X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদের আত্মজীবনী

দ্য লাস্ট গার্ল ।। পর্ব-০৩

অনুবাদ : সালমা বাণী
২২ অক্টোবর ২০১৮, ২১:২৩আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৩১

দ্য লাস্ট গার্ল ।। পর্ব-০৩ আমাদের যেকোনো রকমের বিবাদ-বিসম্বাদের সমাধান করে দিতেন গ্রামের ন্যায়পরায়ণ নিরপেক্ষ কূটনৈতিক বিজ্ঞ মুখতার আহমেদ জাসো এবং তিনি সবর্দাই হেনজিকে সহযোগী হিসাবে রাখতেন। তিনি বলেন— সুন্নী মুসলমান প্রতিবেশী গ্রামের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। তোমরা যদি প্রতিবাদ করতে চাও, আমি জানি না তোমাদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, কারণ আমরা ওদের সাথে জটিল কলহ-বিবাদে জড়িয়ে গেছি। এছাড়া তিনি আমাদের আরো সতর্ক করে বলেন—কোচোর বাইরে তোমাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে তোমরা যা ভাবছো তার অধিক বিপদজনক হয়ে পড়েছে। একটি দল নিজেদের ইসলামিক রাষ্ট্র, আইসিস বলে ঘোষণা করেছে, যার বুৎপত্তি এইখানে এই ইরাকে, বিগত কয়েক বছরে এরা সংগঠিতভাবে বেড়ে উঠেছে সিরিয়ায় এবং দখল প্রতিষ্টা করেছে আমাদের নিকটবর্তী বহু গ্রামে। যখন তারা ট্রাক বোঝাই হয়ে যাতায়াত করে তাদেরকে দেখা যায় কাল পোশাকে আবৃত আর কালো পতাকা বহন করতে। মুখতার আরো জানায়, তারা আমাদের ভেড়ার পাল নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। দিসহানের চাচাকে আহমেদ জাসো সতর্ক করে বলেন—তোমরা শুধু পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর করে তুলতে পারো। এবং সত্যি বলতে আমরা অর্ধদিবসের ভেতরেই সুন্নী ভেড়ার পালকে মুক্তি দিতে বাধ্য হই, কিন্তু অপহৃত বন্দী দিসহান বন্দী থেকে যায়।

আহমেদ জাসোর বিচক্ষণতা শুধু নয়, সুন্নী গোত্রসমূহের সাথে সমঝোতায় তার পরিবারের ছিল যুগের অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। কোচের প্রতিটি মানুষ যে কোনো সমস্যা সমাধানে তাদের পরামর্শের জন্য দারস্থ হতো, আর তারা কোচোর বাইরের অধিবাসীদের নিকট পরিচিত ছিল দক্ষ কূটনীতিক হিসাবে। কিন্ত বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি কতটা সমন্বয় সাধনে সক্ষম হবেন সেটা নিয়ে কোচোবাসী দ্বিধান্বিত হয়। তার মনে করে ইয়াজিদিদের নিকট হতে এইমাত্র বার্তাকৃত  প্রদান তাদেরকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে সকলে দলবদ্ধভাবে একমত হয় আইসিস প্রতিরোধে। দুই মাস পূর্বে যখন মোসাল-এর পতন ঘটে তখন ইরাকি কুর্দিস যোদ্ধা যাদের বলা হয় পেশমার্গা (Peshmerga), কুর্দিস স্বায়ত্বশাসিত (Autonomous ) এলাকা থেকে পেশমার্গাদের প্রেরণ করা হয় কোচো পাহারা দেয়ার জন্য। আমরা পেশমার্গাদের সম্মানিত অতিথি হিসাবে সন্মান প্রদর্শন করতে শুরু করি। তারা আমাদের স্কুলগুলোতে রাত্রি যাপন করে এবং প্রতি সপ্তাহে দরিদ্র গ্রামবাসীদের একটি পরিবার তাদের জন্য ভেড়া জবাই করে। আমি নিজেও এই যোদ্ধাদের করুণা প্রত্যাশা করি। আমি নিজেও সিরিয়া এবং তুর্কির কুর্দি নারী যোদ্ধা—যারা সমরাস্ত্র বহন করে তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত হই এবং আমাকে তারা সাহসী হয়ে ওঠার মনোবল সঞ্চার করে।  

অধিবাসীদের অনেকে, এমন কী আমার ভাইয়েরা পর্যন্ত মনে করে আমাদের নিজেদের উচিত নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করা। তারা নিজেদের ভেতর থেকে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করতে সম্মত হয়, কিন্তু আহমেদ জাসোর ভাই নাইফ সেটা উপেক্ষা করে প্রয়াস চালায় কুর্দিস কর্তৃপক্ষকে সম্মত করে ইয়াজিদি পাসমার্গা বাহিনীকে গড়ে তুলতে। কিন্তু  ইয়াজিদি পুরুষদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কোনো প্রকার ট্রেনিং অথবা অনুপ্রেরণা পর্যন্ত প্রদান করা হয় না। পেশমার্গা বাহিনী আমাদের আশ্বাস প্রদান করে যতক্ষণ তারা উপস্থিত আছে আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। এবং তারা যেভাবে তাদের রাজধানী ইরাকী কুর্দিস্থান রক্ষা করতে প্রস্তুত তেমনি আমাদের রক্ষার জন্য দৃঢ় সংকল্প। এমনই ধারণা প্রদান করে ‘আমরা দ্রুত ঈরবিল (Irbil) ধ্বংস হতে দেবো কিন্তু প্রাণ থাকতে সিনজার নয়।’  আমাদের বলা হয়েছিল ওদের ওপর ভরসা রাখতে এবং আমরা তাই করেছিলাম।

ওদের আশ্বাস সত্তেও কোচোর প্রতিটা পরিবার তাদের ঘরে অস্ত্র মজুদ রাখে, তার মধ্যে ছিল—ভারী কালাসহিনীকভ রাইফেল, একটা অথবা দুইটা বড় ধারালো ছুরি যা ধর্মের পবিত্র উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করার জন্য ব্যবহার করা হতো। আমার ভাইয়েরা সহ অগণিত ইয়াজিদি পুরুষ যারা প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই ২০০৩ সালে সীমান্ত প্রহরার চাকুরিতে নিয়োগ গ্রহণ করলো অথবা পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিল। এবং আমরা আশ্বস্ত হলাম যতক্ষণ পর্যন্ত দক্ষ বাহিনী নিয়োজিত আমাদের পুরুষরা অবশ্যই সক্ষম হবে আমাদের নিরাপত্তা বিধানে। এই রকম নিশ্চিত হবার প্রধান কারণ হলো নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুরুষেরা পেশমার্গা বাহিনী নয়, এরা হলো সেই সব বীর পুরুষেরা যাদের কঠিন বাহু বেষ্টন করে রেখেছে আমাদের গ্রামগুলো এবং এদেরকে নিয়োগ দান করা হয়েছে ২০০৭ সালে আক্রান্ত হবার পর। এরা হলো কোচের সেই বীর পুরুষেরা যারা বছরব্যাপী অহরাত্রি পাহারা দিয়ে রেখেছে—যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা পর্যাপ্ত নিরাপদ বোধ করেছি, আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে না গেছি ততক্ষণ পর্যন্ত সীমান্তের নিরাপত্তা চেক পয়েন্টের প্রতিটা গাড়ির আগন্তুকদের ওপর ওরা রেখেছে শার্দুলের মতো তীক্ষ্ণ নজর।

দিসহানের অপহরণ আমাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখে কিন্তু পেশমার্গা বাহিনী দিসহান উদ্ধারে আমাদেরকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগীতা প্রদান করে না । তারা মনে করে দিসহানের অপহরণ ছিল বিবাদমান দুই গ্রামবাসীর বিবাদের জের। কুর্দিস্থান রিজিওনাল সরকার প্রধান মাসউদ ব্রাজানি তাদেরকে কুর্দিস্থানের যেসব স্থান নিরাপদ নয় সেইসব স্থানে নিরাপত্তা বিধানের জন্যে প্রেরণ করেছে। অথবা হতে পারে তারাও আমাদের মতো ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। কয়েকজন সৈন্যকে দেখে মনে হতো তারা আমার মায়ের সর্ব কনিষ্ট পুত্র সাইদের বয়স থেকে খুব একটা বড় হবে না। কিন্তু যুদ্ধ মানুষকে বদলে দেয়, বিশেষ করে পুরুষদের। এইতো সেদিনের কথা—সাঈদ আমার আর আমার ভাগ্নি ক্যাথরিনের সাথে আমাদের বাড়ির উঠানে পুতুল খেলা করতো, পুতুল যে ছেলেদের খেলার বিষয় নয়, সেটা বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স তখনো ওর হয়নি। তার আগেই সাঈদ ইরাকের ভায়োলেন্স ও ধ্বংসযজ্ঞের মহামারীতে মোহগ্রস্ত হলো। একদিন যখন সে সেলফোনে ইসলামিক রাষ্ট্রের ভিডিও দেখছিলো আমি হাতেনাতে ওকে ধরে ফেললাম, ওর হাতের মুঠোর সেই সব দৃশ্য থরথরিয়ে কাঁপছিলো এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সেইসব দৃশ্য সে শক্ত হাতে উঁচিয়ে ধরে রেখেছিলো যাতে আমিও সে সব দেখতে পাই। আমার সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ভাই মাসউদ কক্ষে প্রবেশ করে এই দৃশ্য দেখে খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, সাঈদকে গালমন্দ-তিরস্কার করে। জিজ্ঞাসা করে কোন সাহসে তুই নাদিয়াকে এইসব দেখতে দিচ্ছিস? ওর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠার কারণ আমি উপলদ্ধি করতে পারি। কারণ এইসব ভয়ংকর দৃশ্যগুলো পরিবারের সদস্যদের দেখতে দেয়া ওর জন্য কঠিন ছিল।

ভিডিওতে ধারণকৃত সেইসব দৃশ্যাবলী আমার চেতনায় গভীরভাবে দাগ কাটে এবং আমাদের সেইসব দরিদ্র দূর্ভাগা মেষ পালকদের জন্য যাদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাদের পরিণতি ভেবে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। যদি পেশমার্গা সৈনিকরা আমাদের সহযোগীতা না করে তাহলে দিসহান উদ্ধারে আমাকে করণীয় সিদ্ধান্ত অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আমি বাড়ির ভেতরে ছুটে আসি। আমি বাড়ির এগারো সন্তানের মধ্যে সর্ব-কনিষ্ট এবং আমি একজন বালিকা। কিন্তু তাহলে কী হবে! আমি সবর্দাই ছিলাম মুখরা, জেদি এবং এই মুহূর্তে আমার ভেতরের ক্রোধ আমাকে আরো অধিক সবল ও শক্তিশালী করে তুললো।

আমাদের বসত বাড়ী ছিল গ্রামের একেবারে উত্তর প্রান্তে মাটির ইটের সারিবদ্ধ গাঁথুনির একতলা দালান, গলার হারের পুথির মতো গাঁথা সারিবদ্ধ কক্ষসমূহ খোলা দরজার পথের সাথে সংযুক্ত ছিল কিন্তু কোনো দরজা ছিল না। বিস্তৃত খোলা উঠান পার হয়ে তরিতরকারির বাগান, রুটি স্যাকার বড় চুল্লি যাকে তান্দুরি বলা হয়, কখনো কখনো যেখানে ঝলসানো হয় ভেড়া অথবা মুরগি, এসবের সাথে সবগুলো কক্ষ ছিল উঠান দিয়ে সংযুক্ত। এখানে আমি বেড়ে উঠেছি আমার মা, আট ভাইয়ের ছয়জনের সাথে, আমার দুই বোন, দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং তাদের মেয়ে ও ছেলেদের সাথে। এবং হাঁটা দূরত্বে বসবাস করা আমার দুই ভাই, সৎ ভাই ও বোন, এবং আমার আংকেল, আন্টি ও কাজিনদের সাথে। শীতকালে যখন বৃষ্টি হতো তখন চালের ছেদা দিয়ে পানি গড়াতো এবং ইরাকি গ্রীষ্মে যখন ওভেনের মতো তপ্ত গরম হয়ে উঠতো বাড়িঘর তখন সেই গরম ছাদে ছাদে সুটকেস পেতে তার ওপর ঘুমাতে আমাদের বাধ্য করতো । যখন ছাদের একাংশে গর্ত সৃষ্টি হতো, আমরা তখন সেই অংশে কোনো ধাতব দিয়ে জোড়া দিতাম। এই কাজটা করাতাম কারিগর মাসউদের দোকান থেকে। যখন আমাদের আরো বেশি স্থান সংকুলানের দরকার হতো, আমরা নতুন করে বানিয়ে করে নিতাম। সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী গাঁথুনির নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য আমাদের অর্থসঞ্চয় করতে হতো দীর্ঘদিন ধরে এবং আমরা ক্রমে সে পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছিলাম।

একদিন সন্মুখের প্রবেশ পথ দিয়ে আমি বাড়িতে প্রবেশ করেছিলাম এবং এক দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম সেই কক্ষে যেখানে একত্রে বাড়ির বাকি মেয়েদের সাথে বাস করতাম। সেখানে বড় একটা আয়না ছিল। উপুড় হয়ে তরিতরকারী তোলার সময় বেয়ারা চুলের বাঁধ মানানোর জন্য একখানা বিবর্ণ স্কার্ফ দিয়ে আমার মাথার সব মোড়ানো থাকতো। আমি আয়নায় তাকিয়ে কল্পনা করতাম যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য একজন যোদ্ধাকে কীভাবে নিজেকে সাজাতে হয়। বছরের পর বছর কৃষি কাজের কঠিন শ্রম আমাকে কঠিন পরিশ্রমী করে তোলে যা আমার কোমল মুখশ্রীতে প্রকাশ পেত না। তা সত্ত্বেও আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না—যদি কখনো আমি অপহরণকারী অথবা তাদের গ্রামের লোকজনদের দেখি কোচোতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে তাহলে আমার কী বলা উচিত তাদেরকে? ‘সন্ত্রাসীরা আমাদের ভেড়ার পাল তুলে নিয়ে গেছে তোমাদের গ্রামে’ এই কথা বলার সাহস সঞ্চারের জন্য আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে প্রাকটিস শুরু করি—তোমরা এটা বন্ধ করতে পারো, অথবা তোমরা অন্তত আমাদের জানাতে পারো কোথায় ওকে আটকে রাখা হয়েছে? আমাদের বাড়ির আঙিনা থেকে কোথায় ওকে নিয়ে গেছো? আমি কাঠের একখানা চিকন ছড়ি যা ভেড়া চরানোর সময় ব্যবহার করা হয় হাতে তুলে নিই, পুনরায় সামনের দরজা যেখানে আমার ভাইদের ক’জনা দাঁড়িয়ে আমার মায়ের সাথে গভীর মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করছিল তাদের অলক্ষে সেখানে পৌঁছাই।

এর পরের ঘটনা। অপহরণকারীদের গ্রাম থেকে একটা সাদা পিকআপ ট্রাক আমাদের প্রধান সড়কে প্রবেশ করে।  ট্রাকের সামনে দুজন এবং পেছনে দুজন পুরুষ বসা ছিল। সুন্নী ট্রাইবের এই পুরুষগুলোকে আমি নিশ্চিতভাবে চিনতে পারি—এরাই দিসহানকে অপহরণ করেছিল। তাদের ট্রাক যখন সাপের মতো এঁকেবেঁকে শহরের ভেতরে এগুচ্ছিল আমরা সকলেই তাদের গতিবিধি লক্ষ করছিলাম। তারা গ্রামের প্রধানতম সড়কে এত নির্ভয়ে এগুচ্ছিল, যে দেখে মনে হচ্ছিল তারা সম্পূর্ণ ভয়ভীতি অথবা শঙ্কা মুক্ত। সিনজার এবং মোসুল শহরের সাথে সংযুক্ত কোচোর এই প্রধান সড়ক ধরে এভাবে ট্রাক চালানোর কোনো কারণ ছিল না—এবং তাদের উপস্থিতি যেন আমাদেরকে ব্যঙ্গ করছিল। আমি আমার পরিবারের সকলের বুহ্য ভেদ করে সড়কের মাঝখানে ছুটে যাই, সেখানে দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করি—দাঁড়াও, থামো...! আমি গলা ছেড়ে চিৎকার করি আর নিজের উপস্থিতিকে উঁচু করার জন্য হাতে ছড়ি দোলাতে থাকি—‘তোমরা বলো আমাদের দিসহানকে কোথায় রেখেছো, সে কোথায় আছে?’

আমাকে রুখতে আমার পরিবারের অর্ধেক সদস্যকে ঝাপিয়ে পড়তে হয়েছিল। ‘তুমি কী করতে যাচ্ছো বলে মনে করো’ ইলিয়াস চিৎকার দিয়ে আমাকে ধমকায়। ওদেরকে আক্রমণ করো, ওদের গাড়ির জানালা ভেঙে দাও। সে এবং আমার বাকি ভাইয়েরা তখন সবেমাত্র ক্ষেত থেকে ফিরেছে— তাদের শরীর থেকে একটু আগে চাষ করা পেঁয়াজের গন্ধ তখনো বের হচ্ছে। তাদে কাছে দিসহানকে মুক্ত করার জন্য আমার সেই চিৎকার শিশুর অকারণ কান্নার মতো মনে হয়।

সড়কের মাঝখানে ছুটে যাওয়ায় আমার মা ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আমার ওপর। স্বাভাবিক সময়ে আমার এই ধরণের জেদ মা সহ্য করতো, এমন কী কখনো কখনো এসব নিয়ে ঠাট্টা করতো বৈ কী, কিন্ত পরিস্থিতি অনেক নাজুক ছিল—সকলের অবস্থান ছিল ধৈর্যের শেষ সীমায়। এছাড়াও এটা ছিল ভয়ংকর বিপদজনক, কারণ আমি একজন অবিবাহিত কিশোরী নারী। ‘ফিরে আয় আর এখানে বস’ আমার মা কঠিন শাসনের সুরে আমাকে আদেশ করে, ‘নাদিয়া, তুমি যা করেছো এটা তোমার জন্য লজ্জাজনক, এটা তোমার বিষয় নয়, এসব পুরুষদের ভাবনার বিষয়’ ইত্যাদি ভাষায় মা তিরস্কার করে।

জীবন এগিয়ে চলছিল জীবনের নিয়মে, বিশেষ করে ইয়াজিদি এবং সংখ্যালঘুরা সব রকম ঝুঁকি ও ভীতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারদর্শী ছিল। এটা অবশ্যই হতে হবে কারণ তুমি দেশের এমন কোনো স্থানে বসত করছো যেটা যে কোনো মুহূর্তে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো এই রকম পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া ছিল মামুলি ব্যাপার মাত্র। (চলবে)

আরো পড়তে ক্লিক করুন: দ্য লাস্ট গার্ল ।। পর্ব-০২

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!