X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১
'জীবনের শিলালিপি' থেকে

আমার ছেলেবেলা

কাজী শাহেদ আহমেদ
২৯ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২৫আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২৬

খুব অল্প বয়সেই আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমার দু'বছর বয়সের সময় সেজভাই অরুণ আর আমি একসঙ্গে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। মা একা সামলাতে পারছিলেন না বলে আমাদের নিয়ে নানাবাড়ি পয়গ্রাম কসবায় চলে যান। কিন্তু সেখানেও আমাদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। একদিন মায়ের হাতের পরেই অরুণ ভাই মারা যায়। তার বয়স ছিল চার। দেখতে ছিল একটা ছবির মতো। খবর পেয়ে যশোর থেকে আব্বা এলেন। অরুণ ভাইকে কবর দিয়ে আবার তিনি যশোরে ফিরে গেলেন। যশোরে সেদিন খুব ঝড় হয়, আমাদের খড়ের ঘরটা সেই ঝড়ে উড়ে যায়। সারারাত খোলা আকাশের নিচে ইজিচেয়ারে শুয়ে কাটান আব্বা। পরদিন সকাল হতে না হতেই পয়গ্রাম কসবা থেকে খবর যায় আমার আসন্ন মৃত্যুর। আব্বা আবার পয়গ্রাম কসবায় আসেন। কিন্তু আমি না মরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। তবে আমার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে বেশ কিছুদিন উঠে দাঁড়াতে পারতাম না। পয়গ্রাম কসবা কিংবা যশোরে যে-ই আমাকে দেখত, বলত- এটা বেঁচে গেছে!
আমার বেঁচে থাকাটাই অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল সবার কাছে।

ঘটনাটা ১৯৪২ সালের। এর ঠিক দু'বছর আগে ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর, বাংলা ১৩৪৭ সনের ২১ কার্তিক বৃহস্পতিবার, ভোর ৫টায় আমার জন্ম হয়। আমার বাবার নাম কাজী আনিসুর রহমান। দাদার নাম কাজী নওয়াব উদ্দিন আহমেদ। আমাদের বাসা যশোরের পুরাতন কসবার কাজী পাড়ায়। জমি সাত কাঠা। পশ্চিম পোতায় একটা খড়ের চালের ঘর, চাচের বেড়ার ও বাকি সব মাটির একটা বড় ঘর আছে। দক্ষিণ পোতায় ছোটখাটো অনুরূপ একটা ঘর, পুবের পোতায় আছে একটা কাঁচা রান্নাঘর আর উত্তর-পূর্ব কোনায় আছে একটা খাটা বা মিউনিসিপ্যালিটির টানা পায়খানা। ভেতরের দিকে আছে এক চিলতে সবজি বাগান আর দক্ষিণ দিকে রাস্তার দিকে আছে একটা ফুলের বাগান। রান্নাঘরের পাশে আছে ঘেরা একটি জায়গা, গোসলখানা হিসেবে যার কোনো চাল নেই । আর তার পাশে আছে একটা নারকেল আর একটা কাঁঠাল গাছ। অখুশি হওয়ার মতো কিছু নয়।

বাড়ির চৌহদ্দিটা মোটামুটি এ রকম। পুবে থাকেন ছাগুলে দাড়িওয়ালা মন্টু মিঞা তার সাইকেলের দোকান নিয়ে। দক্ষিণে থাকেন দক্ষিণ হতে আসা এক দপ্তরি, পশ্চিমে থাকেন ঢাকার প্রান্ত হতে আসা অফিসের এক পিয়ন আর উত্তরে থাকেন বউ পেটানো মংলা ট্রেনের এক কুলি।

আমার বন্ধু মোহাম্মদ নূরজালাল বিশ্বাস মাস্টারের বয়স যখন এক মাস, একদিন সে ঘরের বারান্দায় একা ঘুমাচ্ছিল। এমন সময় এক শিয়াল এসে তার গলা ধরে নদীর পাড়ের দিকে নিয়ে চলে যায় তাকে খাবে বলে। তবে তার মা দ্রুতগতিতে সে জায়গায় পৌঁছে যান ও শিয়ালের মুখ থেকে বাচ্চা নূরজালালকে রক্ষা করেন। এর থেকে আন্দাজ করতে পারেন আমরা ছোটবেলায় কোথায় ছিলাম। বাকি পুরাতন কসবার চিত্র প্রায় একই রকম।

আমাদের সেই বাড়িটা আজও আছে তবে ভেতরের চিত্র বদলে গিয়ে হয়েছে সাত সাতটি বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং, বারান্দা, অফিস ঘর, হল রুম, বাগান ইত্যাদি সব নিয়ে। সামনের জায়গাটুকু কিনে নিয়ে বানানো হয়েছে লন, অফিস ঘর আর বাগান। তা প্রায় আশি বছর হয়ে গেল আমরা এখানে আছি। দেয়াপাড়ায়ও বাড়ি আছে। প্রতিদিন চুলোয় আগুন জ্বলে। যাওয়া-আসা আজও আছে। দেয়াপাড়ায় সন্ধান করে আমাদের সতের পুরুষের কিচ্ছা কাহিনীর অস্তিত্ব, যা চারশত বছরের পুরনো, পাওয়া যায়। দেয়াপাড়া আমাদের অতীতের কথা বলে।

আমার পূর্বপুরুষরাও যশোরের রূপদিয়ার দেয়াপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। আমার সতের পুরুষের নাম দেয়াপাড়ায় লেখা আছে আর লেখা আছে দাদার বই সুধাসার-সংগ্রহে। আমার আব্বা তার পিতার চতুর্থ সন্তান। একটু উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের কিন্তু খুবই সুন্দর দেখতে ছিলেন। বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের স্কুল ছিল সাত মাইল দূরে। হয় নদী পথে; না হয় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটা পথে যেতে হতো। তাই আমার আব্বাও তার ভাইদের মতো বসুন্দিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন জায়গির থেকে। তা না হলে বন্য পশুর খাদ্যে পরিণত হতে পারতেন, কারণ পথ আর পরিবেশ ছিল জঙ্গলে আচ্ছাদিত। আব্বা স্কুলে গিয়েছিলেন আট-নয় বছর বয়সে। আমিও তাই। যে বাড়িতে জায়গির থাকতেন সেখানে পড়ার মতো কেউ ছিল না।

আব্বাকে সে বাড়ির নানা কাজ করতে হতো, এমনকি মাঠে কৃষাণদের ‘জাউ’ ভাতও পৌঁছে দিতে হতো। বাড়ির একমাত্র ঘরের বারান্দার একদিকে থাকতেন ওই বাড়ির নিকটআত্মীয় এক বৃদ্ধ লোক আর অন্যদিকে আব্বা। জঙ্গলের মধ্যে বাড়ি। অন্ধকার রাতে ওই জঙ্গলে বন্য পশু-পাখির অবাধ চলাচল লক্ষণীয়। ভীতিকর শব্দ ও বিচিত্র ভৌতিক পরিবেশ তখন বিচরণ করে। জোনাকির আলোতে জঙ্গলে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারই মধ্যে আব্বা ভয়ে ভয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়তেন বলতে পারতেন না। আব্বা ভীষণ ভয় পেতেন কিন্তু ওখানে না থেকে উপায় ছিল না তাঁর। বাড়ি এলে দাদা পিটিয়ে বের করে দিতেন। পড়তে যেতেই হবে।

একদিন সম্পর্কে আব্বার চাচাতো ভাই, মালেক চাচা ডাক নাম মালু ও আব্বা রূপদিয়া থেকে দেয়াপাড়ায় ফিরছিলেন। পথে ছোট্ট নদীর ওপর পুরনো সাঁকো পড়ল। পার হবেন এমন সময় দু'জনে দেখলেন নদীর ওপাশে একটি বাঘ পানি খাচ্ছে। আব্বা চিন্তা করছেন কি করা যায় কিন্তু মালু চাচা ছিলেন বোকা অতএব তিনি কোনো ধরনের চিন্তা না করেই সাঁকোর খাঁড়া বাঁশ ধরে তর তর করে মাথায় উঠে পড়েন এবং পরবর্তীতে সেই বাঁশ ভেঙে নিয়ে বাঘের সামনে গিয়ে পড়েন। আব্বার চিন্তা শেষ হওয়ার আগেই মালু চাচার এ কাজ করা শেষ। বাঘ ভয় পেয়ে দৌড়ে জঙ্গলে ঢুকে পালিয়ে গেল। আব্বা সাঁতার কেটে নদী পার হয়ে মালু চাচার সামনে এসে দেখেন মালু চাচা হাসছেন আর বলছেন দেখলি আনু কী করে বাঘ তাড়ালাম? আব্বার মুখে তখন হাসি ফুটল এই ভেবে যে, বোকা মালু বেঁচে আছে।

বৃদ্ধ লোকটি সারা রাত কাশতেন। তাতে আব্বার অসুবিধা হতো। তবে কেউ একজন আছে জেনে ভয়টাও আবার কম লাগত। একদিন রাতে কাশি আর শোনা গেল না। পরদিন সকালে আব্বা জানলেন বৃদ্ধ মারা গেছেন। আব্বা খুব ভয় পেয়েছিলেন কারণ এবার তাকে ওই বারান্দায় একাই থাকতে হবে! ভয় পেলেও নিস্তার পাননি। ওখানেই থাকতে হয়েছিল। ওই জঙ্গলে আর ওই বারান্দায়।
এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়।

বাড়িতে একদিন হারানের নতুন বউ 'খাতুন' এলো। বয়স পনের হবে। ক'দিন পর সেই সুন্দর ও গড়নে পাতলা সুন্দর চোখের বউটি আব্বাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে, এই 'পোড়ো' (শিক্ষক/মাস্টার), তুমি কি বসুন্দিয়া হাটে যাও'? আব্বার বয়সও তখন কম, চৌদ্দ হবে। তিনি বললেন, যাই।

খাতুন তখন বলে, জানো পোড়ো (শিক্ষক/মাস্টার), ওখানে আমার বাজান ওল, কচু, থোড় ইত্যাদি বিক্রি করতে আসে। বাজান আর সবার থেকে দেড় হাত লম্বা, দেখতে কালো কুচকুচে, বাবরি চুল আর দাড়ি আছে। তুমি একবার তাকে খুঁজে বের কর। ‘পারবা না?' শুধু একবার এনে দাও আর কখনো বলব না। বাজানকে শুধু জীবনে একবার দেখব।

আব্বা রাজি হন। কিন্তু তিনি খাতুনের সেই বাজানকে খুঁজে আর পাননি। প্রত্যেক হাটবার সন্ধ্যায় আব্বা খাতুনের সামনে পড়ে যান, তখন তিনি করুণ চিত্তে কাচুমাচু করে খাতুনকে জানান তার বাবাকে তিনি খুঁজে পাননি ।

আব্বা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হারানের সেই বউকে ভুলতে পারেন নাই কারণ খাতুনের বাচ্চা হয় না, তাই খাতুনকে ওর শাশুড়ি ভাত দিত না। ভাতের অভাবে আর বাজানকে দেখতে না পাওয়ার বেদনায় দুঃখে গলায় দড়ি দিয়ে মরে। আব্বা সব জানতে পারেন। আব্বা যখন আমাকে এসব কথা বলতেন তখন শুনতাম মনোযোগ দিয়ে আর দেখতাম আব্বার চোখ ছলছল করছে। তখন আমি আব্বার পা টিপে দিতাম। পা টিপতে টিপতে আব্বার কাছ থেকে বহু গল্প শুনেছি ও সত্য জেনেছি। আব্বা বলতেন সব মিথ্যা, চারিদিকে মিথ্যা। সত্য বেছে নিও এর মাঝ থেকে।

আর গল্প শুনেছি আমার নানির কাছ থেকে। নানির নাম ছিল সাজেদা। ডাক নাম সাজু, তার বাপের নাম ছিল সৈয়দ নুরুল হক। বাস ছিল বাগেরহাটের কান্দাপাড়ায়। সত্তর বিঘা জমির ওপর বিশাল বাড়ি ও পুকুর নিয়ে আজো আছে নানি বাড়ি। নানি শিক্ষিতা ছিলেন কিন্তু পয়গ্রাম কসবায় অতীতমুখী পরিবারে বিয়ে হয়ে বিশাল চৌহদ্দিবাড়ির মধ্যে থেকে এবং কোনোদিন বাংলা বর্ণমালা না দেখে সব ভুলে যান শুধু 'তালতলা' লিখতে ও পড়তে পারতেন কারণ বছরে একবার তালতলা স্টেশন হয়ে বাগেরহাট যেতেন তাই। তবে তিনি ছিলেন গল্পের ভাণ্ডার। আমাদের কয়েক ভাইবোনকে পেয়ে তিনি তার গল্পের ভাণ্ডার খালি করতেন। আমার নানার নাম ছিল কাজী গোলাম সোবহান। জমিদারির মামলা নিয়ে জড়িয়ে ছিলেন আটাশ বছর এবং শেষ পর্যন্ত সেই মামলায় পরাজিত হয়ে সর্বস্বান্ত হন আর পোর্টার্টি ডিলার হিসেবে যা আয় করতেন তার সম্পূর্ণ ভাগ তার এক বন্ধু তার হঠাৎ মৃত্যুর পর মেরে দেয় ও সেটা দিয়ে পয়গ্রাম কসবায় একটা সাদা দোতলা বাহারি বাড়ি তৈরি করেন। সেটা আজো আছে।

আমার ছোট বোন হাসনু সহজ-সরল মেয়ে। প্রথম দিন স্কুলে বাপের নাম জিজ্ঞাসা করলে বলে মরহুম কাজী আনিছুর রহমান। হেডমাস্টার বলে ওঠেন, তিনি মারা গেলেন কখন? সকালে তো দেখলাম। হাছনু তখন বলে ওঠে, তিনি তো মারা যাননি। মাস্টার তখন বললেন, তুমি যে মরহুম বললে? হাসনু বলে উঠল, 'মা'কে তার বাপের নাম জিজ্ঞাসা করলে বলেন, মরহুম গোলাম সোবহান...'। হেডমাস্টার বলেন বুঝেছি। তোমাকে নিয়ে খাটতে হবে।

যাই হোক এভাবেই প্রাইমারি শিক্ষাজীবন শেষ করে আব্বা তার সেজ ভাইয়ের কাছে গিয়ে ভর্তি হলেন যশোর জেলা স্কুলে। খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। বাংলা ইংরেজি দুটোতেই দক্ষ ছিলেন। ম্যাট্রিক পাস করলেন ফার্স্ট ডিভিশনে। সেজ ভাই দৌলতপুর কলেজে ভর্তি করে দিলেন। সেখানে গুটিকয়েক মুসলমান ছাত্র ছিল। বাকিরা হিন্দু। তবে আব্বা সবার প্রিয় ছিলেন ভালো লেখার জন্য। সবাই মিলে তাকে তাদের লিটারারি সেকশনের সেক্রেটারি করে দিলেন। তখন স্বদেশি আন্দোলনের যুগ। সে আন্দোলনে অনেকে জীবন দিল কলকাতায়। দৌলতপুর কলেজে নিহতদের স্মরণে সভা হলো। সেই সভায় বাবা আন্দোলনে নিহত বিনয়, বাদল, দিনেশ-এর ওপর স্বরচিত কবিতা পাঠ করলেন। কলেজ বন্ধ হলে ট্রেনে করে যশোরে আসছিলেন মৃত্যুপথযাত্রী বাবা-মাকে দেখার জন্য। সেই ট্রেনেই তাঁর সঙ্গে এক ভদ্রলোকের পরিচয় হলো। ভদ্রলোক খুব প্রশংসা করলেন সেই কবিতার এবং বললেন যদি কবিতার একটি কপি পেতেন তবে আরও অনেককে পড়ে শোনাতেন। আব্বা খুশি হয়ে তাকে দিয়ে দিলেন কবিতাটা। এ সময় দাদি মারা গেলেন, কিছুদিন পর দাদাও। আব্বা পরীক্ষা দিলেন এবং ফার্স্ট ডিভিশনে আইএ পাস করলেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতা রিপন কলেজে। এর মধ্যে আমার মেজ চাচার বিয়ে হয়। পয়গ্রাম কসবায়, চাচি একই সঙ্গে আমার মায়ের চাচাতো ও খালাতো বোন।

সেই সূত্রে আব্বার পয়গ্রাম কসবায় যাওয়া-আসা শুরু। আমাদের মা অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। আব্বা প্রেমে পড়লেন। যে প্রেম মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। আমার নানা ধনী লোক ছিলেন। কলকাতায় থাকতেন। তার ইচ্ছে ছিল না গরিবের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেয়ার। তবে উচ্চবংশ, লেখাপড়ায় ভালো, রিপন কলেজে পড়ছে। আগে অবস্থাসম্পন্ন নামি দামি লোক ছিল আর সৎ বংশীয়- এসব দেখেশুনে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছিলেন। ফোর্থ ইয়ারে পড়ার সময় পরীক্ষার কিছু আগে ঘটল এক দুর্ঘটনা। দৌলতপুর কলেজে পড়া তার স্বরচিত কবিতা যে লোকটি নিয়েছিল সে আসলে ছিল সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের লোক। এতদিন বাদে ওই কবিতার কারণে আব্বাকে কলেজ থেকে রাসটিকেট করা হয়। অবশ্য সেজ চাচা পই পই করে বাবাকে বলেছিলেন, 'স্বদেশী' উচ্চারণ করা যাবে না। রাসটিকেট হওয়ার পর আব্বা চাকরির খোঁজে লাগলেন। কিন্তু কোনো কাজই জুটছিল না, শেষকালে যখন চাকরির বয়স পার হয়ে যাবে যাবে অবস্থা তখন সেজ চাচা তাকে নিয়ে যশোর কালেক্টরেটের সুপারিনটেন্ডেন্ট বেলায়েত মুন্সীর কাছে হাজির করলেন। মুন্সী সাহেব দয়াপরবশ হয়ে আব্বাকে একটা কাজ দিলেন, টাকা গোনার কাজ। মাসিক বেতন পঁয়ত্রিশ টাকা। তখন চাপ এলো বউকে তুলে আনার। অন্যদিকে সেজ চাচা বলেন, ‘তোর এখন চাকরি হয়েছে, বউ হয়েছে, তুই নিজের পায়ে দাঁড়া'- এই বলে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন আব্বাকে। আব্বা তার ভাইয়ের বাড়ির কাছেই বাকি করে পঁয়ত্রিশ টাকায় সাত কাঠা জমি কিনলেন। অত টাকা একবারে দেয়া সম্ভব না। তাই ঠিক হয় মাসে পাঁচ টাকা করে শোধ করতে হবে। সেই জমিতেই একটি খড়ের ঘর তৈরি করে মাকে নিয়ে এলেন। মায়ের প্রথম জীবন কেটেছে কলকাতা আর পয়গ্রাম কসবার ছোটখাটো জমিদার বাড়িতে। স্বামীর সংসারে যার কিছুই নেই। তবু কোনো কিছু নিয়ে কোনোদিন মাকে এবং আব্বাকে নাখোশ হতে দেখিনি।

আব্বার পোস্টিং তখন নড়াইলে। বড়ভাই মার কোলে। সব সস্তা। সব পাওয়া যায়। বাতাস নির্মল। নদী তর তর করে চলে। ছোট্ট বাসা। সুখের জীবন তাতে একমাত্র বাঁধা একটা কাজের ছেলে বা ছ্যামড়া যা বাসায় দরকার। মা আব্বাকে রোজ মনে করান অফিসে যাওয়ার আগে। তাই একদিন দেখা গেল আব্বা অতিষ্ঠ হয়ে এক ছোকরাকে নিয়ে বাসায় হাজির। আব্বা ছোকরাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে উঠানে এসে মা'কে ডাকেন ও বলেন দুলালের মা তোমার কাজের ছেলে এনেছি। মা ঘর থেকে বেরুলে আব্বা ছেলেটাকে ঘুরে দাঁড়াতে বলেন। ছেলেটি চাপদাড়ি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সে ছিল বামুন। আব্বা বলে ওঠেন, এ ছাড়া তো আর কাউকে পেলাম না। শুনে মা হেসে ঘরের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন। আব্বার রসিকতা এতদূর পর্যন্ত যেতে পারত। এটা আব্বার কাছ থেকে শোনা গল্প।

সপ্তাহে দু'দিন যশোরে হাট বসত আব্বা হাটে যেতেন। প্রথম দিকে বড় ভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। তারপর আমাকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ে যান। কাজের লোক আগে-পিছে ছিল। কিছুদিনের জন্য ছিল না আর সেই সময়টা আমার সময়ে পড়ল। হাট থেকে আব্বা সবকিছু কিনতেন, তার নজর থাকত ভালো জিনিসের দিকে। আরও নজর পড়ত বান মাছ, ট্যাংরা মাছ ও ইলিশের আলাদা ডিমের দিকে। বাড়িতে এসে মাকে অনেক সাহায্য করতাম। ইলিশ আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। আমি আস্তে আস্তে রান্না শিখে গেলাম। এখনও রাঁধতে ভালো লাগে। এর মধ্যে মামা আসতেন, সঙ্গে কিছু আসত। দেয়াপাড়ার জমি আমার বাবা তার ছোট ভাইয়ের নামে লিখে দেন। এরপর আর গ্রাম থেকে তিনি কিছুই পেতেন না। শিক্ষা হচ্ছে লিখে না দেওয়া ভালো। এমনি থাক। নিজের প্রয়োজনে যেন আবার আয়ত্তে নেওয়া যায়।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলো। পেছন পেছন এলো দুর্ভিক্ষ। খাদ্যের অভাবে মানুষ মরে সাফ হয়ে গেল। সবার মতো আমাদেরও খাবারের সঙ্কট হলো। এর মধ্যে আমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একেবারে শয্যাশায়ী। মনে আছে— দু'দিন একরাত না খেয়ে ছিলাম। আমি তখন ভাত ছাড়া কিছু খেতে পারতাম না। অন্য ভাইয়েরা শাক-পাতা-কচু-ঘেঁচু এসব খেয়ে বেঁচে ছিল। দ্বিতীয় রাতে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। সবাই তাকিয়ে আছে। মা কাঁদছে। বাবা চালের জন্য বাইরে গেছেন। পয়সা আছে কিন্তু চাল কোথাও নেই। বড় ভাই আমাকে বুঝ দিচ্ছে, শন্তু, এখনই আব্বা এসে যাবে। চাল আসবে, ভাত হবে, তুই খাবি।' ক্ষুধার যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে বেশি। শেষ পর্যন্ত আব্বা চাল এনেছিলেন। আব্বা তার ঘোপের বন্ধু ধেনো অবস্থাপন্ন ট্রেজারার তোফাজ্জেল হোসেন বিএ-এর বাড়ি থেকে দু-বস্তা চাল আনেন। তোফাজ্জেল হোসেন বিএ খুব ভালো লোক ছিলেন। পরোপকারী ছিলেন। পরে তার ছেলে সিএসপি অফিসার হন এবং মেয়ের বিয়েও সিএসপি অফিসারের সঙ্গে হয়।

অনেক পরে, আব্বার মৃত্যুর আগে একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনার জীবনে নানা কষ্ট ছিল। কিন্তু আপনাকে তো কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি?' আব্বা সামান্য হেসে বলেছিলেন, শন্তু, তুই যখন ছোটকালে না খেয়ে মারা যাচ্ছিলি, তার দু'তিনদিন পর আমি তোকে হাতে করে খাওয়াচ্ছিলাম। তুই একটু পেটুক ছিলি। খেয়ে খুশিতে নিজের হাঁটু নিজেই চাপড়াচ্ছিলি আর বলছিলি, 'আব্বা কালকে না হলেও হবে, কালকের কালকে না হলেও হবে। আমি পানি খেয়ে থাকব কিন্তু তারপর দিন আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে চাল নিয়ে আসবেন। তা না হলে আমি বাঁচব না।' সেদিন আড়ালে গিয়ে আমি কেঁদেছিলাম। বাবা হয়ে সন্তানের মুখে ভাত দিতে না পারার গ্লানি বইবার শক্তি খুবই কম লোকের থাকে। অভাব যে কত কঠিন আর ক্ষুধা যে কী ভয়ঙ্কর, কী বেদনাদায়ক সোজা কথায় তা যারা দেখেনি তারা বুঝবে না। আমার ছোট ছেলে ইনাম একদিন জিজ্ঞেস করল, ‘আব্বু, তোমাকে সারাজীবন দেখছি রাতে শোয়ার সময় কিছু না কিছু খাবার টেবিলে রেখে শুতে যাও। কেন? খাও তো না!' ওর কথা শুনে খানিক চিন্তার পর বুঝলাম- ওই যে ছোটবেলায় ক্ষুধার কষ্ট পেয়েছি, খাবার না থাকা দেখেছি- হয়তো সেটাই এখনও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আমাকে। হেসে বললাম 'ভাত' আমার প্রিয়। ইনাম বললো, খাও তো একমুঠ। আবার হেসে বলি, পৃথিবীর বাকি লোকেরা খাবে, তাই।

পাকিস্তান হওয়া নিয়ে কত কী না হলো! এখানে রায়ট ওখানে রায়ট চলছিল। শেষপর্যন্ত যশোরেও রায়ট পৌঁছে যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে একদিন রহিম খন্দকার, যশোরের বড় দাঙ্গাবাজ লোক- এখান ওখান থেকে কিছু লোক জোগাড় করে লাঠিসোটা, দু-চারটে তলোয়ারও নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে এসে হাজির। সব ব্যাপারে, বিশেষ করে গুরুতর কিছু হলে- আমার আব্বার সঙ্গে পরামর্শ না করে কেউ কিছু করত না। তারা এসে বলল, আমাদের পাশে যে হিন্দুপাড়া আছে সেখানকার সবাইকে তারা মেরে ফেলবে।

আব্বা তা শুনে সবাইকে রাস্তার ওপর বসতে বললেন। নিজেও বসলেন এক পাশে। তারপর বললেন, 'কাজটা মহৎ। তবে মহৎ কাজ হঠাৎ করতে নেই। এর জন্য চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। অনেক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কারণ তারাও লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে। তারাও আক্রমণ করতে পারে। এটাও চিন্তার বিষয়। এ রকম অনেক কথাবার্তার পর আব্বা সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হলেন যে, গাঙদিয়াড়ে আবুল চাচার আমবাগানে কয়েক দিন 'প্র্যাকটিস' করতে হবে। তাতে সবাই একমত হলো। কথাটা আবার চারিদিকে একটু ছড়িয়ে দেওয়া হলো। চুড়িপট্টির ওদিক থেকেও কয়েকজন এসেছিল পরের দিন। কিছু প্রশিক্ষণও হলো। তার পরের দিন হলো। কথাটা ছড়িয়ে গেল। হিন্দুরাও সাবধান হয়ে গেল। মুসলমানরাও সাবধান হলো। মুসলমানদের ধৈর্য কম। তাই সবাই তিন দিন পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। তবে যার যার মতো তৈরি থাকতে বলা হলো। তবে ক'দিন পর থেমেই গেল ব্যাপারটা।

মাঝে মাঝে দেখেছি আমাদের বাড়িতে এম এম কলেজের অধ্যক্ষ সাহেব আসতেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাফট নিয়ে আব্বাকে দিয়ে শুদ্ধ ও পরিমার্জিত করাতে। তাছাড়া পুরাতন কসবার চাকরির দরখাস্ত তো ছিলই। যশোরে ভালো লেখক হিসেবে আব্বার সুনাম ছিল। তিনি ভালো কবিতা লিখতে পারতেন ও আবৃত্তি করতে পারতেন। তিনি বাংলায় রূপায়ণ এবং ইংরেজি Parting Words to Posterity এই দুটি বই লিখেছেন, যা ছাপা ও হয়েছে, তাছাড়া দাদাও লিখেছেন শতেক খানেক বই, যা ছাপা হয়নি।

একবার স্কুলে, তখন ক্লাস টু'তে পড়ি বোধহয়, খুব ক্ষুধা লাগল। দেখে গেছি বাড়িতে কিছু জাউ রান্না করা আছে। তিনটার দিকে হবে বোধহয় চলে এলাম স্কুল থেকে। রান্নাঘরে ঢুকে দেখি খালি হাঁড়ি সামনে নিয়ে মা বসে কাঁদছে, মনে হলো মা খিদেয় কাঁদছে। আরও একদিন- তখনও বেশ ছোট আমি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা-মা দু'জনের কেউ নেই। ঘর থেকে বের হতেই বাড়ির পেছনের নারকেল গাছের তলা থেকে আব্বা ও মা'র কথার আওয়াজ পেলাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে দেখি আব্বা বসে আছে মাথা নিচু করে। মা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আর বলছেন, 'আপনি অমন করছেন কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে।'
সেদিনও বাড়িতে কোনো ভাত ছিল না। ছিল ভয়।

সংসারের অভাব মেটাতে আব্বা চাকরির পাশাপাশি টিউশনি শুরু করেন। অফিসের আগে ও পরে পড়াতেন। তা থেকে ১০-১২ টাকা আয় হতো তার। বড় ভাই, মেজ ভাইকে ভর্তি করে দিয়েছেন জিলা স্কুলে। আমাকে স্কুলে ভর্তি করার কথা মনে আসেনি। রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। বাড়ির কাজ করি মায়ের সঙ্গে। ঘর লেপা, উঠোন লেপা, কাপড় ধোয়া, পানি আনা, হারিকেন মোছা এবং সলতে কাটা এগুলো ছিল বড় কাজ। আর কিছু কাজ করতাম যেমন বাড়ির ছোটদের গোসল করানো, তাদের কাপড় পরানো, চুল আঁচড়ানো, রান্নার খড়ি জোগাড় করা, কুড়াল দিয়ে তা কাটা। ছোটদের কোলে রাখাও আর এক বড় কাজ ছিল রাজপুকুরে কাপড় ধোয়া যাকে কাপড় কাচা বলে। এ ছাড়াও সবজি ক্ষেত ও ফুল বাগানের কাজ, রান্নাঘরের কাজ ও থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করতাম। আমি কাজ করতাম এই কারণে যে আমি বেঁচে গিয়েছি তাই আমাকে কিছু বলো না, আমি পুষিয়ে দেব।

আস্তে আস্তে রান্না করা শিখলাম। আমি খুব সুন্দর রান্না করি। এখনো করি। আমার পরিবার, জন ও আত্মীয়-স্বজন খেয়ে খুশি হয়। অন্য ভাই-বোনেরা খুব একটা কাজ করত না। বড় ভাই ও ছোট হাসান কিছু কাজ করেছে। কাজ কোনো বাধ্যতামূলক ছিল না। স্বইচ্ছায় করা। বেশির ভাগ সময়ে বাড়িতে কোনো না কোনো কাজের লোক বাড়িতে ছিল। কিছু নাম মনে পড়ে যেমন খোদাবক্স, কাদের, ভানু, ভানুর মা, আক্কাসের মা, ছুটু, কালু, আসিয়া আরো কত। আমার সঙ্গে কাজের লোকেদের খাতির ছিল। এখনো যারা আমার বাড়িতে কাজ করে তাদের সঙ্গে আমার খুব খাতির। তারাও আমার যত্ন করে। আমি এখন যত্ন নেয়ার যুগের ভেতর ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছি।

যাই হোক, ক্লাস সিক্সের পর বাড়ি বাড়ি, পাড়ায় পাড়ায় যেতাম আর দেখতাম কার কী দরকার। কত লোকের কত কাজ করে দিয়েছি। এ ছিল আমার এক নেশা। অবশ্য এই নেশা ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর লাঘব হয়ে আসে কারণ একটু বড় হয়ে উঠেছিলাম। বড় ভাইয়ের এক কথা। কেউ কোনো ফুটানি করতে পারবে না। করলে কঠিন শাসনের আওতায় পড়বে। ফুটানি করার একমাত্র অধিকার ছিল বড় ভাইয়ের ও কিছুটা মেজ ভাইয়ের। বড় ভাইয়ের শাসনের রুদ্রমূর্তি দেখেছে হাসান ও মঈন।
ভাই-বোনদের মানুষ করার জন্য বড় ভাইয়ের শাসন ছিল ভয়ানক। বকাঝকা, গালিগালাজ, ধমকসমক থেকে উন্নতি হয়ে বেত্রাঘাত পর্যন্ত। একটা দৃষ্টান্ত না দিয়ে পারছি না।

একবার মা ও মিন্টু ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। হঠাৎ বড় ভাই কোথা থেকে জানি উদয় হয়ে মিন্টুকে একটা কঞ্চি কেটে আনতে বললেন। মিন্টু অতি যত্ন করে কাজটা করল। আমি উঠান ঝাড় দিচ্ছিলাম। বড় ভাই আমাকে ডাকলেন তারপর কাছে যেতেই উনি এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে ফেলে অন্য হাতে কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক বাড়ি দিতে থাকলেন। আমিও চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম। আর অন্যদিকে মা চিৎকার করছেন, মার মেরে ফেল, মরেনি যখন তখন তুই মেরে ফেল। তারপর শুরু হতো মারও কান্না। এই পেটানোর কাজটা দীর্ঘক্ষণ চলত। বড় ভাইয়ের কোনো দোষ নেই কারণ এই পেটানোর কাজটাকে তিনি মনে করতেন ভাই বোনদের মানুষ করছেন। তারপর ওনার শাসন ও মানুষ করার ধরন ছোট ভাই বোনদের জিনিসপত্রে পর্যন্ত গড়াল, তাই তিনি খুলনা থেকে রোববার বাড়ি আসতেন। সেদিন ছোট ভাই বোনেরা আমার দেওয়া বা বাপের দেওয়া জিনিসপত্র যেমন টি-শার্ট, শার্ট, চশমা, জুতা, ঘড়ি ইত্যাদি সব ভয়ে লুকিয়ে ফেলত। নচেৎ বড় ভাই এসে কনফিসটিকেটেড করতে পারেন। ‘ফুটানি করো' বলে বড় ভাইয়ের শাসন শুরু হলে শেষ হতে চাইত না। যে করেই হোক তিনি মানুষ করেই ছাড়বেন এমন একটা মানসিক প্রবণতা ওনার মধ্যে ছিল। বড় ভাইয়ের গাড়ি খুলনার জন্য বাড়ি ছাড়লে ছোট ভাই-বোনরা হাততালি দিত। এমনকি বড় ভাবী ওনাকে বিয়ে করে তিনিও হাততালির দলে ভিড়ে যান।

আমি কাজে মন দিলাম। সারাদিন খাটুনি করি। তারপর পড়াশোনা এলো তাতে সেরা হয়ে দেখালাম। কোরান পাঠ করি সুন্দর সুরে। ভাই বোনদের সব কাজ করি ও তাদের আদর করি। জীবনে কারুর গায়ে একটা টোকাও দেই নাই। এমনিভাবে আস্তে আস্তে, ধীরে অতি ধীরে আমার চারপাশে একটা ভঙ্গুরবিহীন মোটা কাচের দেয়াল তুলে ফেললাম। কথা বলা কমিয়ে দিলাম, শোনা বাড়িয়ে দিলাম। ম্যাট্রিক পর্যন্ত বাপ-মা'র পাশে জীবন কেটে গেল। আর সঙ্গে ছিল একটাই বন্ধু যার নাম কামাল। তাছাড়া ছড়ানো-ছিটানো অনেক বন্ধু ছিল। অতএব বড় ভাইয়ের হাতের বাইরে চলে এলাম। আস্তে আস্তে একা হয়ে গেলাম। কারণ আমি নিজেকে সঙ্গী করতে পারি। দুনিয়ার রসবোধ নিংড়ে নিতে জানি। দুনিয়াকে দেখতে জানি। দেখি। তবে মাঝে মাঝে সে কাচে আঁচড় লেগেছে। অগ্রাহ্য করেছি। নারী আমি ভালোবাসি মা, বোন ও ভাবী হিসেবে, পৃথিবীর ফুল হিসেবে। পৃথিবীতে অর্ধেক নারী মানে অর্ধেকই ফুল তাই পৃথিবী এত সুন্দর। তবে রসরঙ্গ তাতেও আছে। একমাত্র নারী আমিনা, আমার স্ত্রী যে আমার দুনিয়াটাকে বদলে দেয়। I am not sure তবে মনে হয় প্রত্যেক নরের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে নারী আছে। বোধ হয় একা হয় না। তবে আমার বেলায় সেটা সত্যি আমি জানি। অংশবিশেষ

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
স্মরণসভায় বক্তারাস্রোতের বিপরীতে নির্ভয়ে কাজ করে গেছেন কাজী শাহেদ আহমেদ
কাজী শাহেদ আহমেদের স্মরণসভা শুক্রবার
স্মরণসভায় বক্তারা‘নিষ্ঠা ও প্রেরণার বাতিঘর কাজী শাহেদ আহমেদ’
সর্বশেষ খবর
প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিলেন বাইডেন
প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিলেন বাইডেন
অবন্তিকার আত্মহত্যা: জবি সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম জামিনে মুক্ত
অবন্তিকার আত্মহত্যা: জবি সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম জামিনে মুক্ত
নাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
মিয়ানমারে সংঘাতনাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা