বাইসাইকেল হাঁকিয়ে আমি ও হলেণ চলে আসি সাভানা নগরীর ডাউন-টাউনে। অনেকদিন পর আমরা যুগলে সাইকেল চালাচ্ছি, একটু হাঁফ ধরেছে। তো ফরসাইথ পার্কের লাগোয়া পেভমেন্টে দ্বিচক্রযান দুটি লক করি। নগরীতে লকডাউন উঠেছে সপ্তাদিন হলো, চালু হয়েছে সীমিত পরিসরে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ। তবে আমাদের মতো বয়স্কদের আরও মাসখানেক সঙ্গনিরোধ অনুশীলন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গেল মাস তিনেক আমরা কাটিয়েছি নিজস্ব বসতবাড়ির নিভৃত আইসোলেশনে। তবে ত্রাণ কাজের প্রয়োজনে বার কয়েক বেরোতে হয়েছিলো। এছাড়া বাকি সময় আমরা কাটিয়েছি মূলত আন্তর্জালিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ বহাল রেখে। এরকম ভর দুপুরবেলা পাবলিক হেলথ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোড় বেঁধে বেরিয়ে পড়াতে অস্বস্তি হয়। সড়কে গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে জনশন স্কোয়ারের দিকে। তাদের কারো হাতে ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’ লেখা প্ল্যাকার্ড,’ কেউ-বা বহন করছে বর্ণবাদ-বিরোধী বক্তব্য লেখা ব্যানার।
দিন কয়েক আগে মেনিয়াপোলিস শহরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধির হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ জর্জ ফ্লয়েড। হাতকড়া পরানো অবস্থায় পুলিশ অফিসার ডেরিক শ্যাভিন তাঁকে সিমেন্টের পেভমেন্টে ফেলে গলায় হাঁটুর তীব্র চাপ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে। নিরস্ত্র ফ্লয়েডের মৃত্যুতে তামাম যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে লাগাতার প্রতিবাদ।
সাভানা শহরটিও এ বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলন প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছে, আজ জনশন স্কোয়ারের জনসমাবেশে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন স্বয়ং মেয়র, পৌরসভার কর্মকর্তাবৃন্দ ও পুলিশ-চীফ প্রমুখ।
দেখতে দেখতে পার্ক সংলগ্ন সরণিতে বেনোজলে ভেসে আসা কচুরিপানার মতো মানুষজন বাড়ে। এদের কেউ কেউ মুখে মাস্ক এঁটে আগাচ্ছে, আবার কেউ কেউ বাচ্চা-কাচ্চা সমেত পুরো সংসার নিয়ে আস্তে-ধীরে হাঁটছে, কিছু মানুষ জটলা বেঁধে হাঁটতে হাঁটতে ড্রাম মৃদুভাবে বাজিয়ে সুর করে জপছে ‘আই ক্যান্ট ব্রিদ..।’ শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার মাটিতে বেপানাহ হয়ে পড়ে থাকা জর্জ ফ্লয়েডের গলায় হাঁটুর চাপ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার উপক্রম করলে, হাতকড়া পরানো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটি বারবার অনুনয় করে বলছিলেন,‘আই ক্যান্ট ব্রিদ, আই ক্যান্ট ব্রিদ…দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার…।’ অফিসার বাকরুদ্ধ হয়ে ফ্লয়েডের মৃত্যু অব্দি তীব্র চাপ বহাল রাখে। পথচারীরা প্রথমে পুলিশ অফিসারকে দয়া করতে অনুরোধ করে, তারপর কোনো একজন প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনাটি স্মার্টফোনে ভিডিও রেকর্ড করে, এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় দ্রুত, তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি জনপদে আওয়াজ উঠছে,‘আই ক্যান্ট ব্রিদ..।’
আমরা এ আয়োজনে সামিল হতে এসেও দ্বিধাগ্রস্থ হই। নগরীতে এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে দশ জনের বেশি একত্রিত না হওয়ার নির্দেশ আছে। বুঝতে পারি, প্রতিবাদ করার নৈতিক প্রয়োজনে মানুষ ভাঙ্গছে এ রোগ-নিরোধক বিধান। আমরা উদ্বিগ্ন হই, নিউইয়র্ক অথবা নিউ অরলিন্স নগরীতে করোনার প্রকোপ কমেছে বটে, তবে অত্র এলাকায় ভাইরাসের বিস্তৃতি কমার কোনো আলামত দেখা যায়নি, বরং আজকে তিন শত সাতান্ন জন মানুষ ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে, এ পরিসংখ্যান গত কয়েক দিনের মৃত্যু ও হসপিটালাইজেশনের চেয়ে বেশী। গেল তিন মাস ধরে আমরা নিজেরা যেমন আইসোলেশনে থাকছি, তেমনি সর্বত্র প্রচার করেছি সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বহাল রাখার প্রয়োজনীয়তা। তো চোখের নিমিষে এ রীতি ভেঙে ফেলতে শুধু দ্বিধাই হয় না, অতংকিতও হই বিগতভাবে। হলেণ প্রস্তাব করে, লেটস্ গো টু দ্য পার্ক, হাতে সময় আছে, কোথাও একটু বসে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেই।’
তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে ঘন ঘাসে ছাওয়া সবুজ ময়দানটি অতিক্রম করে আমরা উঠে আসি ঔক গাছের সারি দিয়ে সাজানো এক নির্জন সরণিতে। রোদ তেতে উঠছে, বাতাসে ছড়াচ্ছে সবুজ চায়ের মতো কবোষ্ণ আমেজ। আমরা দু’জনে ভুগছি নানা রকমের বয়সজনিত রোগব্যাধিতে, যাকে করোনাক্রান্তিতে বলা হচ্ছে আন্ডারলায়িং হেলথ কন্ডিশনস্, আমাদের জীবনের ঝুঁকি প্রচুর। হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, এ দেশে করোনায় মরে যাওয়াটা সহজ, কিন্তু করোনা-আতংক নিয়ে মানুষের মতো বেঁচে থাকাটা সত্যিই দুরূহ। আমরা কোনো কথা বলি না, তবে অনুভব করি, আমাদের অভ্যন্তরে কেতলীর ফুটন্ত জলের মতো বলকে উঠছে একই রকমের দ্বিধা। সংসারের যুগ্ম কর্ণধার হয়েও আমাদের দিনযাপনে তফাত প্রচুর। হলেণ শ্বেতাঙ্গ, পেশাদারি জীবনে সফল, আমি বাদামি গাত্রবর্ণের মানুষ, সফলতার সন্ধান পেয়েছি সামান্য। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে শরীক হওয়া হলেণ ভালোবাসে সামাজিকতা, আমি নিভৃতচারী। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ফারাক অঢেল, তবে একটি বিষয়ে আমরা সহমত পোষণ করছি প্রায় আড়াই যুগ ধরে, তা হচ্ছে বর্ণবাদ বিরোধীতা। আজ সুযোগ এসেছে এ বিশ্বাসকে অ্যাকশনে রূপান্তরিত করার। আমাদের মেয়ে কাজরির কাছ থেকে টেক্সট্ আসে। হলেণ দাঁড়িয়ে পড়ে রিপ্লাই টাইপ করে। কাজরির জানাশোনা কেউ কেউ ভিকটিম হয়েছে সংক্রমণের। তাই আমরা তার সঙ্গেও সামাজিক দূরত্ব মেনটেইন করছি। সে বর্ণবাদ-বিরোধী প্রতিবাদে সামিল হতে এসেছে। একটু সময় লাগবে। কাজরি আমাদের ফরসাইথ পার্কের ফোয়ারার কাছে বসে অপেক্ষা করতে বলে।
ফোয়ারা ঘেরা গোলচত্তরে এসে আমরা ডিসইনফেকশন লিক্যুইড স্প্রে করে মুছে-টুছে বেঞ্চে বসি। বেশ খানিকটা হেঁটে এসেছি, তাই ঘাম হচ্ছে। হলেণ পার্স থেকে রোজ ওয়াটারের বোতলটি বের করে। দিন কয়েক আগে ঈদের দিনে আমরা কাজরির কাছ থেকে গোলাপজলের এ শিশিটি উপহার পেয়েছি। আমি হাতে-মুখে খানিকটা সুরভিত জল মাখি। মুহূর্তে মন যেন ফিরে যায় ইস্তামবুলের গ্র্যান্ডবাজারে। নয় এর দশকের পয়লা দিককার কথা। হালেণের সঙ্গে রিলেশনশীপ কেবলমাত্র গড়ে ওঠছে। গ্র্যান্ডবাজারের কয়েকটি ঘুপছি ক্যাফে ছিলো আমাদের ডেটিং স্পট। তখন পরিচয় হয়—রিফরেশমেন্টের অঙ্গ হিসেবে গোলাপজল মাখার তুর্কি রেওয়াজের সঙ্গে। কাছে বসে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে অবলোকন করি। বাইসাইকেল চড়ার প্রয়োজনে টাইটসের ওপর সে জড়িয়ে পরেছে সমুদ্র-সবুজ রঙের সামার গাউন। সিল্কের এ বস্ত্রটি না আমরা একত্রে কিনেছিলাম বসফরাস-পাড়ের পানশালা সংলগ্ন একটি পর্যটক-প্রিয় বুটিক থেকে। অনুভব করি, তার চোখের সবুজাভ পুতলিতে ছায়া ফেলেছে উদ্বেগ।
কাছে-পিটে কোথা থেকে ভেসে আসে সুরেলা সঙ্গীত, ঝংকারে ধ্বনির মন্দ্র স্ট্রগোল স্পষ্ট হয়। আমরা পরষ্পরের দিকে তাকাই। বিটোফেনের পঞ্চম সিম্ফনি আমাদের দুজনের বেশ ভালোভাবে চেনা। আশ্চর্য এ মূর্ছনা ‘ফেইট বা অদৃষ্ট’ নামেও পরিচিত। বলা হয়ে থাকে যে—পঞ্চম সিম্ফনি হচ্ছে আদতে ‘দুয়ারে ভাগ্যের কড়া নাড়া’ বিশেষ । ঈদের দিন ভোরে আমরা এ সিম্ফনির রেকর্ড বাজিয়ে শুনেছি। বিটোফেন ১৮০৮ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চম সিম্ফনি উপস্থাপন করেছিলেন ভিয়েনার থিয়েটারে। তখন তাঁর বয়স কত হবে, জোর পয়ত্রিশ, সঙ্গীতের এ সার্বজনীন ওস্তাদ ভুগছিলেন শ্রুতি স্বল্পতায়, ধ্বনির সূক্ষতা শ্রবণে সঠিকভাবে অনুভব করতে না পেরে ভাবছিলেন আত্মহত্যা করবেন। কাটিয়ে উঠেছিলেন তীব্র ডিপ্রেশন। কিন্তু আমরা হালফিল অদৃষ্টের যে ফেরে পড়েছি, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে কী? বিশেষ ভরসা পাই না। ভারি কৌতূহল হয়, নির্জন এ গোলচত্বরের আড়ালে—কে সে মানুষ, নিরলে বসে শুনছেন অদৃষ্টের ধ্বনিময় কাড়নাকাড়া?
উঠে দাঁড়িয়ে ফোয়ারার ওপাশে উঁকি দেই। বেঞ্চে রূপালি চুলের এক বয়োবৃদ্ধ মানুষ চোখের উপর হ্যাটটি রেখে শুনছেন স্মার্টফোনে বেজে যাওয়া বিটোফেনের পঞ্চম সিম্ফনি। শ্বেতাঙ্গ এ মানুষটি আমাদের চেনা। এঁর নাম স্কিপ ফুডরিচ। এক সময় সাভানা স্কুল অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড ডিজাইনে আর্ট হিস্ট্রি পড়াতেন। রিটায়ার করে সস্ত্রীক বসবাস করেন সুইমিংপুলওয়ালা বড়সড় বাড়িতে। লকডাউনের সময় প্রায়ই দেখতাম, প্রফেসর ফুডরিচ সর্টসের সঙ্গে নিমার মতো হাতকাটা টিশার্ট পরে পিরোনিজ প্রজাতির বিরাট আকারের কুকুরটি নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন। তাঁর সম্ভবত ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে, কাটাকুটি ও সেলাইয়ের দাগ দূর থেকে দেখা যায়। প্রফেসর ফুডরিচের পায়ের কাছে রাখা একটি প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’। সম্ভবত কমপিউটারে লিখে প্রিন্টআউট দিয়ে নিজেই তৈরী করেছেন প্ল্যাকার্ডটি। গেল চার-পাঁচ বছর ধরে—কয়েকমাস পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যেত, পথচারীদের স্মার্টফোনে তোলা পুলিশি জুলুমের ভিডিও। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিকটিমরা ছিলো তরুণ বয়সী ব্ল্যাকম্যান, তাঁদের প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কের উপর গুলি করে হত্যা করেছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। ভিডিও চাউর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদও হয়েছে, এভাবেই ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার’ বাক্যটি হয়ে উঠেছে আন্দোলনের লোকপ্রিয় শ্লোগান। আন্দোলনের চাপে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসাররা চাকুরি থেকে সাসপেন্ড হয়েছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় পরিশেষে—বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেকসুর খালাস পেয়ে পুনরায় চাকুরিতে বহাল হয়েছে তারা। একটি বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠি, গেল কয়েক বছরের পুলিশ জুলুম-বিরোধী বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে আংশগ্রহণকারীরা ছিলেন—(সামান্য ব্যতিক্রম বাদে—যেমন উদারমনা কিছু শ্বেতাঙ্গ) মূলত কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় ও বাদামি গাত্র বর্ণের মানুষজন। এবার কিন্তু প্রফেসর ফুডরিচের মতো মূলধারার সম্পন্ন গোছের শ্বেতাঙ্গরা প্রতিবাদ করতে মাঠে নামছেন। সকল বর্ণের নাগরিকদের সমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
ফোয়ারার কিনার ছেড়ে ফিরে আসি বেঞ্চে। আমাদের মধ্যে খেলা করছে দ্বিমাত্রিক দ্বিধা। আমরা প্রতিবাদী জমায়েতে শরিক হতে চাই, আবার একই সঙ্গে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বহাল রাখতে চাই সামাজিক দূরত্ব। আরেকটি বিষয়েও আমরা যুগপৎ উদ্বিগ্ন। গেল কয়েক দিনে—শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের ছত্রছায়ায় পরিচয় গোপন করে ঢুকে পড়েছে হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের অনুচররা। হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সংগঠন। নাৎসি নেতা হিটলার এদের শিক্ষাগুরু, এরা প্রকাশ্যে সমর্থন করে ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী নেতিবাচক নীতিমালা। আন্দোলনের জমায়েতে ঢুকে পড়ে এরা—গেল কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নানা শহরের চালিয়েছে লুটতরাজের মতো নেক্কারজনক কাণ্ডকারখানা। ফলশ্রুতিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, মরিচের গুড়া মিশ্রিত পেপার স্প্রে, ও রাবার বুলেট দিয়ে আক্রমণ করেছে মিছিলকারীদের। তাতে ‘রায়োটার’ বলে বদনাম হয়েছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের। উপরন্তু আমরা নাশকতামূলত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে চাই না। আমাদের ধারণা, পেনডেমিকের এ দুর্বিষহ দিনে কোনোভাবেই দেশকে রায়টের দিকে ঠেলে দেয়া উচিত হবে না।
কাজরির কাছ থেকে ফোন আসে। সে বে স্ট্রিট ধরে ফরসাইথ পার্কের দিকে আসছিলো, কিন্তু ওখানে টিয়ার গ্যাস প্রভৃতি নিয়ে জড়ো হয়েছে ন্যাশনেল গার্ডের আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। তারা রোড ব্লক করছে। তাই ফরসাইথ পার্কে আসা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তার কাছ থেকে আরেকটি তথ্য পাওয়া যায়, জনশন স্কোয়ারে প্রতিবাদীদের ভিড় উপচে পড়ছে বটে, তবে লাগোয়া সরণিতে ট্র্যাফিক বন্ধ করে দিয়ে ওখানে বেশ কিছু বয়োবৃদ্ধ মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়েছেন, ছয় ফুট দূরে দূরে। সিম্ফনির ঝংকার বিষ্ফোরিত হয় বিপুল দ্যোতনায়। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ান প্রফেসর ফুডরিচ। প্ল্যাকার্ড হাতে ময়দান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাতও নাড়েন। নাশকতামূলক কাজের অজুহাত দিয়ে আমাদের আর চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব হয় না।
আমরা ময়দানের ভেতর দিয়ে তৈরী পায়ে চলার পাকা ফুটপাত ধরে সরণির দিকে আগাই। দেখি, ঘাসে জানু বিছিয়ে বসে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ পাম্পার দিয়ে ফুলাচ্ছেন রঙিন বেলুন। ফরসাইথ পার্কের চেনামুখ—চুলে ড্রেডলক কায়দায় জটাজুটদারী এ মানুষটি হোমলেস। জানি না কোথায় কীভাবে ইনি রাত্রি কাটান। পার্কে প্রায়ই তাঁকে দেখি, বেলুন দিয়ে পাখি, ফুল ও পাখাসহ বিবিধ রকমের শিল্পদ্রব্য তৈরী করে বিক্রি করছেন বেড়াতে আসা মানুষজনদের কাছে। আজ মনে হয়, অনেকগুলো বেলুন দিয়ে বড় আকারের কিছু তৈরী করছেন, তাঁর সামনে মাটিতে রাখা ডনেশনের হ্যাট। আমি হ্যাটে একটি ডলার রাখি। চোখ তুলে বলেন,‘লিসেন, মাই ব্রাদার, ফ্লয়েড ডাইড আন্ডার দ্য নি অব অ্যা হোয়াইট পুলিশ অফিসার। সে তাঁর মাকে ডেকেছিলো, কিন্তু তাঁর চোখের আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছে…সো…আই অ্যাম গোয়িং টু মেক সাম সানসাইন ফর হিম, ম্যান, প্লিজ কাম ব্যাক অ্যান্ড সি মাই আর্ট অবজেক্ট ফর ব্রাদার ফ্লয়েড।’ আমরা ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগ বাড়ি।
ময়দানের ঘাস মাড়িয়ে শর্টকাটে সরণির দিকে যাওয়ার সময় দেখি, ঘোড়ার পিটে চড়ে টগবগিয়ে আগুয়ান হচ্ছেন তিন পুলিশ অফিসার। মাঝের ঘোড়ায় বসা শ্বেতাঙ্গ অফিসার উইলিয়ামসকে আমি শনাক্ত করি। বছর খানেক আগে ইনি সাভানা স্টেট ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাসে টহল দিতেন। তার বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের খামোকা হয়রানির অভিযোগ আছে। সন্ধ্যার পর গাছতলার ঝুপসি অন্ধকারে গাড়ি পার্ক করে তার ভেতরে বসে কৃষ্ণাঙ্গ গ্রেজুয়েট স্টুডেন্ট মরিস রস সিগ্রেট স্মোক করতে করতে অপেক্ষা করছিলো তার মেয়ে-বন্ধুর। অফিসার উইলিয়ামস্ গাড়ির জানালার কাছে এসে স্টেনগানের বাড়িতে কাচ ভেঙে তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেন আধপোঁড়া সিগ্রেটটি। তাতে মারিজুয়ানার কোনো গন্ধ না থাকলে, তিনি গাড়ি সার্চ করে পান—গার্লফ্রেন্ডের জন্য কেনা একটি কসমেটিক বক্স। তাতে রাখা পাউডারের কৌটায় কোকেন আছে সন্দেহে মরিসকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে হাজতে বন্দি করেন। গ্রেফতারের সময় পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাপ পরানোর সময় অফিসার তাকে চড়-চাপড়ও মারেন, তাতে নাক দিয়ে ঝরে রক্ত, ধস্তাধস্তিতে মরিসের কব্জি মারাত্মকভাবে মুচড়ে যায়। পরদিন অবশ্য জামিনে ছাড়া পায় মরিস। আরও দু-সপ্তা পর ল্যাবরেটরি থেকে পাউডারের কৌটা টেস্ট করার রেজাল্ট আসে, তাতে মাদকদ্রব্য না থাকাতে মরিস রসের বিরুদ্ধে আনা মামলা ডিসমিস হয়ে যায়। কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের বিরুদ্ধে এ ধরনের দৈহিক অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটে আরও কয়েক বার। তারা প্রতিবাদ করে, ফলশ্রুতিতে অফিসার উইলিয়ামসকে ক্যাম্পাস ডিউটি থেকে সরিয়ে শহরের অশ্বারোহী পুলিশের কাপ্তেন করা হয়।
আমরা চলে আসি পার্কের ওপেন এয়ার রেস্তোরাঁর কাছে। লকডাউনে বন্ধ হওয়া রেস্তোরাঁটি এখনো খোলেনি। সিঁড়ি বেয়ে তার উঁচু বারান্দায় উঠে আমরা সরণির দিকে তাকাই। মনে হয়, মিছিল করে আগ বাড়ছে অসংখ্য মানুষ, থেকে থেকে চ্যান্টিং এর কায়দায় আওয়াজ উঠছে,‘আই ক্যান্ট ব্রিদ..।’ হলেণ সরণি স্ক্যান করে আমার দিকে বাইনোকুলারটি বাড়িয়ে দেয়। তা চোখে লাগিয়ে দেখি, সরণি জুড়ে কালো টি-শার্ট পরা প্রচুর মানুষ, তাতে লাল হরফে লেখা ‘ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার ’
শ্লোগান বিকালের রোদে ঝলমল করে ওঠে। একটি হুইলচেয়ার দেখতে পেয়ে আমি বাইনোকুলার ফোকাস করি। তাতে বসে কুঁচকানো ত্বকের এক কৃষ্ণাঙ্গ বৃদ্ধা। আংটায় আটকানো অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে বেরিয়ে নল এসে লেগেছে তাঁর নাকে। তিনি দুহাতে ধরে আছেন লেমোনেটেড করা একটি বোর্ড, তাতে লেখা ‘আই ক্যান্ট ব্রিদ..।’ দীর্ঘদেহী এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন হুইলচেয়ারটি। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলছে দুটি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে।
সরণির বিপুল ভিড় এগিয়ে আমরা গলি-পথ ধরে জনশন স্কোয়ারের দিকে রওনা হই। এদিকে ভিড়-ভাট্টা সরণির তুলনায় অনেক কম। আমাদের পাশে পাশে হুইলচেয়ার চড়ে চলছেন মাথায় ব্যান্ডেনা বাঁধা একজন অন্ধ মানুষ, তাঁর গাইড-ডগটিও চলছে সঙ্গে সঙ্গে।
জনশন স্কোয়ারের সংলগ্ন সরণির ফুটপাত ধরে প্রতিবাদীরা আগ বাড়ছে। তবে প্রশস্ত সড়কে ভিড় তেমন নেই। খানিক দূরে দূরে বেশ কিছু বয়োবৃদ্ধ মানুষ দাঁড়িয়েছেন মাঝখানে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব রেখে। আমরাও হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সামিল হই তাঁদের কাতারে। সড়কের মাঝখান দিয়ে একাকি হেঁটে যাচ্ছে আর্ট কলেজের মডেল-কন্যা বিউলা। কিছুদিন আগেও এ কলেজে পড়তো কাজরি। ওখানকার ওপেন হাউস জাতীয় পার্টিতে একবার কথা হয়েছিলো বিউলার সঙ্গে। মেয়েটি মিশ্র বর্ণের, অর্থাৎ তার পিতা শ্বেতাঙ্গ, তবে মা আফ্রিকার-আমেরিকান সম্প্রদায়ের কালো নারী। সম্ভবত সে পেয়েছে আফ্রিকান মেয়েদের মতো খানিকটা শেইপলি ফিগার। তার নিরাবরণ ঊরুতে ফেসপেন্ট দিয়ে আঁকা মৎস্যকন্যার বর্ণাঢ্য নকশাটি চোখে পড়ে। কাছ দিয়ে হেঁটে গেলে আমি বিউলাকে ‘হ্যালো’ বলি। সে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে তাঁর প্ল্যাকার্ডটি দেখিয়ে জানতে চায়, ‘হাউ ডু ইউ লাইক দিস?’ কার্ডবোর্ডে আঁকা চিত্রে ট্রাম্প ওয়াইন-গ্লাস থেকে পান করছেন ডিসইনফেকশন লোশন। নিচে বড়সড় একটি ডিলডোর পাশে মার্কার দিয়ে লেখা ‘ফাক ইউ ট্রাম্প।’ ‘ম্যান, গিভ মি সাম ফিডব্যাক,’ বলে সে আমার দিকে উদগ্র্রিব হয়ে তাকায়। আমি জবাব দেই,‘নট ব্যাড, বাট আই হ্যাভ অ্যা কোয়েশ্চন বিউলা, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড…এ দুঃসময়ে তোমার দিনকাল কী রকম চলছে?’ মেয়েটির চোখের তারায় যেন উদ্বেগের ছায়া পড়ে, ঠোঁট কামড়ে সে জবাব দেয়, ‘ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড…আর্ট কলেজের ন্যুড স্টাডির ক্লাসে আমি মডেল হিসেবে কাজ করতাম, কলেজ তো অনলাইনে চলছে, খোলার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, সো আই অ্যাম নট গেটিং পেইড। আমার কাজ তো ফর্মাল কোনো জব না যে, আমি বেকার ভাতা ক্লেইম করতে পারবো।’ প্রতিক্রিয়ায় আমি বলি, ‘আমারও একই অবস্থা, আমিও বেকার ভাতা ক্লেইম করতে পারছি না, উই আর ইন দ্য সেম বোট, বিউলা।’ হাইফাইভ এর ভঙ্গিতে হাত তুলে সে হেঁটে যায় সামনে।
দেখি, ভারী ব্যাকপ্যাক পিটে কাজরি এদিকে এগিয়ে আসছে। সে থেমে থেমে দাঁড়িয়ে থাকা বয়স্ক মানুষজনকে অফার করছে জলের বোতল। আমাদের কাছে এসে বেশ দূরে পেভমেন্ট সে রাখে চারটি পানির শিশি। আমি তা নিতে চাই না, সে তাতে ডিসইনফেকশন স্প্রে করে বলে, ‘অল অভার দ্য আমেরিকা দে আর থ্রোয়িং টিয়ার গ্যাস অ্যান্ড পেপার স্প্রে… পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, হাতের কাছে জল রাখো।’ কথা বলতে বলতে সে স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বেজায় অবাক হয়ে বলে ওঠে, ‘ওহ্ মাই গড, পুলিশ হোয়াইট হাউসের সামনের লাফায়েত পার্কে জড়ো হওয়া প্রতিবাদীদের ঘিরে ধরছে, মেনটেইনেন্সের লোকজন হোয়াইট হাউস ঘিরে তুলছে লোহার ফেন্স… ইটস্ অ্যা শো-ডাউন বিটুইন পুলিশ অ্যান্ড প্রটেস্টারস্, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাটির তলায় বাংকারে শেল্টার নিয়েছেন।’
কাজরি পানির বোতল বিতরণ করতে এগিয়ে যায় সামনে। আমরা জনশন স্কোয়ারে কী হচ্ছে তা সরেজমিন করার জন্য এক-পা দু-পা করে ওদিকে আগাই। মাস্ক পরা প্রতিবাদীতে যেন স্কোয়ার উপচে পড়ছে। মেগাফোন হাতে ধূসর চুলের একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ আওয়াজ দেন, ‘বাংকার বয়…কাম আউট অ্যান্ড সি হাউ উই আর সাফারিং, ইয়োর নি ইজ অন আওয়ার নেক।’ তিনি আর বিশেষ কিছু বলার সুযোগ পান না। সারা জামায়েত জুড়ে শ্লোগান ওঠে, ‘বাংকার বয়...কাম আউট।’ কিছুক্ষণ উতরোল শ্লোগানের চিল্লা-চিৎকারে ক্লান্ত হয়ে আমরা চলে যাই, ভিড় থেকে খানিক দূরে খোলামেলা একটি গলিতে। এদিকেও প্রতিবাদীদের বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন প্ল্যাকার্ড হাতে। গাছপালার ছায়ায় শিশুকন্যাকে সাথে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী, পাশেই প্ল্যাকার্ড হাতে শ্বেতাঙ্গ নারী, তাতে লেখা ‘জাস্টিস্ ফর অল।’
দেখি, খানিক দূরে কিশোরী মেয়ে ডেনাকে সাথে নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছে সাবেক নার্স ভেনেছা। এ নারীর সাথে আমাদের আছে যৎসামান্য বন্ধুত্ব। শহরের একটি মেডিটেশন গ্রুপে আমরা লকডাউনের আগে রেগুলার হাজিরা দিতাম। ওখানে ইয়োগা সেশন চালাতো ভেনেছা। কিছুদিন আগেও সে কর্মরত ছিলো স্থানীয় হাসপাতালে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার জন্য চাকুরিচ্যুত হয়। এ এলাকায় করোনা সংক্রমণে যে সব মানুষ মারা গেছেন, তাঁদের এক বিপুল অংশ হচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকানস্। সংক্রমণ পিকে পৌঁছলে হাসপাতালে দেখা দেয় ভেন্টিলেটারের সংকট। তখন ডাক্তাররা নাকি পক্ষপাত দেখিয়েছেন—কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চিত করে ভেন্টিলেটার সরবরাহ করেছেন শ্বেতাঙ্গ রোগীদের। ভেনেছা মুখ আড়াল করে স্যোশাল মিডিয়ায় কথা বলেছিলো, কিন্তু গলার স্বর থেকে তাঁকে শনাক্ত করে তৎক্ষনাৎ চাকুরিচ্যুত করা হয়। আমরা হেঁটে গিয়ে তাঁকে হ্যালো বলি, জানতে চাই, ‘হাউ আর ইউ ডুয়িং ভেনেছা..?’ ম্লান হেসে সে জবাব দেয়, ‘অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু হাসপাতাল প্রশাসন দুশমনি করছে, বেকার ভাতা পাচ্ছি না।’ আমি তাঁকে অভিজ্ঞতাটি লেখার জন্য অনুরোধ করি। জবাবে সে ফের ম্লান হয়ে হাসে।
গাছপালায় ছায়াময় ফুটপাত ধরে আমরা হাঁটি। দেখি, আইফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন মিউজিশিয়ান ল্যারি আর্চ। ইনিও মেডিটেশন গ্রুপে হাজিরা দিতেন। পেশাদরিভাবে বাজান বাদ্যযন্ত্র চেলো, ছাত্রদেরও শেখান পারফরমেন্সের কৃৎকৌশল। জানুয়ারি মাসে তাঁর স্ট্রোক হয়েছিলো, রিকভার করেছেন, তাই গেল তিন মাসে কোথাও বেরোননি। আমাদের দেখতে পেয়ে মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বলেন, ‘নাউ দ্যা পোলিশস্ আর অ্যাটাকিং জার্নালিস্টস্, দুই দিন আগে সিএনএন এর সংবাদদাতাকে গ্রেফতার করেছিলো, আজ জার্মান মিডিয়া ডয়চে ভেলের প্রেসম্যানকে রাবার বুলেট দিয়ে ঘাঁয়েল করেছে।’ হতাশ হয়ে হলেণ মন্তব্য করে, ‘দিস ইজ হোয়াট ডেমোক্রেসি লুক লাইক আন্ডার ট্রাম্প অ্যাডমিনিশট্রেশন।’ ল্যারি যোগ করেন, ‘হৌল ইস্যু ইজ বিকামিং ইন্টারন্যাশনেল নাউ।’ জানতে পারি, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে ঘণ্টা কয়েক আগে প্রতিবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ধর্ণা দিয়েছে। বার্লিন ওয়ালের যে সামান্য অংশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে, ওখানে আঁকা হচ্ছে জর্জ ফ্লয়েডের মুখচ্ছবি।
বিকাল গড়িয়ে আসছে। কাজরিকে আমরা লকেট করতে পারি না, সে ফোন তুলছে না। আমাদের শরীরে ওষুধপত্র ঢোকানোর সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, তারও আগে প্রয়োজন সামান্য আহার। ফরসাইথ পার্কের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ভাবি—সন্ধ্যার দিকে না হয় আবার জামায়েতে আসবো। পার্কের ময়দান পাড়ি দিয়ে সিমেন্টের ফুটপাতে উঠতেই দেখতে পাই, অজস্র বেলুন দিয়ে তৈরী আর্ট অবজেক্টটি। কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী কথা রেখেছেন, সত্যিই তিনি জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণে সৃষ্টি করেছেন কিরণে ঝলমলে সূর্যমুখি ফুলের আদল। তার সামনে দাঁড়িয়ে তিনটি ছোট্ট ছেলে-মেয়ে ছবি তোলার পোজ দিচ্ছে। সেলফোনে স্ন্যাপশট নেয়া বাবার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মা। আমরাও তাদের পেছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়াই।