২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতিমান লেখক হান কাং। এর আগে ২০১৬ সালে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের জন্য বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও তার বই ‘গ্রিক লেসন্স’, ‘দ্য ওয়াইট বুক’ ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার রচিত ‘দ্য ওয়াইট বুক’ এবং তার জন্ম ও জীবন সম্পর্কে উপলব্ধির কথা। সাক্ষাৎকারটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
প্রশ্ন : নতুন বইয়ে আপনার বোনের গল্প বলেছেন—তার জন্মের দুই ঘণ্টা পার হতেই সে মারা গিয়েছিল। কী আপনাকে এই ব্যাপারে লিখতে আগ্রহী অথবা সাহস জুগিয়েছিল?
হান কাং : আমি আমার বড় বোনকে নিয়ে লেখার পরিকল্পনা করিনি। আমার বাবা-মা আমাকে বড় করেছেন, তারা তাকে ভুলতে পারেননি। ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ লেখার সময় সেখানে সংলাপের মধ্যে একটা লাইন দিয়েছিলাম: “মারা যেও না। প্লিজ মারা যেও না।” আমার কাছে তা অদ্ভুতভাবে পরিচিত ছিল এবং আমার ভিতরে যেন তা স্থির হয়ে বসে ছিল। হঠাৎ করে আমি আবিষ্কার করলাম যে এ ব্যাপারটি আমার মায়ের স্মৃতি থেকে এসেছে: তিনি আমাকে বলেছিলেন—আমার জন্মের আগে মারা যাওয়া বোনের কাছে এই কথাগুলি তিনি বারবার বলতেন।
প্রশ্ন : আপনি লিখেছেন কীভাবে আপনি “সে-মৃত্যুর জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন।” কীভাবে এসব ব্যাপার আপনার বেড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করেছিল?
হান কাং : এসব শুধু হারিয়ে ফেলা সম্পর্কে ছিল না। আমরা কতটা মূল্যবান তা নিয়ে ছিল। আমার ভাই এবং আমাকে আমার বাবা-মা বলেছিলেন: “আমাদের কাছে তুমি দারুণ মূল্যবান একটি উপায়ে এসেছ এবং আমরা অনেক দিন ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।” তবে সেখানে দুঃখও ছিল। তা ছিল মূলত শোক এবং মূল্যবান জীবনের অনুভূতির মিশ্রণ।
প্রশ্ন : আপনি বইয়ে স্বীকার করেছেন যে আপনার মায়ের প্রথম দুটি শিশু মারা না গেলে আপনি এবং আপনার ভাইকে গর্ভধারণ করা হতো না। এসব নিয়ে ভাবতে এখন কেমন লাগে?
উত্তর : আমি যখন আমার মায়ের পেটে ছিলাম তখন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন, তাই তিনি প্রচুর ঔষধ খাচ্ছিলেন। যেহেতু তিনি খুব দুর্বল ছিলেন, তিনি গর্ভপাতের ব্যাপারেও ভেবেছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি অনুভব করলেন—আমি তার ভেতর নড়াচড়া করছি এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—তিনি আমাকে জন্ম দিবেন। আমি মনে করি পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং ভাগ্যের জোরে আমি এই পৃথিবীটা পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন : শুরুর পৃষ্ঠাগুলোতে আপনি বলছেন যে আপনি চান এই বইটি লেখার প্রক্রিয়াটি রূপান্তরমূলক হোক: তা কি সম্ভব হয়েছে?
উত্তর : হ্যাঁ, প্রক্রিয়াটি সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছে। প্রতিদিন ব্যাপারটি একটি ছোট নিয়মের মতো ছিল: প্রার্থনার মতো। আমি যখন লিখছিলাম, তখন মনে হয়েছিল যেন আমি আমাদের ভেতরের একটি নির্দিষ্ট অংশের কাছাকাছি চলে যাচ্ছি, যাকে ধ্বংস করা যায় না, যার ক্ষতি করা যায় না।
প্রশ্ন : কৈশোর থেকেই আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। আপনাকে তা কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
উত্তর : আমার মাইগ্রেন সবসময় আমাকে মনে করিয়ে দেয়—আমি মানুষ। কারণ যখন মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে, তখন আমাকে আমার কাজ, আমার পড়া, আমার রুটিন বন্ধ করতে হয়। তাই তা আমাকে সবসময় নম্র করে রাখে, আমাকে বুঝতে সাহায্য করে—আমি নশ্বর এবং দুর্বল। আমি যদি ১০০ শতাংশ সুস্থ এবং উদ্যমী থাকতাম তবে আমি লেখক হতে পারতাম না।
প্রশ্ন : আপনি বলেছিলেন ১৪ বছর বয়সেই আপনি জানতেন যে আপনি একজন লেখক হতে চান। কীভাবে জানতেন?
উত্তর : আমি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম। পরে, একজন পাঠক হিসেবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম—প্রত্যেক লেখকই উত্তর খোঁজেন এবং তাদের কাছে সেসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, কিন্তু তারা এখনও লিখছেন। তাই ভাবলাম আমিও তা করব না কেন?
প্রশ্ন : আপনার বাবাও একজন ঔপন্যাসিক। কোনোভাবে তিনি আপনাকে প্রভাবিত করেছিলেন?
হান কাং : আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন বাড়িতে অনেক বই ছিল—আমি মনে করি এগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
প্রশ্ন : তখন আপনার প্রিয় শিশুতোষ বই কী কী ছিল?
হান কাং : আমি অনেক কোরিয়ান লেখকের এবং অনুবাদের বই পছন্দ করতাম, যেমন: অস্ত্রিদ লিন্দগ্রিনের ‘দ্য ব্রাদার্স লায়নহার্ট’।
প্রশ্ন : কোন লেখক আপনার লেখাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন?
হান কাং: কোরিয়ান লেখকদের মধ্যে আমি লিম চুল-উয়ের ছোটগল্প পছন্দ করি। আর বিদেশি লেখকদের মধ্যে আমি দস্তয়েভস্কিকে ভালোবাসি।
প্রশ্ন : মৃত বা জীবিত কোন সাহিত্যিকের সাথে আপনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে দেখা করতে চাইবেন?
হান কাং : লেখকদের সাথে আমি দেখা করতে চাই না: এরই মধ্যে আমি তাদের বইয়ের মাধ্যমে তাদের সাথে দেখা করেছি। আমি যদি তাদের বই পড়ি এবং কিছু অনুভব করি তবে তা হবে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। লেখকরা তাদের বইগুলিতে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেন তাই আমার জন্য সেগুলি পড়াই যথেষ্ট।
প্রশ্ন : আপনার উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ আন্তর্জাতিক ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছে। এ পুরস্কার আপনার ক্যারিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলেছে?
হান কাং : আমি আরও পাঠক এবং বিস্তৃত শ্রোতাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। কিন্তু কয়েক মাস পরেই আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম, কারণ অনেক মনোযোগ পাওয়া একজন লেখকের জন্য সবসময় ভালো না। একই সাথে মনোযোগ গ্রাহ্য করা এবং লিখে যাওয়া অসম্ভব।
মূল: গার্ডিয়ান