হ-এর নিচে হসচিহ্ন আছে, কিন্তু হসচিহ্ন যুক্ত হ-এর পর মাত্রাযুক্ত বর্ণ ইউনিকোডে লেখা যায় না। তাই সর্বত্র ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’ লেখা সম্ভব নয়।- সম্পাদক

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
পায়ুপথে ৭০ লাখ টাকা সোনা নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল পাচারকারী
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়